রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বেশ ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার, সোনালীসহ সব ধরণের মুরগি। সেইসাথে প্রতি ১০০ টি ডিম ২৫০ থেকে ৯৫০ টাকায় এমনকি ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বোচ্চ ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস।
আজ শনিবার (১৮ জুন ২০২২) রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ভালো দাম বিক্রি হচ্ছে মুরগি। মুরগির দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, মুরগির দাম আরও বাড়বে। খামারিরা নতুন করে বাচ্চা তুলছেন না। আমাদের কাছে মুরগির আমদানি কমে গেছে। বাজারে মুরগির যা দাম আছে তাতে কিছুটা বাড়তে পারে। আবার নাও বাড়তে পারে; বলা যায় না পোল্ট্রি সেক্টরের কথা! হটাৎ আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। আবার বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে।
পাইকারি মুরগি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ টাকা কেজিতে বাড়ছে আবার কমছে। ব্রয়লারের কেজি সর্বনিন্ম ১৬০ টাকা রাখা দরকার। তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা লাভবান হতে পারবে। ব্রয়লার মুরগির দাম সবচেয়ে বেশি উঠানামা হয়েছে। এরআগে সচরাচর ব্রয়লারের কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে আবার ১০ টাকা কমে যায়। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালী ২৬০ টাকা, লাল লেয়ার ২৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, মাস খানেক ধরেই ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। প্রতি একশ লাল ডিম ৯৫০ টাকা, সাদা ডিম ৮৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ১২৫০ থেকে ১২০০ টাকা শ হিসেবে বিক্রি করছি। যা জানতে পারছি- দাম আরো বাড়তে পারে।
কথা হয় পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে প্রান্তিক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে।
খাদ্যের দামে উৎপাদিত মুরগির দাম তুলনামূলক ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে যেখানে সারাবিশ্ব কৃষি-প্রাণিসম্পদ রক্ষায় নেমে এসেছে; সেখানে আমাদের দেশের সিন্ডিকেট সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ৩১’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। বাজেটে আবার খাদ্যের দাম না কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে।
দাম বাড়নো প্রয়োজন আছে কিনা? এমন প্রশ্নে পাইকারি মুরগি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, মুরগির দাম বাড়ছে আবার কমছে। ব্রয়লারের কেজি সর্বনিন্ম ১৬০ টাকা রাখা দরকার। তাহলে আমাদের দেশের খামারিরা লাভবান হতে পারবে। ব্রয়লার মুরগির দাম সবচেয়ে বেশি উঠানামা হয়েছে। এরআগে সচরাচর ব্রয়লারের কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে আবার ১০ টাকা কমে যায়।
মুরগির দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, রাজশাহীতে করোনায় ৭৫ ভাগ খামার বন্ধ। নতুন করে ২০ শতাংশ খামারি আবার উৎপাদনে নেমেছেন। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খামারি উৎপাদনে আসলে এবং বাইরের জেলা থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমে যাবে। কিন্তু যে খামার বন্ধ হয়েছে তা আর চালুর সম্ভাবনা নাই। ফিডের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে খামার রাখা খুব হিমসিম খেতে হবে।
ডিমের দাম বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমের দাম এবার ৩৮ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। ডিমের দাম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা হালি থাকা প্রয়োজন।
খাদ্যের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে আদর্শ পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের মালিক এএইচএম আরিফুজ্জামান বলেন, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খামার বন্ধে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। কোনমতে টিকে আছি। খামারিদের দিকে যদি এখনই সরকার না তাকায় তাহলে পোল্ট্রি খাত ধ্বংশের মুখে চলে যাবে। অনেক খামারি বাড়ি-ভিটা বিক্রি করে ব্যবসার ঋণ শোধ করছেন। খাদ্যের দাম এখনই কমানো দরকার। নইলে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে নিতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৮জুন ২০২২