টবে মাল্টা চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

3442

মাল্টা প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে ছায়া পড়ে না এমন সুনিষ্কাশিত উর্বর, মধ্যম থেকে হালকা দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির অম্লত্ব ৫.৫ থেকে ৬.৫ হওয়া উত্তম। মাল্টাগাছ লবণ এবং উচ্চ তাপমাত্রা সংবেদনশীল। জলাবদ্ধতার সহ্যক্ষমতা নেই। সারা বছরই রোপণ করা যেতে পারে। তবে বর্ষা মৌসুমে উত্তম। চারা লাগানোর আগে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। এক্ষেত্রে গর্তের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা (গভীরতা) হবে ৭৫ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি) করে। গর্তপ্রতি ১৫ কেজি পচা গোবর কিংবা অন্য জৈব সার, সেই সাথে ৫ কেজি কাঠের ছাই এবং রাসায়নিক সার হিসেবে টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, বরিক এসিড ৫ গ্রাম ও চুন দিতে হবে ৫০০ গ্রাম হারে। সম্পূর্ণ সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরে দিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ দিন পর গর্তের মাঝখানে সোজা করে চারা রোপণ করতে হবে। গাছ লাগানোর পর চারাটি শক্ত খুঁটি সাথে সামান্য ঢিলে করে বেঁধে দিতে হবে, যেন ঝড়ে হেলে না পড়ে। নিচে টবে মাল্টা চাষ পদ্ধতি দেয়া হল:

যা যা লাগবে:
১) টব বা ড্রাম ১৮” * ১৮”
২) গোবর বা কম্পোস্ট ১০ কেজি
৩) ইউরিয়া সার ১৫০ গ্ৰাম
৪) টিএসপি ১০০ গ্ৰাম
৫) এমওপি সার ১০০ গ্ৰাম
৬) জিংক সালফেট ১০ গ্ৰাম
৭) বোরিক এসিড ৫ গ্ৰাম

সারগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে নেয়ার পর ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। এর পরে মাল্টা গাছ রোপন করতে হবে। এছাড়া সারা বছর গাছের বৃদ্ধি সঠিক মাত্রায় রাখতে টবের মাল্টা গাছ কে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে এক চা চামচ পরিমাণ NPK (নাইট্রোজেন, ফসপরাস ও পটাসিয়াম) বা মিশ্র সার এবং ৫০০ গ্রাম গোবর দুই লিটার পানিতে গুলিয়ে গাছের গোড়া থেকে ৬” দূরে ঠেলে দিন । এটি গাছের বৃদ্ধি কে প্রতিনিয়ত ত্বরান্বিত করবে।

ডাল ছাটাই করণ
সঠিক পরিমাণে এবং ভালো ফলন পেতে চাইলে অবশ্যই গাছ ছাটাই করতে হবে।ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে গাছটিকে ছেঁটে নির্দিষ্ট আকারে আনতে হবে। এর কারণ হলো পার্শ্ববর্তী ডাল গুলোতে সূর্যের আলো বেশি প্রয়োজন হয় এবং সেখানে ফল বেশি ধরে। গাছ বড় হলে বড় গাছে নিচের ১ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সব ডাল ছেঁটে দিতে হবে। এছাড়া ছাঁটাইয়ের পর ডালের কাটা অংশে বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া অনেক সময় গাছে একসাথে প্রচুর ফল আসে । এ কারণে অতিরিক্ত ফল থাকায় ফল বড় হয় না এবং ফলের আকৃতি ভাল হয়না । টবে মাল্টা চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা এর জন্য প্রতিটি ফলের গুচ্ছে দুটি করে সুস্থ সবল ফল রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিতে হবে। টবে মাল্টা চাষ পদ্ধতি তে ছাঁটাই করা আবশ্যক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।

রোগবালাই ও চিকিৎসা
মাল্টা গাছের লিভমাইনার পোকা
লিভ মাইনার মাল্টা গাছে একটি মারাত্মক ক্ষতি কারি পোকা । এ পোকা আক্রমণ করে গাছের ছোট এবং কচি সবুজ পাতা খেয়ে ফেলে। এছাড়া এটি ফলের উপর আঁকা বাঁকা সূরঙগের মত দাগ সৃষ্টি করে। প্রথম অবস্থায় আক্রমণ কৃত পাতা গুলো ছিড়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। হলুদ ফাঁদ তৈরি করে এই পোকা দমন করা সম্ভব। কিন্তু আক্রমণের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হলে লিফ মাইনার পোকা দমন করতে কিনালাক্স ২ এমএল প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই ওষুধ টি প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর গাছে স্প্রে করলে এধরনের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মাল্টা গাছের গেমোসিস রোগ
গেমোসিস রোগ হলে গাছের কান্ড ও পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করে। গাছের কান্ড মাঝ বরাবর ফেটে যায়। ও সেখান দিয়ে কস বের হতে থাকে। এ রোগটির অতিরিক্ত প্রাদুর্ভাব এর ফলে গাছটি উপর থেকে কান্ড শুকিয়ে মারা যেতে থাকে। মাল্টা গাছে গেমোসিস রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ডালের অংশটি কেটে ফেলে দিতে হবে এবং কাটা অংশে বোর্দো পেস্ট এর মিশ্রণ লাগিয়ে দিতে হবে। বোর্দো পেস্ট তৈরি করার জন্য ১৪০ গ্রাম চুন ও ৭০ গ্ৰাম তুতে আলাদা আলাদা পাত্রে নিয়ে পরবর্তীতে লিটার পানির সাথে মিশিয়ে নিন।

পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা : এ পোকা ছোট অবস্থায় (কীড়া) মাল্টা পাতায় আক্রমণ করে। এরা রাতের বেলা গাছের কচি পাতায় গর্ত খুঁড়ে আঁকা বাঁকা দাগের সৃষ্টি করে। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হয়। তামাক নির্যাস ও সাবান গোলা পানি স্প্রে করা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে ইটাপ ৫০ এসপি ১.২০ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৫ আগস্ট ২০২১