টিকা দেয়ার পরও কেন মুরগির রোগ হয়?

653

টিকা দেয়া পরও কেন রোগ হয়

ক।টিকার সমস্যা

টিকা তৈরি থেকে শুরু করে মুরগিতে প্রয়োগ পর্যন্ত সব স্তরে কুলিং চেইন রক্ষা করতে হয়।

টিকার বোতলের ছিপি ভাল ভাবে না আটকালে বাতাসের আর্দ্রতা টিকাকে নস্ট করে

আলোর প্রভাবে টিকা নস্ট হয়

টিকা গলানোর পানির অম্লতা বা ক্ষারের কারণে টিকার গুণগত মান ন্স্ট হয়।

টিকায় পর্যাপ্ত এন্টিজেন না থাকলে

টিকার ডোজ ঠিক মত না হলে ১২০০ মুরগিকে ১০০০ ডোজ দিলে

লাইভ টিকার ক্ষেত্রে যদি এন্টিজেন মারা যায় বা দূর্বল অবস্থা থেকে রোগ তৈরি করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়

জীবাণুর নির্দিস্ট স্ট্রেইনের এন্টিজেন অন্য স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কাজ নাও করতে পারে।

টিকার যে এন্টিজেন বা জীবাণূ ব্যবহার করা হয়েছে তা যদি মৃদু বা ইন্টামেডিয়েট টাইপের অথচ ফিল্ড ভাইরাস যদি হয় ভাইরোলেন্ট টাইপের অর্থাৎ বেশি আক্রমাণাত্মক তাহলে ঐ টিকা দ্বারা রোগ প্রতিরোধ হবে না।

ক্লাসিকেল বা স্ট্যান্ডার্ড স্টেইন যা দ্বারা টিকা তৈরি করা হয়েছে,এখন যদি একই প্রজাতির ভিন্ন বা ভাইরোলেন্ট স্ট্রেইনের ভাইরাস দ্বারা মুরগি আক্রান্ত হয় তাহলে ঔ টিকা কাজ নাও করতে পারে।

জীবন্ত টিকা কোন কোন সময় মিউটেশন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন জটিল রোগ করতে পারে,এতে মূল রোগের প্রতিরোধ হয় না।

খ।কারিগরী বা ব্যবহারিক ত্রুটি

যে টিকা শরীরে যে স্থানে কিংবা যে পদ্ধিতে ব্যবহার করার কথা,সেভাবে যদি ব্যবহার করা না হয়

নির্দিস্ট বয়সে নির্দিস্ট টিকা ব্যবহার না করলে

যদি টিকা গলানোর অনেক পরে ব্যবহার করা হয়(মেরেক্স,আই বির ও পক্সের টিকা ১-১.৫ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার না করলে)

সিরিঞ্জে দিয়ে সঠিক পরিমাণ টিকা যদি মুরগির শরীরে না ঢুকে

গ।মুরগি বা বাচ্চার নিজস্ব সমস্যা

মুরগি যদি আগেই কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে

মুরগির শরীরে যদি আমিষ ,ভিটামিন্স ও মিনারেলসের ঘাটতি থাকে

ধকল অবস্থায় টিকা দিলে( পরিবহণ,অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা)

যে রোগের টিকা দেয়া হয়েছে সেই রোগ যদি আগেই মুরগির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় বা সাবক্লিনিকেল রুপে থাকে।

মুরগি যদি পরজীবী কৃমি বা কক্সিডিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়।

ইমোনোসাপ্রেসিভ রোগ যেমন গাম্বোরো,রিও,মেরেক্স এবং মাইকোটক্সিকোসিস,মাইকোপ্লাজমোসিস দ্বারা যদি মুরগি আক্রান্ত হয়।

