অনেকেই শখ করে টবে নানাবিধ ফুলের বাহারী গাছ লাগিয়ে থাকেন। কিন্তু বুদ্ধি করে ঘর সাজানোর সাথে সাথে যদি এর থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় তবে বিষয় টি আরো আনন্দের হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আপনারা যারা বাসার বারান্দায় বা ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফুল বা ঘরের শোভা বর্ধনকারী গাছ লাগিয়ে থাকেন তারা এগুলোর পাশাপাশি টবে লাগাতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ। সময়ে অসময়ে এই সকল ঔষধি গাছ গুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। আজকে আমরা টবে ঔষধি গাছ লাগানোর উপকারিতা ও খুঁটিনাটি বিষয় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।
ল্যাভেন্ডার
মন মাতানো সৌরভ আর নজর কাড়া সৌন্দর্যের জন্য ল্যাভেন্ডার বরাবরই সকলের কাছে প্রিয় একটি ফুলের গাছ। এর রুপের মাধুরীর সাথে ভেষজ গুণের সংমিশ্রনের কারনেই ঘর সাজানোর গাছ হিসেবে এর কদর অনেক। এই গাছ নিজেকে ও অন্য সকল ইন্ডোর প্ল্যান্ট কে পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে। আপনার যদি অনিদ্রা রোগ বা ঘুমের কোন ধরণের সমস্যা থাকে তবে আজই আপনার শোবার ঘরে নিয়ে আসুন একটি ল্যাভেন্ডার ফুল গাছ। তাহলে আপনি গাঢ় ঘুমের স্বাদ নিতে পারবেন এমন কি কিছু শুকনো ফুল আপনার বালিশের নিচে রেখে দিতে পারেন, এটিও কাজে দিবে। মাথা ব্যাথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা হলে এই ফুলের ঘ্রাণ শুকলে খুব দ্রুত ব্যাথা সেরে যায়। গোসলের পানিতে এক মুঠো ল্যাভেন্ডার ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ পরে এই পানিতে গোসল করলে অনেক আরাম অনুভব করবেন তার সাথে ত্বকের কোন সমস্যা থাকলে তাও সেরে যাবে।
এলোভেরা
এলোভেরা গাছকে আমরা অনেকেই ঘৃতকুমারী নামে চিনি। ভেষজ গুন সম্পন্ন এলোভেরা গাছ ঘর সাজাতেও অতুলনীয়। জানালার পাশে বা বারান্দায় এই গাছের টব আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে যেমন তার সাথে প্রয়োজনে কাজ করবে ঔষধ হিসেবেও। পুরে যাওয়া স্থানে এলোভেরার আঠালো রস লাগালে যন্ত্রণা কমার পাশাপাশি ক্ষত দ্রুত শুকোতেও সহায়তা করে। আপনার হজমের সমস্যা নিরসন, পাকস্থলীর ইনফেকশান প্রতিরোধ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা এমনকি ত্বকের নানাবিধ সমস্যায় এই এলোভেরা ব্যবহার করে উপকার পাবেন। অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক ঋতু সমস্যা দূর করতে এলোভেরা বেশ উপকারী। রক্তের শ্বেত কণিকা গঠনে সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে। রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ওজন কমাতে এলোভেরা পাতা দিয়ে তৈরি সরবত বেশ কার্যকরী।
তুলশি
তুলশি আমাদের দেশে বহুল পরিচিত একটি গাছ। হাজারো গুণ সম্পন্ন এই গাছের ফুল, পাতা, কান্ড ও মূল আদিকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আপনারা অনেকেই হয়ত এই গাছের অনেক গুণের কথা ইতিমধ্যেই অবগত আছেন। স্বর্দি কাশি বা হাপানির সমস্যা নিরসনে এর পাতা অনেক উপাদেয়। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখতে এটি অনেক কার্যকরী। তুলসী ব্যথানাশক ও স্মৃতিবর্ধক। ত্বকের সমস্যায় ব্রণ ও বলীরেখা দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে লাগাতে পারেন। তুলসী গাছ দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টাই অক্সিজেন সরবরাহ করে যা ঘরের বায়ু বিশুদ্ধ রাখে সর্বক্ষণ।
পুদিনা
পুদিনা পাতা মুখ রোচক খাবারে যেমন ব্যবহার করা হয় তেমনি ঔষধি গুণের জন্য রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সম্পন্ন হওয়ায় পুদিনা পাতার রস পেটের সকল ধরণের সমস্যার উপশম করে খুব দ্রুত। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ও ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে কাচা পাতা বেটে মুখে লাগালে উপকার পাবেন। কারো মাথার চুলে উকুন হলে পুদিনা গাছের শেকড়ের রস তৈরি করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ঘন্টা খানেক পরে ধুয়ে ফেলুন, এভাবে তিন দিন অন্তর অন্তর দুই সপ্তাহ ব্যবহার করলেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। অ্যালার্জি সহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণ এবং ঘামের দূর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে পুদিনা পাতা ভেজানো পানিতে গোসল করতে পারেন।
গাঁদা
গাঁদা ফুল আমাদের অনেকরই প্রিয় ফুল গুলোর একটি। গাঁদা ফুলের ঘ্রাণ অত্যন্ত আকর্যণীয় এমন কি এই ফুল খাওয়ার উপযোগী। আমরা ছোটবেলা থেকেই এই গাঁদা ফুলের সাথে পরিচিত। কিন্তু এর যে ভেষজ গুণও আছে তা শুনলে অনেকেই চমকে উঠে। এর পাতার রস ত্বকের কাটাঁ স্থানের রক্ত পরা ও ক্ষত সারাতে অত্যন্ত কার্যকরী তা প্রায় সকলেই জানে। এমন কি গাঁদা ফুলের পাতার রস কান পাকা রোগ সারাতে ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ত্বক মসৃন ও ব্রণ মুক্ত রাখতে, হজমে ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে, হাড়ের ক্ষয় রোধ ও আর্থাইটিসের মত জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পান করতে পারেন গাঁদা ফুলের চা।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭মে২০