টাইগার মুরগি পালন (tiger murgi palon) পদ্ধতি সম্পর্কে খামারিদের কিছু তথ্য দিতে চাই। কেননা ইদানিং বাংলাদেশের খামাররি গণ টাইগার মুরগি পালন অধিক লাভজনক মনে করছেন। হ্যা, লাভজনক তো বটেই কিন্তু সবাই কি লাভ করতে পাছেন? পারেছেন না।
তাহলে সমস্যা টা কোথায়? সমস্যা এই মুরগির বাচ্চার দাম ও খামার ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ বাচ্চার দাম এতো বেশি যে কম খরচে সর্বোচ্চ উৎপাদন অর্জন করতে না পারলে লাভ আবে না।
টাইগার মুরগি কি?
টাইগার মুলগি হলো এমন এক প্রকারের মুরগি যা দেশি সোনালী (Desi Murgi) মুরগির সাথে দ্রুত বর্ধনশীল জাতের মুরগির ক্রস করে তৈরী করা হয়েছে। এটি কোন বিশেষ জত নয়। পৃথিবীতে যতটি মুরগির জাত রয়েছে তার মধ্যে টাইগার মুরগি নামে কোন জাত নেই। এটি সম্পূর্ণ দেশী মুরগির একটি হাইব্রিড সংস্করণ। এই মুরগির বৃদ্ধির হার তুলনামুলক বেশি। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো।
টাইগার মুরগি পালনে সুবিধা
খাদ্য খরচ তুলনামুলক কম কিন্তু গ্রোথ বেশি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সোনালী মুরগির মতই।
দেখতে আকর্ষণীয় তাই দাম পাওয়া যায় ভালো।
ডিম থেকে বাচ্চা উৎপন্ন করে বিক্রি করলে অধীক লাভবান হওয়া যায়।
টাইগার মুরগি পালনে সমস্যা
Tiger murgi palon করতে কিছু সমস্যা বা অসুবিধা রয়েছে-
বাচ্চার দাম বেশি।
ভালো মানের বাচ্চা পাওয়া যায় না।
সোনালী মুরগির বাচ্চা মেশান থাকে।
টাইগার মুরগি
খাবার তালিকা ও ব্যবস্থাপনা
যেহেতু এটি দ্রুত বর্ধণশীল মুরগি সেহেতু এর খাদ্যে প্রোটিন সোনালী মুরগির চেয়ে বেশি থাকতে হবে। অনেক খামারি ব্যয়লার মুরগির খাদ্য খাওয়ায়। ব্রয়লার খাদ্য খাওয়ালে উৎপাদন ভালো আসলেও খরচ বেশি হতে পারে। ভালো কোম্পাণির সোনালীর খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে। তবে খাদ্য নিজে প্রস্তুত করে খাওয়ালে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বাড়ন্ত মুরগির খাদ্য তৈরীর সময খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রোটিন ১৮% ও ফ্যাট ৫% এর কম না হয়।
পালন পদ্ধতি
দেশি মুরগির মত ছেড়ে ও খামারে আবদ্ধ অবস্থায় দুই ভাবেই পালন করা যায়। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে ও খাচায় পালন করা যায়। খামারে আবদ্ধ ভাবে পালনের কেত্রে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির পালন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
২ মাসে দেড় কেজি ওজন হয়।
সর্বোচ্চ ওজন (মোরগ) ৭-৮ কেজি।
সর্বোচ্চ ওজন (মুরগী) ৩-৪.৫ কেজি।
প্রতিদিন খাদ্য খায় ১৫০ গ্রাম।
৫-৬ মাসে পরিপূর্ণ ডিমে আসে।
বছরে ১৫০-২০০ টি ডিম দেয়।
বাচ্চার দাম প্রতি পিচ ৭০-৮০ টাকা।
আমাদের দেশে এক শ্রেনীর ইউটিউবার বা ফেসবুকার আছে যারা কখনো টার্কি মুরগি, কখনোবা কাদাকনাথ অথবা টাইগার মুরগী কখনোবা দেশি মুরগির খামার করে ব্যাপক লাভ দেখিয়ে একটা হুজুগ তৈরী করে। আর এই হুজুকের বসে পড়ে অনেক সহজ সরল নতুন খামারি ইনভেস্ট করে কষ্টের টাকা লস করে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই হুজুগে পা দিবেন না, এই হুজুগকে কাজে লাগিয়ে একটা শ্রেণীর ব্যবসায়ী আপনার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তার পকেট ভারী করবে।
সর্বদা মনে রাখবেন হুজুগে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি। আপনি যদি খামার করতেই চান তাহলে বুঝে শুনে করুন, আপনার ব্যবসাটাকে মনে প্রানে ভালবাসুন, অল্প টাকা দিয়ে শুরু করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, ব্যবসা শিখে তার পর বড় করে করুন। লোভে পড়ে, কারও প্রলোভনে, হুজুগের বশে ব্যবসায় নামবেন না৷ সারা বছরের মার্কেট সিচুয়েশন, দাম দড়ের উৎথ্থান পতন, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনা করে ব্যবসায়ে নামুন।
তবেই আশাকরি লাভবান হবেন। আমারা সকলেই জানি ব্যবসার অভিজ্ঞতা ১ দিনে হয়না বছরের পর বছর লাভ লস দিয়ে তবেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।
শীতে মুরগির ফার্মে বিশেষ সতর্কতা
শীতে মুরগির খামারে ভাইরাস জনিত রোগ বালাই এর প্রাদূর্ভাব বাড়ে। তাই খামারিকে সতর্ক থাকতে হবে।
ফার্মের বায়ো সিকিউরিটি জোড়দার করুন।
খামারের জন্য হাট-বাজার হতে সবরকম হাঁস মুরগি ক্রয় হতে বিরত থাকুন।
খামারের চারিপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। শেডের ভিতর ও বাহিরে ৩:১ অনুপাতে চুন এবং ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করুন।
এক থেকে দুই দিন পর পর জীবানুনাশক শেডের ভিতর এবং বাহিরে স্প্রে করুন।
মেঝের লিটার সবসময় শুকনা ও ঝরঝরে রাখার চেষ্টা করুন।
দুই সপ্তাহ পরপর প্রতি ১০ বর্গফুট জায়গার জন্য ২৫০গ্রাম হারে শুকনা চুন গুড়া করে মুরগির লিটার উলট পালট করে মিশিয়ে দিন।
শীত শুরু হওয়ার আগেই রানিক্ষেত বা অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন।
খামারে বন্য প্রাণী যেন প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।
নিজে খামারের বায়ো সিকিউরিটি মেনে চলুন এবং কর্মীদের এবিষয়ে প্রশিক্ষণ দিন।
ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া হুটহাট ঔষধ ও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ হতে বিরত থাকুন।
মুরগির খামারের তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করুন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৬অক্টোবর ২০২২