ঘ।প্যারেন্ট ফার্ম বা হ্যাচারীতে সমস্যা

#প্যারেন্ট খামার মালিক ফ্লকের সাল্মোনেলা ক্যারিয়ার মুরগি ধ্বংস না করে উৎপাদিত ডিম ফুটানোর জন্য বিক্রি করে থাকে কিংবা নিজেরাই বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে এবং হ্যাচারি সালমোনেলা মুক্ত না করে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে।বাণিজ্যিক খামারে বাচ্চা আসার পরেই শুরু হয় পুলোরাম এবং ফাউল টাইফয়েড রোগ।এই সময় অনেক ধরণের টিকার সিডিউল থাকে।রোগ থাকা অবস্থায় টিকা দিলে টিকার কাজ হয় না।

#নোংড়া পরিবেশে প্যারেন্ট ফার্মে এবং হ্যাচারীতেঃ ই- কলাই জীবাণূ আক্রমণ বাচ্চাতে কুসুম পচা রোগ হয়।মায়ের প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ডিমের কুসুমের মাধ্যমে বাচ্চাতে পোঁছে থাকে যা কুসুম পচা রোগাক্রান্ত বাচ্চায় সম্বব হয় না।

#অতি সংবেদনশীল গাম্বোরো সমৃদ্ধ এলাকায় প্যারেন্টে ফ্লকে ১৮-১৯ সপ্তাহে একবার ,৪০-৪৫ সপ্তাহে আর একবার মৃত টিকা দেওয়া হয় কারণ এই ফ্লকের উৎপাদিত ডিম থেকে ফুটানো বাচ্চায় গাম্বোরো রোগের এন্টিবডি এভাবেই পোঁছে দেওয়া হয়।এই প্যারেন্টের উৎপাদিত বাচ্চায় MDA এর অবস্থান না জেনে টিকা প্রয়োগ করলে টিকা কার্যকরী হবে না।

এজন্য হ্যাচারীতে ইলাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

#একই প্যারেন্ট ফ্লকের উৎপাদিত ডিমের বাচ্চায় এম ডি এ এর অবস্থান মোটামুটি কাছাকাছি থাকে।কিন্তু ভিন্ন ফ্লকের ডিম একত্রে ফুটিয়ে ঐ বাচ্চা পালন করলে এম ডি এ এর অবস্থান ভিন্ন হওয়াতে সঠিক টিকা দানের বয়স নির্ণয় করা যায় না এবং টিকার কার্যকারিতা ব্যর্থ হবার সম্বাবনা থাকে।ভ্যাক্সিন ভাইরাস দ্বারা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠার আগে বহিরাগত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।

ঙ ।খাদ্য সমস্যাঃ

সুষম খাবার না হলে পুস্টির অভাবে ভ্যাক্সিন দিলেও ভাল টাইটার উঠবে না।খাদ্যে মোল্ড থাকলে সেখান থেকে উৎপাদিত মাইকোটক্সিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণূ ইমোনিটিকে নস্ট করে দেয়।

চ।খামারীর পোল্ট্রি বিষয়ে না জানা থাকলেঃ

ক্ষতিকর মেডিসিন ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ব্যবহার করলে টিকার ফল ভাল আসে না।

খামারে বায়োসিকিউরিটি ভাল না হলে

এলাকাভিত্তিক সম্মিলিত টিকা কর্মসূচী পালন না করলে

নোট ঃ ভ্যাক্সিন টাইটার ও এন্টিবডি টাইটার

এক মিলিলিটারে কি পরিমাণ জীবাণূ (জীবিত,মৃত, দূর্বল) তাকে ভ্যাক্সিন টাইটার বলে।

এন্টিবডি টাইটার পরিমাপিত হয় কি পরিমাণ এন্টিজেন প্রকৃত পক্ষে কি মাত্রায় এন্টিবডি উৎপন্ন করতে পেরেছে তার উপর।আবার এন্টিবডি টাইটার মাত্রাই সব সময় ইমোনিটির পরিমাপক নয়।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস ঃযে ভুল গুলি খামারী করে থাকে

১।সূর্য্যের আলোতে ভ্যাক্সিন গুলায়

২।ডাবল ডোজে ভ্যাক্সিন দেয় যা মুরগির জন্য (ধকল) এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়

