টব বা কনটেইনারে আলুচাষ করা বেশ সহজ

595

শখের বশে অনেকেই বাসার বারান্দা বা ছাদে নানা সবজি, ফুল বা ফল চাষ করেন। কেউ কেউ ছোট পরিসরের বারান্দাকেও এ ক্ষেত্রে কাজে লাগান। মাঝারি বা ছোট টবে পুদিনা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, করলা, ঢেঁড়স, ক্যাপসিকাম, বেগুন জাতীয় ছোট সবজি লাগান। কেউ আবার শখের বশেই চাষ করেন গোল আলুর মতো কান্ড জাতীয় সবজি।

তবে উপযুক্ত মাটি এবং জায়গার স্বল্পতার কথা ভেবে অনেকেই গোলআলু লাগানোর কথা চিন্তা করেন না। কারণ ছোট পরিসরে টবের মাটিতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না এমন ধারণা থেকেই টবে আলু চাষের ঝুঁকি নেন না শখের চাষীরা। তবে তাদের এমন ধারণাকে পাল্টে দিতে অপেক্ষাকৃত একটু বড় টব বা কনটেইনারেই (রঙের খালি কনটেইনার বা প্লাস্টিকের বালতিও ব্যবহার করা যাবে) হতে পারে গোলআলুর চাষ।

সুবিধা: একটু বড় আকারের টব বা কনটেইনারে আলুচাষ করা বেশ সহজ। তবে এ জন্য দরকার উপযুক্ত পরিবেশ ও মাটি। পানি জমে না থাকা, স্যাঁতস্যাঁতে মাটি বা পরিবেশ না হলে টবে আলুর ভালো ফলন আশা করা যায়। এতে সারের অপচয় হয় না। সহজেই গাছকে আগাছা, ছত্রাক এবং পোকামাকড় থেকে দূরে রাখা যায়। ছাদে, বারান্দায় বা যে কোনো জায়গায় স্থাপন করা যায় টব। আর এসব টব থেকে আলু আহরণ করা যায় খুব সহজেই। এ পদ্ধতিতে গর্ত করে বা কোদাল দিয়ে খনন করে ফসল তোলার ঝামেলাও নেই। ফসল তোলার সময় হলে শুধুমাত্র কনটেইনার বা টবটি কাত বা উপুড় করে ফেললেই কাজ সারা।

টব নির্বাচন ও প্রস্তুতি: ৪০-৫০ লিটার বা ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার যে কোনো পানির কনটেইনার, পানির বালতি বা যে কোনো ফুড গ্রেডেড কনটেইনার আলু চাষের জন্য ব্যবহার করা যাবে। অতিরিক্ত পানি নির্গমনের জন্য প্রতিটি কনটেইনার বা টবের নিচে ৩/৪ ইঞ্চি সাইজের ৫-৬টি ছিদ্র করে নিতে হবে। তারপর কনটেইনারটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে বিষাক্ত কোনো পদার্থ লেগে না থাকে। প্লাস্টিক বা এ জাতীয় টবের চার পাশে তিন থেকে চারটি স্থান লম্বালম্বি করে কেটে ফাঁকা করে নিতে হবে। যাতে বাতাস বা টবের মাটি বাইরে থেকে অল্প দেখা যায়। পরে এতে আলু লাগানো হয়ে গেলে টবটিকে এর আকৃতির চেয়ে কিছুটা বড় অন্য একটি টবে রাখতে হবে। যাতে আলু লাগানো টবের মাটি বা গাছ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

উপযোগী মাটি: সাধারণত দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি গোলআলু চাষের জন্য উপযোগী। এ জন্য প্রথমে দোআঁশ জাতীয় মাটি সংগ্রহ করতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে মাটি যেনো ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। এরপর মাটির সাথে কেঁচো কম্পোজট বা জৈবসার মিশ্রণ করতে হবে। মাটি আর সারের মিশ্রণের পরিমাণ আধাআধি হলেই ভালো হয়। মাটির পরিবর্তে কাঠের গুড়াও ব্যবহার করা যাবে।

চারা উৎপাদন: আলুর বীজ দুইভাবে সংগ্রহ করা যেতে পারে। বীজ থেকে এবং আলুর কাটিং থেকে। বীজের চারা সরাসরি নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। আর কাটিং চারা পেতে পারেন এক বছর আগের আলু থেকে। পুরনো আলু থেকে ছোট ছোট অঙ্কুর বের হয়। সে অঙ্কুরগুলোকে আলুসহ ১-২ ইঞ্চি কিউব করে কেটে অঙ্কুরটি ঊর্ধ্বমুখী করে একটি ডিমের কেসে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। তবে এভাবে আলুর অঙ্কুর মাটি ফুরে চারা গজাতে কিছুটা সময় বেশি লাগে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তাপমাত্রা বা মাটির আর্দ্রতা ঠিক না হওয়ায় অনেক অঙ্কুর থেকেই চারা না গজানোর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া আলাদা পাত্রে চারা তৈরি করে পরে সরাসরি টবে লাগালে ফলও ভালো পাওয়া যায়।

চারা লাগানো: এবার কন্টেইনারের নিচের দিকে আনুমানিক ৬ ইঞ্চি পরিমাণ স্থান ঝুরঝুরে কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরতে হবে। চাইলে কয়লা, নারিকেলের ছোবড়া বা কচুরিপানাও এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এতে মাটিতে আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং মাটি থাকবে ঝুরঝুরে। এবার অঙ্কুরগুলো নিরাপদ দূরত্বে রেখে রোপণ করুন। অঙ্কুরের নিচের অংশটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। আর বীজ থেকে গাছ উৎপাদন করলে বীজগুলোকে মাটির উপর ছিটিয়ে দিন। এ ক্ষেত্রে মাটি একটু ভেজা রাখা ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে আলুগুলো যেন পচে না যায়। কারণ মাটি বেশি ভেজা হলে অঙ্কুর ছত্রাকের আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পরিচর্যা: গাছগুলো ৬-৮ ইঞ্চি পর্যন্ত দীর্ঘ হলে গাছগুলোর ৩ ভাগের ২ অংশ আরো এক লেয়ার কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এভাবে কন্টেইনারের উপর পর্যন্ত গাছগুলোকে ধাপে ধাপে কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে (গাছ যতো বড় হবে, মাটির লেয়ারও তত উঁচুতে উঠবে)। আর টবে পর্যাপ্ত পরিমান পানি সেচ দিতে হবে। পোকামাকড় বা ছত্রাক আক্রমণে করে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।

আলু সংগ্রহ: প্রায় ১০ সপ্তাহ পর আলু গাছ এক ফুট উচ্চতা বা কান্ড শক্তসামর্থ হলে অথবা গাছের ফুলগুলো হলুদ হওয়া শুরু করলে আলু তোলার জন্য পুরোপুরি উপযোগী হবে। প্রথমে টবের উপরের আলুগুলো সাবধানে বের করে আনতে হবে, এরপর বাইরের বড় টবটি থেকে আলু লাগানো টবটিকে বাইরে বের করে নিয়ে আসতে হবে। পরে টবটি কাত করে বা উপুর করে টবের ফাঁকা জায়গা থেকে আলু সংগ্রহ করে আবার আগের স্থানে রেখে দেওয়া যাবে। এতে একই পদ্ধতিতে বারবার আলু সংগ্রহ করার সুবিধা পাবেন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২০এপ্রিল২০