ডিম একটি বহুল ব্যবহৃত খাবার। স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা ভেবে অনেকে নিয়মিত ডিম খান, আবার কেউ কেউ স্বাস্থ্য আরো খারাপ হতে পারে ভেবে ডিম থেকে দূরে থাকেন। ডিমের যেমন রয়েছে পুষ্টিগুণ, তেমনি ডিম সম্পর্কে বেশ ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। এখানে ডিম সম্পর্কে ১০টি ভুল ধারণা আলোচনা করা হলো।
১. ভুল ধারণা: উচ্চ কোলেস্টেরলের লোকদের ডিম খাওয়া উচিৎ নয়
সত্য : বছরের পর বছর ধরে ডাক্তাররা বলে এসেছে যে, হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকি আছে এমন লোকদের উচ্চ-কোলস্টেরলের খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ। একারণে ২১১ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল (দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণের ৭০ শতাংশ) থাকার কারণে ডিমকে ‘যেসব খাবার খাব না’র তালিকায় রাখা হতো। কিন্তু এখন, বিজ্ঞান পরিবর্তন হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে, ডিমের মতো উচ্চ কোলেস্টেরলের খাবার প্রকৃতপক্ষে কোলেস্টেরলের রক্ত মাত্রাকে তেমন একটা প্রভাবিত করে না। আমাদের ব্লাড সিরাম কোলেস্টেরলকে প্রভাবিত করে এমন যা খাই তা হচ্ছে- স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট এবং সিম্পল সুগার, বলেন এমএনসি নিউট্রিশনের স্বত্ত্বাধিকারী এবং ডায়েটিশিয়ান মারজোরি নোলান কোন। প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচটি ডিম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি আছে এমন যে কারো জন্য নিরাপদ, তিনি বলেন।
২. ভুল ধারণা: পুরো ডিমের চেয়ে ডিমের সাদা অংশ স্বাস্থ্যকর
সত্য : আপনি হয়তো এতদিন ধরে ভেবে এসেছেন যে, ডিমের সাদা অংশ পুরো ডিমের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। অবশ্য এর পেছনে কারণ হচ্ছে, ডিমের সাদা অংশে শুধু ১৭ ক্যালরি থাকে, যেখানে পুরো ডিমে ৭২ ক্যালরি রয়েছে- এছাড়া ডিমের সাদা অংশে কোনো ফ্যাট থাকে না। কিন্তু এ গল্পে আরো কিছু রয়েছে, বলেন পেটি অ্যান্ড গেরি’স অর্গানিক এগসের মুখপাত্র এবং ডায়েটিশিয়ান কেরি গ্লাসম্যান। তিনি যোগ করেন, ‘ডিমের কুসুমের ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে ব্যালেন্সড ব্রেকফাস্টের জন্য ভালো। ফ্যাট আপনাকে খুব বেশি তৃপ্ত করে তোলে। যদি আপনি ডিমের কুসুম না খান, তাহলে অতৃপ্ত হতে পারেন। এছাড়া ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন ছাড়া তেমন কোনো পুষ্টি নেই, কিন্তু ডিমের কুসুমে ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি (যা খাবার উৎসে পাওয়া কঠিন) এবং কোলাইনের মতো পুষ্টি থাকে।’
৩. ভুল ধারণা : ডিমের সাদা অংশে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে
সত্য : উচ্চ-প্রোটিন ও নিম্ন-ক্যালরির জন্য ডিমের সাদা অংশ পরিচিত। তাই যদি আপনি প্রোটিন পাওয়ার জন্য ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে ডিম খান, তাহলে কিছু হারাবেন। মারজোরি বলেন, ‘ডিমের সাদা অংশে ১৭ ক্যালরি থাকে। তাই ২০ ক্যালরির কেনোকিছুতে আপনি কতটুকু প্রোটিন ও কত প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড পাবেন?’ ডিমের কুসুমসহ ডিম খান- তাহলে আপনি শুধু তৃপ্তিদায়ক ফ্যাট ও স্বাস্থ্যবর্ধক পুষ্টিই পাবেন না, আপনার ব্রেকফাস্টে প্রোটিন কনটেন্টও দ্বিগুণ হবে। ডিমের সাদা অংশে তিন গ্রাম প্রোটিন থাকে, যেখানে পুরো ডিমে থাকে ছয় গ্রাম।
৪. ভুল ধারণা: সাদা রঙের ডিমের চেয়ে বাদামী রঙের ডিম স্বাস্থ্যকর
সত্য : সাদা চালের চেয়ে বাদামী চাল ভালো, সাদা রুটির চেয়ে গমের রুটি ভালো, কিন্তু সাদা ডিমের চেয়ে বাদামী ডিম ভালো নয়। মারজোরি বলেন, ‘আমি কখনো ডিমের খোসার রঙ দেখে ডিমের পুষ্টিগুণ যাচাই করতে পরামর্শ দিই না।’ বিভিন্ন রঙের ডিমের সঙ্গে পুষ্টিগুণের সম্পর্ক নেই, কিন্তু জিনের রয়েছে- সাদা মুরগি সাধারণত সাদা ডিম পাড়ে, যেখানে লাল বা বাদামী মুরগি পাড়ে বাদামী ডিম, নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের ভিজিটিং ফেলো ট্রো বুই। বাদামী ডিমের দাম বেশি হওয়ার কারণ এই নয় যে তারা সাদা ডিমের তুলনায় স্বাস্থ্যকর, বরং বড় মুরগির ডিম বলে তাদের দাম বেশি- এসব মুরগির পালন খরচ বেশি।
