মধ্যস্বত্বভোগীদের কারনে দাম বাড়ল ব্রয়লার মুরগির

185

তিন দিন আগেও দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি, সেই ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে। আর একটু বাড়লেই ছুঁয়ে ফেলবে দুই শর ঘর। আমিষের ‘স্বস্তা’ উৎসটি দামি হয়ে উঠেছে আগেই। এবার তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে আড়তে সরবরাহ কমে গেছে। খামারিদের নেতারা বলছেন, খাবারের দাম বাড়ায় সামনে আরও বাড়তে পারে দাম।
মুরগির পাশাপাশি লাফ দিয়েছে ডিমের দামও। লাল ডিমের ডজন দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গেছে ১৫ টাকার মত।

ক্রেতারা রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ছুটির দিনে মুরগি নিতে এসে এই দাম দেখে ভীষণ হতাশ । ১৫০ টাকা দাম হবে ভেবে বাজারে এসে দাম দেখেছেন ১৯৫ টাকা।

কারওয়ান বাজারে আসা মুরসালিন আহমেদ বললেন, “দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। এখন রমজান মাস টার্গেট করে তারা একেকটা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ছোলা-ডাল এসবের দাম বাড়াল, মাঝে মসলা-মরিচের দাম বেড়েছে, এখন আবার মাংস, ডিম এগুলোর দাম বাড়ছে।”

দাম বাড়ল কবে- এমন প্রশ্নে কাজীপাড়া বাজারের বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, “কবে বাড়ছে ডেইট মনে নাই। তিন দিন আগে আছিল ১৫০-১৬০। রাইতে গাড়ি আহে, যে রেইটে মুরগি দেয় সেই রেইটে বেচি। দাম বাড়ে না কমে এই হিসাব আমাগো না।”

মুরগির দাম বাড়ার পেছনে একটা ব্যাখ্যা জানালেন কাপ্তান বাজারের পাইকার আকরাম হোসেন। তিনি বললেন, “এখন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা, খাবার, ওষুধ সবকিছুর দাম বেশি। যে কারণে খামারিরা শেডে মুরগির বাচ্চা তুলছে না। খামারিদের আশঙ্কা, যে টাকা তারা খামারে মুরগির পেছনে দেবেন, সে টাকা বাজার পড়তির দিকে থাকলে আর উঠে আসবে না। যে কারণে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়ে ব্রয়লারের দাম বাড়ছে।“
সোনালি মুরগির দাম কেজিতে আরও একশ টাকা বেশি। ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা দরেই বিক্রি হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। ডিম পাড়া শেষ হলে কেজিদরে বিক্রি করে দেয়া লেয়ারের সরবরাহও কমে গেছে বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম।

বেড়েছে গরু-খাসির মাংসের দামও। কারওয়ান বাজার ও মিরপুরের দুটি বাজারে গরুর মাংস ২০ থেকে ৫০ টাকা এবং খাসির মাংসের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশিতে বিক্রি হয়েছে।

প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১ হাজার টাকা।

মাংস ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদ বলেন, “আমাদের মার্কেট তো ওপেন। দামের এই উঠানামা দীর্ঘদিন ধরেই আছে। দাম সাধারণত আমাদের মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ বা নির্ধারণ করে না। এখন পর্যন্ত মুরগি-ডিম-মাংসের দাম নির্ধারণের ব্যাপারে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সপ্তাহের কার্যদিবস শুরু হলে, হয়তো আমরা বসব, আলোচনা করব।“
হঠাৎ লাফে ‘ডাবল’ সেঞ্চুরির পথে ব্রয়লার মুরগি।

মিরপুরের শাহ আলী বাজারে মাসের বাজার কিনতে আসা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে আমরা তো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। সংসার চালানোই কঠিন। এখন চাইলেই বাচ্চাকে নিয়ে একদিন বাইরে খেতে যেতে বা শপিং করতে যাওয়া যায় না। আমাদের আয় তো আর বাড়েনি।“

ডিমের বাজারের হালচাল
গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ডিমের ডজন ১০০ টাকার নিচ থেকে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে উঠে যায় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। তবে শীতের আগে আগে দাম কমতে কমতে ১২০ টাকার নিচে নামে। সপ্তাহ দুয়েক ধরে এই দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী।

কারওয়ান বাজার, মিরপুর শাহ আলী বাজারে ১৩৫ টাকা ডজনের ডিম মিললেও, ছোট বাজার ও গলির দোকানে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা।
ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, “এর আগে ডিম আমদানির ঘোষণায় দাম কমেছিল। কিন্তু আমদানি করা হবে না, এই কথা জানানোর পর আবার বাড়ছে। ভোক্তারা ডিম খাওয়া কমিয়ে দেওয়ায় দাম কমেছিল, কিন্তু আবার ভোক্তারা ফেরায় তারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

ডিম-মুরগির এই বাড়তি দাম সামনের দিনে কমার সম্ভাবনা দেখছেন না পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন বলেন, “খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণের অস্বাভাবিক দামের কারণে পোলট্রি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদি খাদ্যের দাম না কমে আর এভেইলেবল না হয়, তাহলে সামনেও দাম কমার সম্ভাবনা কম।“ এর পরও দাম এত বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয় কারন খামারি যে মুরগি ১৫৪ টাকায় উৎপাদন করছে, সেটি বিক্রয় করছে ১৪৯ টাকায়। কিন্তু বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারনে এর দাম আরো বেশি হয়ে গেছে।