টবে ছাদে বা বারান্দায় আলু চাষের পদ্ধতি

453

অনেকেই ভাবেন আলু বুঝি শুধু বিস্তৃন মাঠেই চাষ করতে হয়। কিন্তু বর্তমান আধুনিক কৃষির যুগে আলু চাষ জায়গা করে নিয়েছে বিল্ডিংয়ের ছাদে, টবে কিংবা বাসার বারান্দায়। সে ক্ষেত্রে ফলন হয়ত অনেক বেশী পাওয়া যাবেনা কিন্তু যতটুকু পাওয়া যাবে সেটাই বা কম কিসে। খাদ্য পুষ্টির অভাব মেটাতে আলুকে ভাতের বিকল্প ধরা হয়। পুষ্টির দিক থেকে আলুকে ভাত ও গমের সাথে তুলনা করা হয়। তাহলে অল্প কিছু হলেও যদি শহুরে জীবনে ছাদ কিংবা বারান্দায় চাষ করে নিজেদের রসনা মিটানো যায় সেটা অবশ্যই অনেক পরিতৃপ্তি দিবে আপনাকে।

জায়গা নিবার্চন: আলু চাষের জন্য প্রথমেই আপনাকে যা করতে হবে তাহলো স্থান নির্বাচন। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে সব সময় আলো বাতাস চলাচল করতে পারে। অন্তত সকাল বেলাটা রোদ পড়ে এমন জায়গা আলু চাষের জন্য উপযোগী। খেয়াল রাখবেন সকাল-বিকাল বাদে শুধু দুপুরে রোদ পড়ে এমন জায়গায় আলু চাষ করবেন না। আলু চাষ করার জন্য আপনি তিনটি জায়গা নির্বাচন করতে পারেন। যেমন- বাসার ছাঁদ, বারান্দা, বাড়ীর উঠান।

আলু চাষের জায়গা নির্বাচন হবার পর আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনি কিসে চাষ করবেন টবে নাকি মাঝারি কোন ড্রামে। টব ও ড্রাম ছাড়াও প্ল্যাস্টিকের কন্টেইনার কিংবা প্ল্যাস্টিকের বালতিও ব্যবহার করতে পারেন।
-কন্টেইনারের উচ্চতা ২-৩ ফুট এবং ধারণক্ষমতা ৪০-৫০ লিটার হতে হবে।
-অতিরিক্ত পানি বের হবার জন্য প্রতি কন্টেইনারের নিচে ৩/৪ ইঞ্চি ফুটো করে নিন।
-মাঝারি সাইজের টব বেছে নিন। এতে ১০টি চারা রোপণ করা যায়।

মাটি প্রস্তুত প্রণালী: আলু চাষের জন্য মাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি আলুর জন্য সব চাইতে উপযোগী৷ আলু চাষের জন্য মাটিতে প্রচুর জৈব সার থাকতে হয়। তাই টবে মাটি ভরাট করার আগে অবশ্যই আপনাকে বেলে দো আশ মাটি সংগ্রহ করতে হবে। মাটি সংগ্রহ করা হলে সেই মাটিতে এক ভাগ জৈব সার মিশ্রিত করে ভালোভাবে ঝুরা করে মাটিতে মিশিয়ে নিতে হবে। জৈবসার মাটিতে মিশিয়ে নেয়া হলে সেখানে হালকা একটু পানি দিয়ে মাটিকে ভিজিয়ে নিতে হবে। মাটিতে কমপোস্ট ব্যবহার করা অনুচিত। এতে রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর বদলে গোবর পচিয়ে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া ভাল।

আলুর বীজ: আলুর বীজ দুইভাবে সংগ্রহ করা যেতে পারে। বীজ থেকে এবং আলুর কাটিং থেকে। আলুর বীজ সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে আপন কোন জাতের বীজ লাগাবেন। হাইব্রীড জাতের নাকি দেশি জাতের । আপনার পছন্দ অনুযায়ী আলুর বীজ সংগ্রহ সেগুলোকে কাটতে হবে । বর্তমানে বাজারে কোম্পানি বিভিন্ন কাটিং বীজ পাওয়া যায়। যদি নিজেই কাটিং করতে চান তাহলে বীজ কিনে এনে প্রতিটি অঙ্কুর ১-২ ইঞ্চি পুরত্ব রেখে কেটে ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ রেখে দিন।