৫. ভুল ধারণা: ব্যস্ত সকালের জন্য ডিম উপযুক্ত নয়
সত্য : অনেকে মনে করেন যে, সকালে ব্যস্ততায় ব্রেকফাস্টের আইটেম হিসেবে ডিম উপযুক্ত নয়। কিন্তু ডিম হচ্ছে এমন কিছু যা সকালের রুটিনে সম্পূর্ণরূপে ফিট হয়ে যায়। তাই সকালে ব্রেকফাস্ট হিসেবে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অজুহাত ধোপে টিকবে না। গ্লাসম্যান বলেন, ‘খাওয়ার জন্য ডিম প্রস্তুত করা খুব সহজ। আপনি শুধু ডিমটি ফাটবেন। আমি কফি খেতে খেতে তা করি।’ আরো সহজ অপশনের জন্য ছুটির দিনে ডিমের কেক বানাতে পারেন অথবা অনেকগুলো ডিম সিদ্ধ করে রাখতে পারেন, যার ফলে সারা সপ্তাহ ধরে আপনি রেডিমেড ডিম খেতে পারবেন। আপনি মাইক্রোওয়েভে স্ক্র্যাম্বলড এগসও তৈরি করতে পারেন অথবা সিদ্ধ ডিম কিনে রাখতে পারেন।
৬. ভুল ধারণা: যেসব মুরগি খাঁচামুক্ত ডিম পাড়ে তারা খোলা পরিবেশে থাকে
সত্য : আপনি হয়তো ভাবছেন যে, কেজ-ফ্রি বা খাঁচামুক্ত মুরগি অবশ্যই কোনো খাঁচায় সীমাবদ্ধ থাকবে না- কিন্তু খাঁচামুক্ত লেবেলের মানে আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নাও হতে পারে। গ্লাসম্যান বলেন, ‘খাঁচামুক্ত লেবেলের মানে হচ্ছে কোনো খাঁচার বাইরে তাদের কিছু বিচরণ অধিকার রয়েছে, কিন্তু এতই ছোট স্পেস যে তা উল্লেখ করার মতো নয়।’ তিনি এর পরিবর্তে অর্গানিক, ফ্রি-রেঞ্জের ডিম খুঁজতে সুপারিশ করছেন। ফ্রি-রেঞ্জের মুরগিরা শুধুমাত্র খাঁচার বাইরেই থাকে না, তাদের ফার্মের সবখানে বিচরণ করার স্বাধীনতাও রয়েছে।
৭. ভুল ধারণা: প্রাকৃতিক হিসেবে হরমোনমুক্ত ডিম বেশি ভালো
সত্য : এমন নয় যে আপনি হরমোনমুক্ত ডিম এড়িয়ে চলবেন, কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে এ লেবেলটি মার্কেটিং কৌশলের একটি অংশ। গ্লাসম্যান বলেন, ‘লেবেল হরমোনমুক্ত বলুক কিংবা না বলুক, সকল ডিমে হরমোন থাকে না।’ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত হওয়া, কারণ কিছু মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
৮. ভুল ধারণা: ফ্রিজে ডিমের তাকেই ডিম রাখা উচিৎ
সত্য : ফ্রিজের দরজায় ডিমের তাকে ডিম রাখলে তাড়াতাড়ি ডিম নেওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ডিম রাখার জন্য ফ্রিজের দরজা আদর্শ জায়গা নয়। মারজোরি বলেন, ‘যেহেতু ফ্রিজের দরজা বারবার খোলা ও বন্ধ করা হয়, তাই তাপমাত্রার প্রচুর পরিবর্তন হয়।’ এটি ডিমের জন্য ভালো নয়। ফ্রিজের ভেতর পেছনে ডিম রাখলে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি থেকে ডিমকে রক্ষা করা যাবে, তাই আপনার ডিম দীর্ঘসময় সতেজ থাকবে, তিনি বলেন।
৯. ভুল ধারণা : মেয়াদের তারিখে দেখে ডিম ব্যবহার করা বা ফেলে দেওয়া উচিৎ
সত্য : বিক্রেতার উল্লেখিত তারিখের পরও আপনার ডিম ভালো থাকবে- যদি আপনার ডিম না ফাটে ও ফ্রিজের মধ্যে থাকে, তাহলে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরও তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে না। যদি আপনার মনে সন্দেহ জাগে, তাহলে ডিমের গুণ টেস্ট করতে এক গ্লাস পানিতে ডিম রাখুন- যদি ডিমটি ডুবে তলায় চলে যায়, তাহলে এটি এখনো ভালো আছে, কিন্তু ডিম নষ্ট হয়ে গেলে ভেসে থাকবে।
১০. ভুল ধারণা: মুরগির ডিম হিমায়িত করা যায় না
সত্য : যদি আপনার ডিম মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের কাছাকাছি চলে আসে এবং আপনার এসব ডিম শিগগির খাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে, তাহলে এসব ডিম ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এসব ডিমের লাইফটাইম বাড়ানোর একটি উপায় রয়েছে: ডিমকে ফেটে আইস কিউব ট্রে অথবা অন্যকোনো ফ্রিজার-সেইফ কন্টেইনারে রাখুন। যখন রান্না করবেন, ডিমকে ডিফ্রস্ট বা বরফমুক্ত করুন। মারজোরি বলেন, ‘যদি আপনি সতর্ক থাকেন তাহলে এক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।’ যদিও তিনি নিজের জন্য এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন না। তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন