টমেটো গাছে অজানা রোগ, দিশেহারা কৃষক

380

ময়মনসিংহে শতশত একর জমির টমেটো গাছে পচন ধরায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। সার ও কীটনাশক দিয়েও সমাধান মিলছে না। ক্ষতি এড়াতে একই জমিতে মরিচ, কপি চারা রোপণ করছেন কেউ কেউ।

জেলার সদর উপজেলার বোররচর ও পরাণগঞ্জ ইউনিয়নে দেখা যায়, কৃষকের আগাম সবজি ক্ষেতের টমেটোর চারা অজানা রোগে মারা যাচ্ছে। সাবার হচ্ছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। অনেকেই ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করে পাগলপ্রায়। কোনো কোনো কৃষক ক্ষতি এড়াতে মরা ও পচন ধরা টমেটো গাছের চারা ফেলে দিয়ে মরিচ ও কপির চারা রোপণ করছেন।

সদর উপজেলার বোররচর ইউনিয়নের জাফর মন্ডল পাড়ার কৃষক হাসান আলী। প্রতিবছরই টমেটো চাষ করে সংসারের খরচ চালান। গতবছরও টমেটো থেকে ১ লাখ টাকা আয় করেন। এবারও প্রায় দেড় একর জমিতে টমেটো চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের দেড় মাসে তার খরচ হয় ২ লাখ টাকা।

লাভের স্বপ্ন দেখলেও গত ১৫ দিন ধরে পচন ধরেছে ক্ষেতে। একে একে মরছে ফুল ও ফল হওয়া টমেটো গাছগুলো। কোনভাবেই পচন ঠেকাতে না পারায় হতাশায় চোখেমুখে অন্ধকার নেমে এসেছে হাসান আলীর। পাঁচ সদস্যের সংসার চালানোর খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

একই অবস্থা কৃষক আব্দুল হকের। তিনি ২ লাখ টাকায় ৭৭ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে আগাম টমেটো চারা রোপণ করেছিলেন। ৫৫ শতাংশ জমির টমেটো গাছ মরে গেছে। বাকি জমির গাছগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মরে শেষ হয়ে যাবে বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

ছোট ছোট ফুল ও ফল হওয়া গাছগুলো বাঁচানোর জন্য অনেকের পরামর্শ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অন্য ফসল করার জন্য সমিতি থেকে ঋণ তোলার চেষ্টা করছেন। ঋণ না পেলে জমি পতিত থাকবে বলেও জানান আব্দুল হক।

বোররচর গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি ৫৫ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল ৯০ হাজার টাকা। টমেটো গাছ মরে যাওয়ায় এখন জমিতে মরিচের চাষ করছেন। এখনো ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হবে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এ বছরের ক্ষতি পোষাতে কয় বছর লাগে আল্লাই ভালো জানে।’ এলাকার কৃষকের শতশত একর জমির টমেটো নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগের কাউকে পরামর্শের জন্য পাননি।

একই গ্রামের বর্গাচাষী সোহেল মিয়া জানান, গতবছর তিনি টমেটো চাষ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় আয় করেন। তাই এ বছরও জমি বর্গা নিয়ে টমেটো এবং কপির চারা রোপণ করেন। কপির চারা টিকে থাকলেও ৪৪ শতাংশ জমির টমেটো গাছ মরে গেছে। কী কারণে মারা গেল, তা-ও বলতে পারেন না। এবার তার ২ লাখ টাকার মতো লস হবে। কৃষি বিভাগের কারো সঠিক পরামর্শও পান না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পরাণগঞ্জ গ্রামের কৃষক মো. সোহেল জানান, তাদের ১ কাঠা সমান ১১ শতাংশ জমি। ১ কাঠা জমিতে টমেটো চাষে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। ভালো ফল পেতে প্রথম থেকেই ভালো মানের বীজ, চারা, সঠিক পরিচর্যা করতে হয়। সারাক্ষণই টমেটো ক্ষেতে সময় দিতে হয়। এ বছর খরচের পাশাপাশি বেশি সময় দিয়েও ক্ষেত রক্ষা করা গেল না।

সবজিভান্ডার খ্যাত বোররচরের কৃষকদের সহযোগিতায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কৃষক মাহবুবুল হক কাজল ও আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের সবজির সুনাম রয়েছে সারা দেশে। দেশের বেশিরভাগ সবজি পরাণগঞ্জ ও বোররচরে চাষ হয়। এ বছর টমেটোর গাছ মরে যাওয়ায় দেশে সবজির সঙ্কট দেখা দেবে।’

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘জেলায় এ বছর ১৮ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। বেশি বয়সের চারা রোপণ, টানা বৃষ্টি, একই জমিতে বারবার টমেটো চাষ ও অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের কারণে টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তার ধারণা, সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ও বোররচর ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে ৫ হেক্টর জমির টমেটো নষ্ট হয়েছে। ওই ক্ষেতে বিকল্প সবজি চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতার কথাও জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১নভেম্বর২০২০