ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব ডিম-মুরগির বাজারে

113

মুরগির মাংসের দাম প্রতিনিয়িত বেড়েই চলেছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০-৭০ টাকা। অর্থাৎ যে মুরগির দাম জানুয়ারি মাসের শুরুতেও ১৫০ টাকার আশপাশে ছিল। এখন কিনতে লাগছে ২১০-২২০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপদে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেনির পেশাজীবীর মানুষজন।

মুরগির সঙ্গে আরও দাম বেড়েছে ডিম ও গরুর মাংসেরও। খাসির মাংসের দাম অনেক আগে থেকেই স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।

অবশ্য দাম বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ বলছেন সাধারন ব্যবসায়ীরা—এক. মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে পোলট্রি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। দুই. চাহিদা বিপরীতে কম সরবরাহ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকসান দিয়ে ছোট অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে উৎপাদন এখন সীমিত।

তবে ব্যবসায়ীদের এই দাবির সঙ্গে একমত নন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ছোট খামারের মালিকেরা সাময়িকভাবে মুরগি পালন বন্ধ রাখতে পারেন। তবে বাস্তবতা হলো, চাহিদা অনুসারে মুরগির মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। বাজারে মুরগির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ নেই। মন্ত্রী মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে হচ্ছে না। মুনাফালোভী কেউ যেন বেশি দামে মুরগি বেচাকেনা করতে না পারেন, সে জন্য বাজারে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

বাজার দরের গত মাসের পরিসংখ্যান দেখলে ব্রয়লার মুরগি দাম বৃদ্ধির আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। বাজার দর অনুযায়ী, গত মাসে ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হতো। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এই দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা ও ফার্মের মালিকরা খাবারের দাম ও সরবরাহের দাম বৃদ্ধির কথা বলে মুরগির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে বেশি দামে কিনে খুচরা বাজারে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।।

মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে দেশের শীর্ষস্থানীয় পোলট্রি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফতাব বহুমুখী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সামাজিক অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ে। এতে চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের এই দাম কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, সেই ধারণা দিতে পারেননি তিনি।

মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় খামারি মালিকদের দায়ী করছেন ক্ষুদ্র অনেক খামারি। ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, দেশে মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদন করে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তারাই দাম বাড়িয়ে রেখেছে।

পোলট্রি খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা, সয়ামিলসহ বিভিন্ন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। খাদ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলারের দামের কারণে আমদানির খরচ বেড়েছে। আরেকটি সমস্যা হলো, ব্যাংকগুলোতে ডলার–সংকট থাকায় আমদানির ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে দেশে মার্কিন ডলার ছিল ৮৬ টাকার আশপাশে। এখন তা ১০৬ টাকা পড়ছে।

পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিন বলেন, ডলারের অভাবে আমদানি করতে না পারায় বাজারে পোলট্রি খাদ্যের উপকরণের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমদানি না বাড়লে এ খাতে সংকট আরও বাড়বে।

নতুন করে ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনেকটা ক্ষুব্ধ ও হতাশ নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা। তারা বলছেন, দামের কারণে গরু কিংবা খাসির মাংস অনেক আগেই নাগালের বাইরে ছিলো। এখন ব্রয়লার মুরগির দামও নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় সপ্তাহে অন্তত একদিনও মাংস খাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছুটির দিনে বাজার করতে আসা গার্মেন্টস কর্মী সাবিয়া খাতুন বলেন, দামের কারণে গরু ও খাসির মাংস তো মাসে একবারও খাওয়া সম্ভব হয় না। ব্রয়লার মুরগিটা একমাত্র ভরসা ছিল আমাদের। কিন্তু এখন ব্রয়লার মুরগির দাম যেভাবে বেড়েছে ছেলেমেয়েদের আর মাংস খাওয়াতে পারব না।