ডিম সিন্ডিকেট: যশোরে দু’মাসের ব্যবধানে সাড়ে ৪ টাকার ডিম ৯ টাকা

516

ডিম

তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর সংবাদদাতা: মানুষের বহুল অংশে আমিষের চাহিদা পূরণ করে ডিম। নিত্যদিন নিম্ন ও মাধ্যবিত্ত মানুষের আমিষের যোগান দাতা এ ডিম। অথচ দেড় থেকে দু’ মাসের ব্যবধানে সেই ডিমের দাম দিগুণেরও বেশি হয়েছে।

ক্ষুদ্র ডিম ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীরা বলছে, সেন্ডিকেটের কারণে এ ডিমের বাজার অস্থির রয়েছে। যে কারণে নিত্যা প্রয়োজনীয় এ ভোগ্য পণ্যটির বাজার বেশামালে রূপ নিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর শহরসহ দক্ষিণবঙ্গের বাজারে এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আছে শেখ আফিল উদ্দিনের মুরগির খামারের ডিম। মাঝে মধ্যে পাবনাসহ দক্ষিণবঙ্গের ডিম যশোরে প্রবেশ করলে ডিমের দাম কিছুটা কমে। সেই সময়ে বাজারটি ধরে রাখাতে আফিল উদ্দিন ফার্মের ডিমের দামও কমিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে দক্ষিণবঙ্গের বাজারে অন্যা কোন জায়গার ডিম নিয়ে এসে ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারে না।
অনেক ছোট ব্যবসায়ী এ ডিমে ব্যবসা করতে গিয়ে পথে বসেছে। সরকারি কোন বাজার তদারকি না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছে।

বর্তমানে বাজারে প্রতিটি লাল পোট্রি মুরগির ডিমের খুচরা মূল্য সাড়ে ৮টা থেকে ৯ টাকা। প্রতিটি সাদা পোট্রি মুরগির ডিমের খুচরা বাজারমূল্য ৮ টাকা থেকে সাড়ে ৮ টাকা। প্রতিটি দেশি মুরগির ডিমের খুচরা বাজারমূল্য ১০ টাকা। প্রতিটি দেশি হাঁসের ডিমের খুচরা বাজারমূল্য সাড়ে ১০ টাকা। প্রতিটি কোয়েলের ডিমের খুচরা বাজারমূল্য আড়াই টাকা হারে বিক্রয় করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাজারে হাঁস-মুরগির খাবারের দাম খুব একটা না বড়লেও প্রতিদিন ডিমের দাম বেড়েই চলেছে। হাঁস-মুরগির খাবারের বস্তাপ্রতি ১০ টাকা বাড়লেও ডিমের হালি প্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বাড়ে।

রেল গেটের দোকান ব্যবসায়ী ফরাদ জানান, বড় বড় ডিম ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে এ ডিমের বাজারটিকে ধ্বংস করেছে। এখন পুরো বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করেছে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সেন্ডিকেট। এসব সেন্ডিকেট লাখ লাখ ছোট ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়েছে। আজ যদি প্রতিটি ডিমের পাইকারি বাজার মূল্য সাড়ে ৮ টাকা হলে আগামীকাল সেই ডিমের দাম ৮ টাকা করা হচ্ছে। এতে দোকানদার ও ক্রেতা উভয় ক্ষতির মুখে পড়ছে।

যে কারণে দোকানে ডিম তুলতেও ভয় করছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

ডিম ব্যবসায়ী স্বজল আবেগপ্লুত কণ্ঠে বলেন, এ ডিম ব্যবসা করতে গিয়ে আমি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার ক্ষতি করেছি। আমি পাবনা ও সাতক্ষীরা থেকে ডিম নিয়ে এসে বাজারের বিভিন্ন জায়গার দোকানদারদের দিতাম। যখন বাজারে বাইরের ডিম ঢোকে তখন আফিলের ফার্মের ডিমের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে আমরাও সেই সময়ে ক্ষতিসাধন করে দোকানদারদের কাছে ডিম বিক্রি করি। এক পর্যায়ে নিজের মূলধন খুয়ে ফেলি। এমনকি দায়-দেনা হয়ে এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হয়। শুধু আমি নয় এলাকার কয়েক হাজার ছোট মুরগির খামারিও ছোট ব্যবসায়ীরা বড় খামার সেন্ডিকেটের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।

আমি এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে পরিবারটাকে কোন রকম বাছিয়ে রেখেছি বলে জানান তিনি ।

আব্দুল কুদ্দুস, সিরাজুল ও সফিসহ একাধিক ডিমের ডিলার ব্যবসায়ী জানান, বড় বড় শিল্পপতিদের কাছে এখাত জিম্মি হয়ে পড়েছে। আগে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট মুরগির খামার ছিল। তারা নিজেরা নিজেদের শ্রম দিয়ে ডিম উৎপাদক করতো ও বাজার জাত করতে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেসব খামারগুলো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারটা এখন গুটিকতক ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। তারা বাজারটাকে যেভাবে চালাবে বাজার সেভাবে চলবে। তারা যদি মনে করে আজকে প্রতিটি ডিমের বাজার দার ৫ টাকা হবে তাহলে ৫ টাকা। যদি মনে করে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা হবে তাহলে ১০ টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষ ডিম কিনে খেতে হবে।

দক্ষিণবঙ্গের সব থেকে বড় ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রোর (ডিম বিভাগের ম্যানেজার) মাজহারুল আলমের কাছে বাজারে ডিমের দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৯ টাকা থেকে ১০ টাকা ডিমের দাম খুব একটা বেশি নয়। ডিমের দাম প্রতিদিনই উঠানামা করে। আমরা সারা দেশে ডিমের বাজারের সাথে সমন্বয় করে ডিম বাজারজাত করি। প্রতিদিন সকালে ডিম উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্ম, প্রটিন ফার্মসহ দেশের বড় বড় ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ফোন করে ডিমের বাজার সম্পর্কে জানি। সেই অনুপাতে আমরা ডিমের বাজার নির্ধারণ করি।”

মুরগির খাবারের দাম বাড়ার কারণেও ডিমের দাম বাড়ছে বলে তিনি জানান। সূত্র: এনবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন