সরকার ডিম উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করলেও বেহাল দশায় খামারিরা। মুরগি পালনের পর উঠছে না ডিমের উৎপাদন খরচ। দিনে দিনে লোকসান গুণছেন প্রান্তিক খামারিরা। বড় মূলধনের ব্যবসায়ীরা মুরগি চাষ বাদ দিয়ে ঝুঁকছেন অন্যদিকে। এদিকে ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় দেশে ১১ বছরে ডিম উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণ।
দেশে বর্তমানে বিগত ১০ বছরে চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে ডিম উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণ। অধিদপ্তরের ১১ বছরের প্রতিবেদন মতে, সরকারি হাঁস-মুরগির খামারে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন ছিল ৪৬৯ কোটি পিস। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন হয়েছে ৫৭৪ কোটি ২৪ লাখ পিস। ১১ বছরের মাথায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি। যা আগের তুলনায় ৩গুণ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের খামারিরা চাহিদার সাথে তালমিলিয়ে ডিম উৎপাদন করতে সক্ষম। ঘাটতি নেই ডিমে, প্রয়োজন নেই আমদানির। ফলে ডিম উৎপাদনে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। একইসাথে বেড়েছে ভোক্তার চাহিদা। তবে, অন্যান্য পণ্যের তুলনায় ডিমের দাম না বাড়ায় লোকসান গুণছেন বলে দাবি খামারিদের।
খামারিরা বলছেন, প্রান্তিক পর্যায় ও বড় খামারিরা ডিম উৎপাদন করেও দাম পাচ্ছেন না। মুরগি পালনে ব্যায় বেড়েছে বহুগুণ। ডিম ও মাংসের দাম কমলেও বাড়ছে বাচ্চা ও ওষুধের দাম। ডিমপাড়া মুরগির এক দিনের বাচ্চার দাম বাড়িয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। তাঁরা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট করে বাচ্চার দাম বাড়িয়েছেন।
তারা বলছেন, বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আর তা না পারলে খামারির এই লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়। বাচ্চার দাম হাতের নাগালে থাকলে উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং লাভবান হওয়া যায়। বাচ্চার দাম ২০-৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার এর বেশি হয়ে যায় তখন আর লাভের মুখ দেখতে পান না খামারিরা।
ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা বলছেন, আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের ভূমিকা অন্যতম। এই সম্ভাবনাময় খাত বর্তমানে নানা সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে। উৎপাদন খরচ তুলতে খাচ্ছেন হিমসিম। এসব মুরগি ১২০ দিন থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে কিন্তু তার আগে মুরগি পালনের যে খরচ পড়ছে তা অত্যাধিক। এরপর ডিম উৎপাদনের পর পর্যাপ্ত দাম মিলছে না। প্রতিপিস ডিম উৎপাদনে খরচ ৬.৫০ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৫.৫০ টাকায়। ফলে লোকসান গুণছেন খামারিরা।
মুরগির খাবারের দাম বেড়েই চলে লাগামহীন, বাড়ছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত খরচ, রোগ-বালাইয়ে মুরগি মরে সয়লাব হলেও মিলছে না কোন সরকারি ঋণ। করোনাকালীন ৪ শতাংশ হারে ঋণের ঘোষণা দিলে সরকারি এ ঋণ অধিকাংশ খামারি পান নি। সবমিলিয়ে নতুন করে কেউ আর এই ব্যবসায় পা বাড়াচ্ছেন না বরং বড় মূলধনের ব্যবসায়ীরা মুরগি চাষ বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকছেন।
এদিকে আধুনিক প্রযুক্তি ও পুষ্টি সচেতনতা এবং চাহিদার কথা চিন্তায় বাড়তে থাকে ডিমের উৎপাদন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী একজন মানুষের বছরে ডিমের চাহিদা ১০৪টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গত ১১ বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ক্রমাগতভাবে ডিম উৎপাদন বাড়ছে। ২০০৯-১০ সালে ডিম উৎপাদন হয় ৫৭৪ কোটি পিস, ২০১০-২০১১ সালে ৬০৭ কোটি পিস, ২০১১-১২ সালে ৭৩০ কোটি পিস, ২০১২-১৩ সালে ৭৬১ কোটি পিস, ২০১৩-১৪ সালে ১০১৬ কোটি পিস, ২০১৪-১৫ সালে ১০৯৯ কোটি পিস, ২০১৫-১৬ সালে ১১৯১ কোটি পিস, ২০১৬-১৭ সালে ১৪৯৩ কোটি পিস ও ২০১৭-১৮ সালে ১৫৫২ কোটি পিস, ২০১৮-১৯ সালে ১৭১১ কোটি পিস এবং সর্বশেষ প্রতিবেদনমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের হাঁস খামারে ১৭৩৬ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে।
হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, জনসংখ্যা ও দেশে ডিমের চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ ডিম প্রয়োজন প্রায় সবটুকুই উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে দেশে। বছরে মাথাপিছু ১০৪টি ধরে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ডিমের চাহিদা ছিল এক হাজার ৭৩২ কোটি পিস। চাহিদার বিপরীতে ডিম উৎপাদিত হয়েছে এক হাজার ৭৩৬ কোটি পিস। ফলে পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাহিদার চাইতে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে।
ডিমের দাম কমার কারন জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ডিম উৎপাদন বেড়েছে। করোনাকালীন সময়ে অধিদপ্তরের প্রচার প্রচার-প্রচারণার কারনে ডিমের দাম খুব একটা কমেনি। মাঝখানে দাম কমে আবার বেড়েছিল। তখন ৮ টাকা সাড়ে ৮ টাকা পিন ডিম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে আবারও দাম কিছুটা কমেছে।
তিনি আরো বলেন, বাজারে আমদানির উপর এবং ভোক্তার চাহিদার উপর দাম কমা-বাড়া হয়। খামারিদের শঙ্কার কারণ নেই। ডিমের দাম আবারও বাড়বে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
এগ্রিফার্মস২৪/২৪ফেব্রুয়ারি২০২১