টমেটোর বীজতলা তৈরি ও ব্যবস্থাপনা

412

টমেটো
টমেটো চাষ করা হয় চারা তৈরি করে। এ জন্য বীজতলায় বীজ বুনে সেখানে চারা তৈরি করে নিতে হয়। টমেটো চাষে সফলতার জন্য বীজ প্রথমে শোধন করে নিতে হবে। বীজের মধ্যে অনেক সময় রোগজীবাণু লুকিয়ে থাকে। যেমন আগাম ধ্বসা বা আরলি বস্নাইট রোগ, মোজাইক ভাইরাস, ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু বীজে থাকতে পারে।

মাটিতে বীজ ফেলার পর পানি পেয়ে সে সব জীবাণু সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে চারা মারা যায়। আবার অনেক সময় বীজতলার মাটিতেও কিছু রোগজীবাণু থাকতে পারে। যেমন চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগের জীবাণু। এসব রোগজীবাণুও চারাকে আক্রমণ করতে পারে। সে জন্য বীজতলার মাটিও শোধন করে নিলে ভালো হয়।

বীজ শোধন :

বীজ শোধন করা যেতে পারে কয়েক পদ্ধতিতে। ছত্রাকনাশক প্রোভেক্স দ্বারা বীজ শোধন করা সহজ পদ্ধতি। এ ছাড়া গরম পানিতে বীজ ভিজিয়ে শোধন করাও সহজ। ৫০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার গরম পানিতে ৩০ মিনিট টমেটোর বীজ ভিজিয়ে রাখলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের জীবাণু মারা যায়।

এরপর গরম পানি থেকে বীজ তুলে ছায়ায় শুকিয়ে বপন করতে হবে। আর বীজতলার মাটি চাষ দিয়ে তাতে জৈবসার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে দু’সপ্তাহ ভালো করে ঢেকে রেখে দিলে সূর্যেও তাপে মাটিতে থাকা অনেক জীবাণু মারা যায় ও বীজতলার মাটি শোধন হয়ে যায়। ফরমালিন দিয়েও বীজতলার মাটি শোধন করা যায়।

বীজতলা তৈরি ও সার ব্যবস্থাপনা :

বীজতলার জন্য বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। রোদযুক্ত উঁচু জায়গা পরিষ্কার করে ভালোভাবে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। টমেটোর জন্য গোবর সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট পরিমাণ পচা গোবর ও অন্যান্য রাসায়নিক সার দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশে দিতে হবে।

চাষের পর এক মিটার চওড়া এবং ৬-১০ ইঞ্চি উঁচু করে সিড বেড বানাতে হবে। সিড বেডের দৈর্ঘ্য প্রয়োজন মতো হতে পারে। সিড বেডে যাতে কোনো অবস্থায় পানি আটকে না থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১.৫ কেজি পচা গোবর, ৪০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে। চারার সঠিক বৃদ্ধির জন্য চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর ইউরিয়া সার পানির সঙ্গে মিশিয়ে (১.৫%) স্প্রে করতে হবে।

অন্যান্য ব্যবস্থাপনা :

অনেক ক্ষেত্রে টমেটোর বীজ বপন করার পর পিঁপড়া বীজ নিয়ে যায় ফলে অঙ্কুুরোদগম কম হয়। তাই সর্তকতা স্বরূপ বীজতলার চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিলে ঝুঁকি থাকে না। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে সাদা পলিথিনের ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।

মোটা ও সবল চারা পেতে হলে ৮-১০ দিন বয়সের চারা তুলে অন্য বীজতলায় দুই ইঞ্চি দূরে দূরে পুনরায় লাগাতে হবে যাকে বলান বলা হয়। বলান করা চারা মোটা ও সবল হয়। বলান করা চারা জমিতে রোপণ করলে বাঁচার হার ১০০%।

বীজতলার মাটি সঁ্যাতসেঁতে থাকলে অনেক সময় চারায় পাতাপচা বা গোড়াপচা রোগ হতে পারে। গোড়াপচা ও পাতাপচা রোগ দমনের জন্য ডাইথেন-এম ৪৫ অনুমোদিত মাত্রা অনুসারে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা বিকেলে লাগানো উত্তম।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