ঝিনাইদহে টার্কির খামারে স্বাবলম্বী দেলোয়ার

289

34589
আরাফাতুজ্জামান, ঝিনাইদহ থেকে: টার্কি বড় আকারের গৃহপালিত পাখি। পশ্চিমা বা বিদেশি হলেও দেশে খাদ্য তালিকায় ক্রমেই এর অবস্থান বাড়ছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শিক্ষিত বেকার যুবক দেলোয়ার হোসেন টার্কি পাখি চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চলেছে। ৬ হাজার টাকা দিয়ে মাত্র ২টা কিনে চাষ শুরু করে ১ বছরের মাথায় এখন তার খামারে জনপ্রিয় টার্কির সংখ্যা এখন ২ শতাধিক, যার দাম ৭ লক্ষাধিক টাকা।

ডিম, বাচ্চাও পাওয়া যাচ্ছে তার খামারে। সুস্বাদু এ পাখির মাংস, পাখি, ডিম, বাচ্চা কিনতে দেলোয়ারের খামারে এখন অনেক মানুষের ভিড়। এক একটির ওজন কমপক্ষে ৭ কেজি হয়। এক জোড়া টার্কি বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি এলাকায় গড়ে উঠেছে আরো কয়েকটি খামার।

যুব উন্নয়ন অফিস দিচ্ছে প্রশিক্ষণ আর প্রাণিসম্পদ বিভাগ করছে দেখভাল। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দেয়। বছরে ২৩০টার বেশি ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষগুলো প্রায় আট কেজি। মুরগির মাংসের মতো করেই টার্কি রান্না করা হয়। রোস্ট ও কাবাব করা যায়।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মাস্টার্স পাশ করে চাকরির আশায় না থেকে একটি কোচিং সেন্টার চালানোর পাশাপাশি যুবক দেলোয়ার শুরু করেছে এই পাখির চাষ। ২০১৭ সালের শুরুতে এবি ফার্ম নামে শহরের শিক্ষক পাড়ায় বাসার সাথে ফার্ম শুরু করে আব্দুল হকের ছেলে দেলোয়ার।

যুবক দেলোয়ার হোসেন জানায়, বছর শেষ না হতেই তার হাতে এখন ৭ লাখ টাকার পুঁজি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। তার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে অনেক শৌখিন খামারি ছোট আকারে টার্কি পালন শুরু করেছেন। ময়ূরের মতো লেজ ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় পাখিরা। আর ডাকাডাকিতে ঘর মাথায় তুলে। এর মাংস খেতে সুস্বাদু। পাশাপাশি তিনি তিতির পাখিও পুষতে শুরু করেছেন।

টার্কি পাখির বাচ্চা ফুটাতে নিজেই একটি ‘ইনকিউবেটর’ যন্ত্র তৈরি করেছেন। তার দেখাদেখি শৈলকুপার বাগুটিয়া, সাধুহাটি, মজুমদারপাড়া, গোবিন্দপুরে গড়ে উঠেছে টার্কি ফার্ম। টার্কির খাবার ও রোগবালায় নিয়ে মুরগির চেয়ে দুর্ভাবনা কম, ৬ মাসের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে। এরা ঠান্ডা-গরম সব সহ্য করতে পারে।

ধান, গম, ভুট্টাসহ দানাদার খাবারের চেয়ে সাধারণ প্রাকৃতিক খাবার কস্তুড়ি, কলমির শাক, বাঁধাকপি, ঘাস এসব বেশি পছন্দ করে। তবে সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় এখনো দাম একটু বেশি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে টার্কি খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়নি। কিন্তু অনেকের মধ্যে বাড়ছে আগ্রহ এমন কথা জানান স্থানীয়রা।

শৈলকুপায় যুব উন্নয়ন অফিস প্রশিক্ষণ দিচ্ছে টার্কি পাখি চাষে আগ্রহীদের। সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাসুদার রশিদ জানায়, তারা টার্কির মাংসে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য গুণাগুণ বিদ্যমান। টার্কির মাংস সুস্বাদু এবং স্বাদ ও পুষ্টিগুন অনেক বেশি। এর মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। এবং টার্কির মাংসে চর্বি অনেক কম। এর মাংস আন্যান্য পাখির মাংসের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর।

শৈলকুপা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, টার্কি পাখি চাষ করে সাবলম্বী হওয়া যায় সহজেই। তাই বিভিন্ন স্থানে যারা টার্কি পাখি চাষ করছেন, সেখানে রোগ বালায় সম্পর্কে সচেতন করে চলেছেন। তিনি শিক্ষিত যুবক দেলোয়ার হোসেনের ফার্মের প্রশংসা করেন। কৃতজ্ঞতা: সান

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন