ঝিনাইদহে স্বাধীন কৃষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার দুপুরে জেলার শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজারে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাধীন কৃষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি খুরশিদ আলম রুবায়েত’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উন্নয়ন ধারার নির্বাহী পরিচালক ডা: মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস, স্বাধীন কৃষক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোবারেক হোসেন মৃধা, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম, উন্নয়ন ধাারার পিএফএসএসএ প্রকল্প সমন্বয়কারী কৃষিবিদ রুবেল আলী, কৃষ্ণ দাস সাহা, হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হালিম মোল্লা প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন কৃষক সংগঠনের ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং অত্র এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
দেশের মোট কৃষকের মধ্যে ভূমিহীন, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের সংখ্যা ৮৭%, যার প্রায় ৫৩% কৃষকই ভূমিহীন। অথচ জমির পরিমাণ বিবেচনায় মাঝারি ও বড় কৃষকের সংখ্যা মাত্র ১৩% হলেও মোট জমির প্রায় ৫৯% তাদের দখলে এবং এদের অধিকাংশেরই আবার কৃষি উৎপাদনের সাথে সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের ক্রমাগত বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ষাটের দশকে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। যে কারণে রাসায়নিক সার-কীটনাশক, বীজ, জ্বালানী, সেচযন্ত্র ইত্যাদি কৃষি উপকরণের বাজার নির্ভরতা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ফসল চাষে সেচের পরিমাণ ও মূল্য, সার-কীটনাশকের ব্যবহার মাত্রা ও মূল্য দু’ই প্রতি বছর বাড়ছে এবং ফসলের ফলনহার ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। অথচ ফসল উৎপাদন খরচের তুলনায় ফসলের বাজার মূল্য কম পাওয়ায় কৃষক লোকসানের শিকার হচ্ছে। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক জমি হারিয়ে নিঃস্ব-ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে এবং লোকসানীর নামে কৃষিশিল্প কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় অর্থকরী ফসলের চাহিদা কমে যাচ্ছে ও অর্থকরী ফসল উৎপাদন অলাভজনক হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ কৃষক-বান্ধব কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নে সংকট এবং বহুজাতিক কোম্পানির কৃষি উপকরণ বাণিজ্যের শিকারে পরিণত হওয়ায় কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষক সমাজ সমূহ সংকটের মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশে কৃষক সংগঠনের নামে বহু-বিভক্ত যেসব সংগঠনের অস্তিত্ব আছে সেগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-উপদলের অঙ্গসংগঠন ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য সাধনের সংগঠনে পরিণত হয়েছে ও সে নির্দেশনার বাইরে সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে কৃষকের স্বাধীন ভূমিকার কোন সুযোগ নেই। এই ভয়াবহ সংকট ও বিপন্নতা থেকে মুক্তি, কৃষি সংস্কার ও কৃষি পরিবেশ উন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দল-উপদল ও মতবাদে বিভক্ত কৃষক এবং কৃষিসম্পর্কিত পেশাজীবী সকল নারী-পুরুষের একটি সার্বভৌম সংগঠন ও দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রায় এক যুগ ধরে এ “স্বাধীন কৃষক সংগঠন” বিভিন্ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ কার্যক্রমকে সাবলীলভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য এ কার্যালয় প্রতিষ্ঠা সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬জানু২০২০