শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা থেকে: ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ভেলকামারী বিলে প্রায় তিনবিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন নিখিল চন্দ্র মন্ডল। তিনি বলেন, পৌষ মাসে ধানের পাতা ( চারা) দিয়েছিলাম। সেই চারা মরে যায়। পরে আবার চারা দিয়ে বোরো ধান রোপন করি। জমিতে স্যালো মেশিন দিয়ে বোরিং ( অগভীর নলকূপ) থেকে পানি তুলে ক্ষেতে দিলেও কোন কাজ হয়নি। ধান গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়। পরে বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা ফলন হয়েছে। ধানের ক্ষেতে পানি থাকায় কাটতে পারছি না।
শুরুতে প্রচন্ড শীত, মাটিতে লবণাক্ততায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন বোরো চাষিরা । পরে যখন জানুয়ারির প্রথম দিকে বৃষ্টি হয় তখন প্রায় মরে যাওয়া বোরো ধান মাথা তুলে দাঁড়ায়। কিন্তু মধ্য মার্চ থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে কৃষকের পাকা বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পেকে যাওয়া ধান ক্ষেত যখন শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ার কথা সেখানে ধান ক্ষেতে হাঁটু পানিতে কৃষকের ঘরে বোরো তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে বোরো মৌসুম শুরু হয়। সে সময়ে চাষিরা বোরো আবাদেও জন্য বীজতলায় বীজ বপন করে। গত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে নোনার পরিমাণ বেশি থাকায় কোন কোন বীজতলায় গজানো চারা হলদে হয়ে যায়। তাতে বোরো চাষীরা দ্বিতীয় দফায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রতিষেধক ব্যবহার করে। কৃষকেরা জানুয়ারির প্রথম দিকে চারা রোপন করে। কিন্তু নোনামাটিতে ও কুয়াশায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যদিও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বৃষ্টি হলে হলদে যাওয়া ধানের চারা মাথা তুলে দাঁড়ায়। মার্চের শেষ দিকে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে থোড় আসা ধানগাছ জমিতে পড়ে যায়। এতে ফলন বাধাগ্রস্ত হয়। আবার কারো কারো ধান পেকে যায়। সেগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধানের গাছে পচন ধরে নষ্ট হচ্ছে।
বোরোচাষি অনেকেই সেচ পাম্প দিয়ে সকালে পানি সেচ দিয়ে রাখলেও সন্ধ্যায় মুসলধারে বৃষ্টিতে আবার যে অবস্তা সেই অবস্থায় ফিরে আসছে। সবমিলিয়ে বোরোচাষিরা ধান ঘরে ওঠা নিয়ে ব্যাপক শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
কোমলপুর গ্রামের বোরো চাষি মো. সাইদ হোসেন জানান, ধান ও মাছ চাষের জন্য তিনবিঘা জমি হারিতে নিয়েছি। বোরো ধান পেকে গেছে। কিন্তু ধানক্ষেতে পানি। পানি সেচ দিচ্ছি আবার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব কিনা বুঝতে পারছি না।
একই কথা বললেন মো. মোস্তফা মোল্লা, সাহাবুদ্দিন সরদার, শহিদুল ইসলাম ফকির, সওকাত হোসেন মোড়লসহ অনেক বোরো চাষিরা।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গুটুদিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, এ ব্লকে ( গুটুদিয়া ইউনিয়ন তিনটি ব্লকে বিভক্ত) ৭৩০ হেক্টর ( ২ দশমিক ৪৭ একর) জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। শীতের তীব্রতা, মাটিতে নোনাসহ নানা কারণে এবার বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে ধান পেকে গেছে। প্রতিনিয়ত বৃষ্টি হওয়ায় বোরোচাষিরা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। গুটুদিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনার উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, খুলনা জেলায় এবার টাগের্টেও অতিরিক্ত বোরোর আবাদ হয়েছে। বোরো আবাদেও টার্গেট ছিল ৫৬ হাজার ৬১৭ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৯ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন চাল ( ধানের টার্গেট ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ হেদায়েত/মোমিন