চালকুমড়া আমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি সবজি। ঘরের চালে ও জমিতেও বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সবজি ফলানো হয়। ঠাকুরগাঁও জেলায় এটি পানিকুমড়া ও জালি নামেও পরিচিত। এটি পুষ্টিকর একটি সবজি। তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া, পায়েস ও কুমড়া বড়া তৈরি করেও খাওয়া যায়। শুধু চালকুমড়াই নয়, এর কচি পাতা ও ডগাও শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ঠাকুরগাঁও থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে চালকুমড়া (পানিকুমড়া)।
মঙ্গলবার সদর উপজেলার বড়দেশ্বরী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলায় চালকুমড়া পাঠানোর জন্য স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। সেখানে চালকুমড়াগুলোকে সাদা পরিষ্কার কাগজে পেঁচানো হচ্ছে, যাতে করে ময়লা-মাটি-ধুলা গায়ে না লাগে এবং সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় নিতে ট্রাকের মধ্যে যাতে করে ক্ষতি না হয়। এরপর চালকুমড়াগুলোকে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ একটি বস্তায় ঢুকিয়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে।
বড়দেশ্বড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী রইসুল বলেন, প্রতি বছর চালকুমড়া ঢাকায় পাঠিয়ে থাকি। এছাড়া মাঝেমধ্যে দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও চাহিদা পেলে সেগুলো সরবরাহ করে থাকি। গত এক মাস ধরে প্রায় ১০-১৫ ট্রাক চালকুমড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়েছি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোচাবাড়ী এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সফির উদ্দিন জানান, ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। এখন ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা। একটি ট্রাকে সাড়ে পাঁচ হাজার চালকুমড়া পাঠানো যায়। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে লাভ হচ্ছে কম।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় মোট তিন হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মিনহাজ কৌশিক বলেন, চালকুমড়ার স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারের বিষয়ে আমরা জেনেছি। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে। যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চালকুমড়া। এটি রোগ প্রতিরোধ করে, ব্রেইন ভালো রাখে, যক্ষ্মা রোগের মহৌষধ, ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুলের যতেœ বিশেষ উপকারী এই সবজি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চালকুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আকচা, জগন্নাথপুর, গড়েয়া, সেনুয়া, বড়গাঁও, নারগুনসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বেশি চাষ হয়ে থাকে। উল্লিখিত এলাকার কৃষকেরা বিগত কয়েক বছর থেকে সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও থেকে চালকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে বলে চাহিদা বেড়েছে, কৃষকও ভালো দাম পাচ্ছেন। এ বছরও তারা ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে মনে করছি।