উত্তরের অবহেলিত জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলায় সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলানোর মতো নেই কোনো ভারী শিল্প বা কারখানা, তাই কৃষিই এ জেলার মানুষের একমাত্র আশাভরসা। তাই এ বছর গমের ভালো ফলনের আশায় স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। তবে কৃষকেরা গত বছর মৌসুমের শুরুতে গমের ফলন ও দাম কম পাওয়ায় আবাদ কিছুটা কমিয়েছেন।
এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘুরে দেখা যায়, আবাদের শুরুতে কৃষকের গমক্ষেত ভালো হয়েছে। তবে এ বছর মৌসুমের শুরুতে গমের ন্যায্য দাম আশা করছেন কৃষকরা। জেলায় এ বছর গমের পাশাপাশি ব্যাপক হারে ভুট্টা ও মরিচ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কারণ গমের চেয়ে ভুট্টা ও মরিচ লাভ হচ্ছে বেশি। বর্তমানে ভুট্টা ও মরিচের বাজারদর গমের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ মৌসুমে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। গম আবাদ করা হয়েছে ৩১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে, যার গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে। গম আবাদ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে, যা গত বছর থেকে পাঁচ হাজার ৫০৭ হেক্টর কম জমিতে আবাদ হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতি বছরের মতো এবার পাঁচ বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছেন। গত বছর গম মাড়াই করার পর গমের ফলন ও দাম কম পাওয়ায় আমাদের গ্রামের অনেক কৃষক এখন গম আবাদ ছেড়ে ভুট্টা ও মরিচ আবাদে ঝুঁকছেন। তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে বিক্রির সময় গমের দাম কিছুটা কম থাকে, একই সঙ্গে গমের ফলনও কম। এছাড়া সার ও কীটনাশক, হালচাষ, সেচ ও কৃষক মজুরি দিয়ে গম আবাদে লাভ আসে না। গত বছর কৃষকের কাছ থেকে গম কিনে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন।
প্রায় দুই বিঘা জমিতে গম করেছেন সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের ভেলারহাট গ্রামের কৃষক বদিরুল ইসলাম। এরই মধ্যে গমের ক্ষেত সবুজ আকারে রূপ নিয়েছে। নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন তিনি। ফলন ভালো হওয়ার আশা করেছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। গমের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকছেন। ভুট্টার ফলনও ভালো হওয়ায় তারা দামও পাচ্ছেন চাহিদামতো। তার পরও কৃষকরা গমের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।