টার্কির কৃমিজনিত রোগ ও চিকিৎসা

553

টার্কির কৃমিজনিত রোগ: অন্যান্য পাখির ন্যায় টার্কিরও কৃমিতে আক্রান্ত হয় ।টার্কি কৃমিতে আক্রান্ত হলে বাড়ন্ত টার্কির বাড়ন ব্যহত হয়,দৈহিক ওজন হ্রাস পায়,ডিম পাড়া টার্কির ডিমের উৎপাদন কমে যায়,আক্রান্ত টার্কির রোগ প্রতিরোধ কমে যায় এবং ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায়। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলেও যথাযথ ইমিউনিটি গড়ে ওঠে না। রোগে আক্রান্ত টার্কির শরীরে এন্টিবায়োটিক সঠিক ভাবে কাজ করে না। টার্কিতে নানা ধরনের কৃমির প্রাদুর্ভাব পরিলিক্ষত হয়। গোলকৃমি,পাতাকৃমি ও ফিতাকৃমি।

টার্কির ক্ষেত্রে গোলকৃমি বা নেমাটোডস এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কৃমি হলো এসকারেডিয়া গ্যালি ও হেটারেকিস গ্যালিনেরাম অন্যতম। এসকারেডিয়া গ্যালি টার্কির খাদ্য তন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্রে এবং হেটারেকিস গ্যালিনেরাম খাদ্য তন্ত্রের সিকামে অবস্থান করে।

এসকারেডিয়া গ্যালি ও হেটারেকিস গ্যালিনেরাম উভয় ধরনের কৃমি টার্কির পাশাপাশি অন্যান্য পাখিকেও আক্রান্ত করে। এসকারেডিয়া গ্যালি টার্কি ছাড়াও মুরগি, হাঁস, রাজহাঁস, কবুতর ও কোয়েলকেও আক্রমণ করে।

টার্কি এসকারেডিয়া গ্যালি নামক কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে টার্কির দৈহিক ওজন দ্রুত হ্রাস পায়,রক্তে প্রোটিন লেভেল কমে যায়।তীব্রভাবে আক্রান্ত হলে ক্ষুদ্রান্ত্রের লুমেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রক্ত কমে যাবে,ব্লাড সুগার হ্রাস পাবে,মূত্রে ইউরেটস বেড়ে যাবে,থাইমাস গ্রন্থি কুঁচকে যাবে,দৈহিক বৃদ্ধি কমে যাবে,ডিম পাড়া টার্কির ডিমের উৎপাদন কমে যাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে টার্কির মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।

টার্কি কৃমি দ্বারা আক্রান্তের পর এসকারেডিয়া গ্যালি নামক কৃমির জীবনচক্র সম্পন্ন করতে মোট ২৮ – ৩০ দিন সময় লাগে। টার্কি এসকারেডিয়া গ্যালি নামক কৃমি দ্বারা আক্রান্তের প্রথম ৯তম দিনে প্রোভেন্ট্রিকিউলাস খাদ্য তন্ত্রের ডুয়োডেনামে অবস্থান করে। পরবর্তীতে ১৭তম ও ১৮তম দিনে ডুয়োডেনামের লুমেনে অবস্থান করে পূর্ণতা পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এভাবে ডুয়োডেনামে অবস্থান করে ২৮ – ৩০তম দিনে ভ্রূণযুক্ত ডিম সক্ষম হয়। যা পরবর্তীতে সংক্রমণের জন্য উপযুক্ত হয়।

অপরদিকে, হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমি দ্বারা টার্কি আক্রান্ত হলেও অন্যান্য পাখিও বিশেষ করে মুরগি, হাঁস, রাজহাঁস, তিতির, কোয়েল ও ঘুঘু আক্রান্ত হয়ে থাকে।

টার্কি হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে সিকামের প্রাচীর পুরু হবে ও ব্যথার সৃষ্টি হবে। টার্কি তীব্রভাবে আক্রান্ত হলে সিকামের মিউকাস ও সাবমিউকাস লেয়ারে গুটি সৃষ্টি হবে। এ জাতীয় কৃমিতে আক্রান্ত হলে টার্কি হিস্টোমোনিয়াসিস নামক প্রোটোজোয়াল রোগে আক্রান্ত হবে। এই প্রোটোজোয়াল রোগকে’ ব্ল্যাক হেড ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। এ প্রোটোজোয়ার নাম হিস্টোমোনাস মেলিয়াগ্রেডিস।

হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমির ডিম আক্রান্ত টার্কির বিষ্ঠার মাধ্যমে বের হওয়ার পর উপযুক্ত পরিবেশ,তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পেলে প্রায় ২ সপ্তাহে অথবা তার চেয়ে কম সময়ে সংক্রামক অবস্থায় পৌছায়। যখন টার্কি তা ভক্ষণ করে হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমির ডিম ক্ষুদ্রান্ত্রের লুমেনে ভ্রূণে পরিণত হয়। ২৪ ঘন্টা অতিক্রম করলে সিকামে পৌছে লার্ভায় পরিণত হয়। এভাবে সিকামের ভিতর ১২ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে পরবর্তী ৩ দিনে পূর্ণতা লাভ করে পূণরায় ইনফেকশনের সক্ষমতা অর্জন করে।

চিকিৎসা: টার্কির এসকারেডিয়া গ্যালি নামক কৃমি নিধনে পাইপেরাজিন সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। এ জাতীয় উপাদান বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। পাইপেরাজিন খাদ্যে ব্যবহার করলে ০.২ – ০.৪ % , পানিতে ০. ১ – ০.২ % হিসেবে। অথবা ১২ সপ্তাহের কম বয়সের ক্ষেত্রে,একক মাত্রায় ব্যবহার করলে ৫০ – ১০০মিগ্রা প্রতি মুরগি/টার্কির জন্য। ১২ সপ্তাহের বেশি বয়সের মুরগি/ টার্কি হলে ১০০মিগ্রা প্রতি মুরগি/টার্কির জন্য ব্যবহার করতে হবে।

হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমি নির্মূলে পাইপেরাজিন ক্যাপসুল আকারে ২০০মিগ্রা/টার্কির জন্য ব্যবহার করতে হবে। এতে ৬০% টার্কি কৃমি মুক্ত হবে। তবে সম্পূর্ণরূপে টার্কিকে কৃমি মুক্ত করতে হলে ফেনোথায়াজিন নামক উপাদান প্রতি টার্কির জন্য ১ গ্রাম হিসেবে একদিন ব্যবহার করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৩ জুলাই ২০২১