৩।গাম্বোরো ভ্যাস্কিন ৭দিনের আগে দিলে কাজ করে না কারণ এন্টিজেনের রিসেপ্টর তখনো ডেভেলপ করে নি।

৪।তেমনি এন ডি টিকা ও ৭দিনের আগে দেয়া বিতর্কিত বিষয় কারণ এন্টিজেনের রিসেপ্টর ডিভেলপ না করা।

৫। আই বি ,পক্স ,মেরেক্স এই ভ্যাক্সিন গুলো খুব ফ্রাজাইল এবং তৈরি করার ১ঘন্টা পর পটেন্সি নস্ট হতে থাকে।

মেরেক্স ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি রাখা উচিত।

প্রাইমারী ভ্যাস্কিন সব সময় চোখে বা নাকে দেয়া উচিত আর ব্রুস্টার ভ্যাস্কিন গুলো পানিতে দেয়া যায়।

৬।ভ্যাক্সিন দেয়ার সময় যদি রক্তপাত হয় তাহলে বুঝতে হবে প্রেসার বেশি এবং ভ্যাক্সিন লিকেজ হচ্ছে।

যদি মাথা ফোলে যায় তাহলে ভুল ভ্যাক্সিনেশন

৭।যদি কোন রোগ এলাকায় না থেকে তাহলে সে রোগের লাইভ টিকা দেয়া যাবে না কিন্তু অনেকেই তা করতেছে।

৮।আই বি টিকা যদি স্প্রে করে ১ দিনের বাচ্চায় দেয়া হয় তাহলে সবচেয়ে ভাল।

৯।ফার্ম যদি নোংড়া থাকে তাহলে ভ্যাক্সিন ভাল কাজ করে না।

১০।প্রাইমারী ও ব্রুস্টার ভ্যাক্সিন একই কোম্পানীর হলে ভাল

১১। আই বি ও এন ডি টিকা দেয়ার আগে কৃমিনাশক দেয়া উচিত।

১২।কিল্ড ভ্যাক্সিনের বোতলে যদি ২টি লাইন দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ইমালশন ভেংগে গেছে আর যদি ৩ লাইনস দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ভ্যাক্সিন বাতিল।

কিল্ড ভ্যাক্সিনের জন্য নিডলের মাপ ১৯-২১গজ আর লাইভ টিকার জন্য ২০ গজ ভাল

১৩।খাবারে যদি টাইলোসিন ও সি টি সি দেয়া থাকে তাহলে পানিতে ভ্যাক্সিন দেয়া ঠিক না।

১৪ পাখি যদি দূর্বল,অসুস্থ ,ওজন কম থাকে তাহলে ভ্যাক্সিন পরে করতে হবে।

১৫।লাইভ টিকা দেয়ার পর কিল্ড টিকা ভাল কাজ করে(কলেরা,করাইজা,পক্স ছাড়া)

১৬।ইন্ট্রামাস্কোলার ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে বুকের মাংস হলো সবচেয়ে ভাল

১৭।গাম্বোরোর ক্ষেত্রে মুখে আর আই বির ক্ষেত্রে চোখে সবচেয়ে ভাল

১৮।ফ্রিজে ভ্যাক্সিনের সাথে অন্যান্য জিনিস রাখা ঠিক না।

১৯।আবহাওয়া পরিবর্তনের আগে এ আই,এন ডি ,আই বির ব্রুস্টার টিকা দেয়া উচিত।

২০।কিল্ড টিকা দেয়ার ২৪ ঘন্টা আগে বিশেষ করে কোম্পানীর নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাক্সিন ফ্রিজ থেকে বের করা উচিত কিন্তু ৮০% কিল্ড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।ভ্যাক্সিন আগে নামালে ভিস্কোসিটি কমে যায়।

২১ নিপল লাইনের ক্ষেত্রে পানির লাইন ডিসইনফেকট্যান্ট দিয়ে ওয়াশ করতে হবে এবং পানি বের করে দিতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২ এপ্রিল ২০২১