দ্রুত পচনশীল পণ্যের মধ্যে ডিম একটি, যা শীতে ৭-১০ দিন এবং গরমের সময় ৩-৪ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ ডিমের খোসা বা উপরিভাগের আবরণে চোখে দেখা যায় না এমন অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। এসব ছিদ্র দিয়ে গরম বাতাস ডিমের ভেতরে প্রবেশ করে এবং জলীয় অংশ বাষ্পাকারে বেরিয়ে আসে। এ সময় ছিদ্র পথে বিভিন্ন অনুজীব ঢুকে ডিমের পচন ঘটায়। তাই ডিমের ছিদ্রগুলো বন্ধ করা খুবই জরুরি। এছাড়া ডিম উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত এর গুণগতমান হ্রাস পায়। অথচ কিছু সনাতন পদ্ধতির মাধ্যমে ডিম সংরক্ষণ করে এ ধরণের সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। একেক করে এবার জেনে নেয়া যাক সেসব কথা-
চুনের পানি ব্যবহার: চুনের পানিতে ডিম ডুবিয়ে রাখলে এর ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য প্রথমে একটি পাত্রে এক লিটার পরিমাণ পানি নিতে হবে। এর মধ্যে ১০০ গ্রাম লবণ দিয়ে পানি গরম করতে হয়। লবণমিশ্রিত পানি ঠান্ডা হলে এতে ২৫০ গ্রাম চুন দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। পাত্রটি একদিন রেখে দিলে দেখবেন এর নিচে তলানি পড়েছে। পাত্রটি না নেড়ে উপরের পরিষ্কার পানি আলাদা পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানিতে খাঁচাসহ ডিমগুলো কুড়ি মিনিট ডুবিয়ে তুলে ফেলুন। এবার ছায়ায় শুকিয়ে নিন। এভাবে বেশকিছু দিন ডিমের গুণাগুণ অটুট রাখা সম্ভব।
সরিষার তেল ব্যবহার: এ পদ্ধতির জন্য কেবল খাঁটি সরিষার তেল প্রয়োজন হয়। তেলের মধ্যে ডিমগুলো এক মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরে ডিম আলাদা পাত্রে স্থানান্তর করতে হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে ডিম বেশ কয়েকদিন ভালো থাকে। তবে ডিম হতে সরিষার কিছুটা ঝাঁজ আসতে পারে।
মিনারেল তেল ব্যবহার: রংহীন, গন্ধহীন এবং স্বাদহীন এ ধরণের মিনারেল তেলের মধ্যে ডিম ডুবিয়ে পরে শুকিয়ে রাখতে হয়। এর ফলে ডিমের ভেতরের জলীয় অংশ বাষ্পীভুত হতে পারে না। এজন্য প্রথমে একটি পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল রাখতে হবে। এর মধ্যে খাঁচাসহ ডিম কিছুসময় ডুবিয়ে পুণরায় তুলে নিন। এরপর ডিমগুলো আলাদা পাত্রে রেখে দিতে হবে। আধুনিক উপায়ে যন্ত্রের সাহায্যে ডিমের উপর মিনারেল তেল ভালোভাবে মালিশ করেও সংরক্ষণ করা যায়।
সোডায়াম সিলিকেট ব্যবহার: এ পদ্ধতির জন্য একটি পাত্রে পানি গরম করে পরে ঠান্ডা করতে হয়। এতে প্রতি নয় ভাগ পানির সাথে এক ভাগ সোডিয়াম সিলিকেট ভালোভাবে মেশাতে হবে। এবার ডিমের খাঁচাসহ পানির মধ্যে কুড়ি মিনিট ডুবিয়ে পুণরায় তুলে ফেলতে হবে। ডিমের গায়ে সিলিকেট পানি শুকিয়ে গেলে ডিমের ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে যাবে। এসমস্ত ডিম প্যাকেটজাত করে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হয়। এ পদ্ধতিতেও অনেক দিন পর্যন্ত ডিম ভালো রাখা যায়।
হাঁড়ি পদ্ধতি: ডিম সংরক্ষণের জন্য গ্রামাঞ্চলে ঘরের কাঁচা মেঝেতে গর্ত তৈরি করে এর মধ্যে একটি মাটির হাঁড়ি বসিয়ে চারদিকে কাঠকয়লা ভরাট করে দেয়। প্রতিদিন কয়েকবার কাঠকয়লা ভিজিয়ে দিলে হাঁড়ির মধ্যে বেশ ঠান্ডা অনুভব হয়। এভাবে হাঁড়ির মধ্যে ডিম রেখে মাটির সরা দিয়ে ঢেকে দিলে বেশ কিছুদিন ভালো থাকে। “নাহিদ বিন রফিক”