ঠাকুরগাঁওয়ে ‘কালো সোনা’ নামে পরিচিত পেঁয়াজ বীজ চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। গত কয়েক বছরে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার বীজ চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে চাষিদের মাঝে। উৎপাদিত এসব বীজের বাজারমূল্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এসব বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামে মাঠের পর মাঠে দেখা মেলেÑসাদা রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত। এসব ক্ষেত করে শুধু কৃষকেরাই লাভবান হননি, স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজ হওয়ায় ক্ষেতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন স্থানীয় যুবকরা। উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারকে সহায়তা করছেন।
দেখা যায়, সকাল হলেই এসব বীজ ক্ষেতের পরিচর্যায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ সেচ দিতে, কেউ আবার পোকা দমনের কীটনাশক স্প্রে নিয়ে এবং কেউ হাতের আলতো ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এবং পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিশোর-কিশোরীরাও এসব কাজ করছেন। তবে কয়েকজন চাষি জানালেন, সাধারণত নভেম্বর মাস বীজতলায় বা জমিতে পেঁয়াজ বীজ বপনের সময়। বীজ পরিপক্ব হতে সময় লাগে ১৩০ দিন। পরাগায়ন না হলে পেঁয়াজ ফুলে পরিপক্বতা আসে না। আর এসব ফুলে পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম হলো মৌমাছি। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকেরা ক্ষেতে কীটনাশক ছেটান। কিন্তু সেই কীটনাশকে মারা পড়ছে উপকারী পোকা ও মৌমাছি। এ কারণে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে দিন দিন মৌমাছির আনাগোনা কমে যাচ্ছে। তাই ঝাড়ু ও হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়নের চেষ্টা চলছে।
পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন আখানগর গ্রামের কৃষক বদিরুল ইসলাম, এ বছর তিনি প্রায় আট বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন জেলায় ফলন ভালো হওয়ায়। প্রায় চার লাখ টাকা মুনাফার আশা করছেন তিনি। মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জেলার অন্য কৃষকরাও।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় এক হেক্টর কম। প্রতি হেক্টরে ৯০০ কেজি বীজের বাজারমূল্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা।