রনজিৎ রাজ সরকার, টাঙ্গাইল থেকে: এতদিন দেশে দুধের জন্য শংকর জাতের গরু লালন-পালন করা হলেও এই প্রথম মাংসের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আমেরিকা থেকে সিমেন এনে ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ব্রাহমা জাতের এ গরু পালন। সাধারণ গরু পালনের চেয়ে এ জাতের গরু পালনে লাভ বেশি হওয়ায় এর কদর দিন দিন বাড়ছে। তিন বছরে ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হয় এক টন বা ২৭ মণ। এর মাংস বেশ সুস্বাদু এবং অন্যান্য জাতের গরুর চেয়ে এ জাতের গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণও কম। যে কারণে ব্রাহমা জাতের গরু পালনের প্রতি ব্যাপকভাবে ঝুঁকছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার খামারীরা।
সখীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট’ (গো-মাংস উন্নয়ন) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম এ কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রায় তিন বছর আগে সখীপুর উপজেলায় ১৩০ জন কৃষককের তিন শতাধিক গাভিকে এ জাতের গরুর সিমেন দেয়া হয়। এ গরুতে দেশি গরুর চেয়ে তিনগুণ বেশি মাংস হয়ে থাকে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রকল্প কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত খামার পরিদর্শন করে গরুর খামারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। ব্রাহমা জাতের এ গরু পালন প্রকল্প সফল হওয়ায় এ প্রকল্পটি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রকল্প কর্মকর্তারা। একই সাথে এ প্রকল্পটি সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। এতে করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও মাংস রপ্তানি করা যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুই থেকে আড়াই বছর বয়সের বাছুরগুলোর ওজন হয়েছে ৭৪০ থেকে ৭৬০ কেজি। বিরাট আকৃতির নাদুস-নুদুস গরুগুলোর এখনো শিং গজায়নি।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর গ্রামের আখতার হোসেন ব্রাহমা জাতের গরু পালন করছেন। তার দুই বছর চার মাস (২৮মাস) বয়সী ষাঁড় বাছুরটির ওজন হয়েছে ৭৬০ (১৯ মণ) কেজি। তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে আঁখি সময় বিশেষ গরুটির দেখভাল করেন।
আঁখি বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্য ষাঁড়টি খুবই শান্ত স্বভাবের। পড়াশোনার ফাঁকে মাঝেমধ্যে আমি এই ষাঁড়ের খাবার-দাবার আর যত্নের পেছনে ব্যয় করি। ভালোবেসে নাম দিয়েছি মধু। ষাঁড়টি এখন আমার প্রিয় বন্ধু। চলতি বছরের জুনে এই জাতের আরো একটি ষাঁড় বাছুর আমাদের পরিবারের সদস্য হয়েছে। ওকেও খুব আদর-সোহাগে নাম রেখেছেন রাজা। এখন আমার দু’টি প্রিয় বন্ধু।
খামারি আখতার হোসেন বলেন, এই ষাঁড় গরুটি দেখার জন্য টাঙ্গাইল জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও রাজধানী থেকে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের বাড়িতে এসেছেন। ফোন নম্বর নিয়ে যান। ষাঁড়টি কিভাবে পালন করছি কিংবা এর ওজন কত কেজিতে দাঁড়িয়েছে এসব জানতে চেয়ে কত মানুষই যে ফোন করে তার ইয়ত্তা নেই।
ওই গ্রামের নূরুল ইসলামের দুই বছর ৩ মাস (২৭ মাস) বয়সী ষাঁড়ের ওজন হয়েছে ৭৪০ (সাড়ে ১৮ মণ) কেজি। প্রতিমা বংকী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ষাঁড় গরুর ওজন হয়েছে ৬৮০ (১৭ মণ) কেজি। সানবান্ধা গ্রামের আবদুর রহমান তালুকদারের গরুর ওজন হযেছে ৬৪০ (১৬ মণ) কেজি। সখীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের আয়নাল হকের গরুর ওজন হয়েছে ৬৪৫ (প্রায় ১৭ মণ) কেজি।
খামারিরা জানান, এই গরু পালন করে তারা খুবই খুশি। দেশি গরুর মতো এই গরু সবকিছুই খায়। এই গরু পালন খুবই লাভজনক মনে হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শেখ মানিক বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ব্রাহমা জাতের গরু পালনের উপযোগী। তাই এ জাতে গরু দ্রুততম সময়ের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমিষের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে একইসাথে অন্যদেশ থেকে আর গরু আমদানি করতে হবে না। প্রকল্পের অধীনে গরু লালন-পালনের জন্য আমরা খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ওষুধপত্র, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহ করছি। ১৮ মাস পর এই গরুর মাংস খাওয়ার উপযোগী হবে। খামারিরা এই গরু লালন-পালন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যুগ্ম প্রধান দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, দেশি জাতের গরুর দৈহিক বৃদ্ধি প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। কিন্তু মাংসল জাত ব্রাহমা গরুর দৈহিক বৃদ্ধি এক থেকে দেড় কেজি। এর আগে বাংলাদেশে কমবয়সে এত বেশি ওজনের মাংসল জাতীয় গরু উৎপাদিত হয়নি কখনো।
এ জাতের গবাদিপশুর শরীরের আকার মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে। জন্মের সময়ে বাচ্চার ওজন হয় ২৪ থেকে ২৫ কেজি। পূর্ণবয়স্ক গাভীর ওজন ৬৫০ থেকে ৭০০ কেজি। এ জাতের গরু পরিবেশের তাপমাত্রার তারতম্যের সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাছাড়া খাদ্য সঙ্কটের সময়ও খুব সাধারণ মানের খাদ্য খেয়ে দৈহিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারে।
- বঙ্গবন্ধু স্মরণে ১ মিনিটে এক লাখ গাছের চারা রোপন
- টবে সবজি চাষ
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম