টাঙ্গাইল : জেলার দেলদুয়ারে কৃষি জমিতে দিনদিন বাড়ছে জৈব বা ভার্মি (কেঁচো) কম্পোস্ট সারের ব্যবহার। ফলে রাসায়নিকমুক্ত যেমন ফসল ও খাবার পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি জমির উর্বরতাও ঠিক থাকে। ফলে স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষক।
বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য যাতে নিরাপদ হয় সেই দাবি সবার। রাসায়নিক সার ও বিষ প্রয়োগ করে উৎপাদিত ফসল ও ভেজাল খাবারের কারণে রোগব্যাধি মহামারি আকার ধারণ করেছে। সেদিক থেকে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে জৈব সারের বিকল্প নেই। রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন ভাল হয়।
তাছাড়া অর্থেরও সাশ্রয় হয়। সে কারণে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার কৃষকরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কৃষি জমিতে জৈব বা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন। তাই পর্যায়ক্রমে রাসায়নিক সার ও বিষের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার যাতে বাড়ানো যায় সেই উদ্যোগ কৃষি বিভাগ।
এর আগে উপজেলা কৃষি বিভাগ রাসায়নিক সারের পরির্বতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে উপজেলার ২০ জন কৃষককে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির প্র্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জমিতে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে তারা সাফল্য পেয়েছেন। এদের একজন রিনা বেগম। সে প্রায় দেড় বছর আগে থেকে ভার্মি কম্পোস্টের ব্যবহার শুরু করে। কম্পোস্ট ব্যবহারে সুফল পাওয়ায় তার আশে পাশের এলাকার মানুষ তাকে অনুসরণ করছে।
সরেজমিনে রিনা বেগমের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বারি আলু-৮, বারি টমেটো-১৪, বারি বেগুন-৮, বারি পেয়াজ-১, বারি শিম-৬, শাহি পেপে, বারি লাউ-৪, লিচু, আম, বারি আমড়া-২, কাঠাল, আখ, বারি আম-৩, হলুদ, আদা, বারি লেবু-১, আখ (রং বিলাস, চায়না, অমৃত), চাষাবাদ করছে। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারের ফলে প্রতিটি ফসলই তার ভাল চাষাবাদ হয়েছে। ফলে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের আর্দশ কৃষাণী রিনা বেগম জানান, তার ৬টা স্তুপ থেকে দুই মাস পর পর ৬ মণ করে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি সার ২৫ টাকা করে বিক্রিও করেন তিনি। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে সবজি চাষ করেন। এতে তার জমিতে ফলন ভালো হয়। বর্তমানে তার সবজির চাহিদা বাজারে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনাম অর্জনের পাশাপাশি তিনি এখন ভালো মুনাফা অর্জন করেছেন।
রিনা বেগমের সাফল্য দেখে উপজেলার অন্য কৃষকরাও তাদের জমিতে জৈব সার ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছেন। এতে উৎপাদনও তুলনামূলকভাবে বেশি হচ্ছে। ফলে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে বাড়ছে জৈব সার বা কেঁচো কম্পোস্ট সারের ব্যবহার।
রিনা বেগমের স্বামী মাইন উদ্দিন বলেন, রিনা বেগমের সাথে আমি প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করে থাকি। এখন আশে পাশের এলাকার মানুষ আমার কাছ থেকে বিভিন্ন ফসলের বীজ, ফসল বুননের নিয়ম জেনে যায়। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে আমাদের বাড়ির প্রতিটি ফসলের ফলন ভাল হয়। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করলে জমি (ভূমি) তার প্রাণ ফিরে পায়। পাশাপাশি খরচও কম হওয়ায় লাভ বেশি হয়।
এ ব্যাপারে দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব মাহমুদ বলেন, কেঁচো কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন ভাল হয় ও বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়। তাছাড়া মাটির গুণাগুন ভালো থাকে এবং মাটির উর্বরতাশক্তিও বৃদ্ধি পায়। এ উপজেলায় জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্র কেঁচো কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার ছড়িয়ে দেয়া গেলে মানুষ থাকবে নিরাপদ।