আলুর বীজ রোপণ: টব বা কনটেইনারের দুই তৃতীয়াংশ পরিমাণ মাটি-সারের মিশ্রণ নিন। উপরের অংশ সমতল করুন। এবার আলুর বীজ ৫ বা ৭ ইঞ্চি পরপর মাটিতে পুতে দিন। আলুর বীজ লাগানো হলে বীজের উপর ৪-৫ ইঞ্চি করে মাটি মিশ্রণ দিয়ে ঢেকে দিন।

পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ: টবে আলুর বীজ লাগানোর পর খেয়াল রাখত হবে যেন সেচের পরিমাণ বেশি না হয়। তবে নিয়মিত পরিমিত পানি আলু চাষের জন্য খুব জরুরি। সকাল ও বিকাল পানি দিলেই চলে। কিন্তু টবে পানির পরিমাণ বেশি হলে আলুর শেকড় পচে যাবে তাই টবের গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে করে টবে পানি আটকে না থাকে । টবের মাটিতে জৈব সার আগে থেকে দেয়ার কারণে আর অতিরিক্ত সার দেয়ার প্রয়োজন পড়েনা তবু প্রয়োজন হলে উপরি সার দেয় যেতে পারে। আলু গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মাতে পারে সেক্ষেত্রে সেগুলো তুলে দিতে হবে। বাসার ছোট বাচ্চারা যাতে টব নষ্ট না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। টবে বা কন্টেইনারে আলু চাষে জিপসাম, টিএসপি, এমওপি, ইউরিয়ার অনুপাত ১:২:৩:৩ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এছাড়া সামণ্য পরিমাণের সালফেট ও বোরন সার মিশ্রিত করে দিতে হবে। যেহেতু আপনি আপনার বাসার ছাদে বা বারান্দায় করবেন, তাই জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করাই উত্তম।

সেচ ও নিষ্কাশন:
-রোপণের পর গাছের মাথা স্পষ্ট হলে সার প্রয়োগ করে হালকা সেচ দিতে হবে। মূলত রোপণের ৭ দিনের মধ্যে দিতে হবে।
-মাটির রসের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে প্রয়োজনানুযায়ী ৩-৫ বার সেচ দিতে হবে।
-৪০ দিন পর টিউবার গঠন হওয়া শুরু হলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
-টবে/কন্টেইনারে চাষের জন্যে এটিই সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি। কারণ এই মাটিতে পুনরায় আলু চাষ করা যাবে।

আলু তোলা: আলু পরিপক্ক হতে আলুর জাত ভেদে মূলত ৭০ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। আলুর গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করলেই বুঝতে হবে আলু পরিপক্ক হয়েছে। আলু পরিপক্ক হলে গাছ ধরে টান দিলে আলু বের হয়ে আসবে সেক্ষেত্রে টব ভাঙ্গতে হবেনা । কন্টেইনারের ক্ষেত্রে একটি দরজা রাখেন, এতে করে পরিপক্ক আলুগুলো ফসল তোলার আগেই সংগ্রহ করা যায়। আলু তোলার সেগুলো শুকনো আদ্রযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে। কাটা কিংবা পচা কোন আলু থাকলে সেগুলো ভালো আলু থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।

অন্যান্য তথ্য: আলু ফসলের গাছের মাঝের ফাঁকা জায়গায় সাথী ফসল হিসেবে লাল শাক, পালং শাক, ধনে ও মুলা শাকের চাষ করা যায়। এতে প্রধান ফসল আলুর কোনো ক্ষতি হয় না। বীজ বপনের এক মাস পর লাল শাক, পালং শাক, মুলা ও ধনে শাক তুলতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৯ নভেম্বর ২০২১