ডেইরি ফার্ম বদলে দিয়েছে জয়পুরহাটের আমিরুলের জীবন

395

2017-09-13_4_896158

টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারেননি। এক সময় তিন বেলা ঠিক মত খাবারও জুটতো না। নিজের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করার সেই অসাধ্য সাধন করেছেন কালাই উপজেলার এক ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামারী আমিরুল ইসলাম।

তিনি এখন দৈনিক প্রায় ৪০ লিটার দুধ বিক্রির আয় দিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। মাথা গোঁজার জায়গা না থাকলেও বাড়ি করার জন্য ১২ শতাংশ ও আবাদি জমি কিনেছেন ৫০ শতাংশ। এ ছাড়াও ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন নানা ফসল। সংসারে বর্তমানে কোন অভাব নেই আমিরুলের।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার দুরুঞ্জ গ্রামের আব্দুল মোমেনের ছেলে আমিরুল ইসলাম জানান, বাবা- মা’য়ের পাঁচ সন্তানের সংসারে অভাব অনটনের কারণে তৃতীয় শ্রেণিতেই লেখাপড়া থেমে যায়। শিশু বয়সেই বাবার সাথে ধরতে হয় সংসারের হাল। এমনই এক পরিস্থিতিতে কম বয়সে বিয়ে করলে শুরু হয় জীবনের আরেক যুদ্ধ। তিন বেলা খাবার জোগার করতেই যেখানে হিমশিম, সেখানে সংসারের বোঝা আরও কঠিন হয়ে পড়ে । নিজের কষ্টের জমানো কিছু টাকা দিয়ে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে দুই/এক মণ ধান কিনে বাড়িতে এনে সিদ্ধ-শুকান করে চাল তৈরি করেন। আর সেই চাল আবার বিভিন্ন হাট-বাজরে বিক্রি করে, যা আয় হত তা দিয়ে কোন মতে চলতো সংসারের খরচ।

এরমধ্যেই তাদের সংসারে জন্ম নেয়া দুই সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। এমন এক সময় অন্যের বাড়িতে টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার মাধ্যমে জানতে পারেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সম্পর্কে। পরে তিনি কালাই উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি গাভী কিনে দুগ্ধ খামারের কার্যক্রম শুরু করেন ২০০০ সালে। এরপর ৮০ হাজার এবং বর্তমানে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে দেড় লাখ টাকা। বর্তমানে চারটি সংকর জাতের গাভী রয়েছে খামারে।

এ দুগ্ধ খামারের আয় থেকে সংসারের পরিবর্তন শুরু হয়। কিনেন ১২ শতাংশ বাড়ি করার জায়গা এবং ধানি জমি ৫০ শতাংশ । পাশাপাশি ৬ বিঘা জমিও বর্গা নেন। ধান চাষের পাশাপাশি সবজি চাষের বিষয়ে মনোযোগ দেন তিনি। স্ত্রী ও শুরু করেন হাসঁ, মুরগি, ছাগল ও ভেড়া পালন। বর্তমান তাদের সংসারে কোন অভাব নেই।

বড় ছেলে বেসরকারি স্কুলে নবম শ্রেণীতে এবং মেয়ে মাদরাসা লাইনে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তিনি ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনার খরচ সহ সংসারে অনেক জিনিস পত্রও কিনেছেন। প্রতিদিন প্রায় ৪০ লিটার দুধ বাজারে বিক্রি করেন প্রায় ১৬শ টাকা। তার পরিবারের সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন তিনি আয় করেন প্রায় এক হাজার টাকা। এছাড়া খামারে থাকা গরুর বর্তমান বাজার মূল্যও প্রায় ১০ লাখ টাকা।

অতীতের কথা স্মরণ করে আমিরুল ইসলাম বলেন, দুগ্ধ খামার দিয়ে এখন আমার সংসার আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমার সংসারের সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন গাভীর দুধ বিক্রি করে আয় করছি প্রায় এক হাজার টাকা। যে কোন মানুষ তার শ্রম আর দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে দারিদ্রতাকে জয় করতে পারে বলে মনে করেন আমিরুল ইসলাম।

কালাই শাখা কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওবাইদুর রহমান বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সহযোগিতা গ্রহণ করে দুগ্ধ খামার দিয়ে আমিরুল ইসলাম দারিদ্রতাকে জয় করেছেন।

দুগ্ধ খামার পরিচালনা করার জন্য আমিরুল ইসলামকে সব ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে বলে জানান কালাই উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জহুরুল ইসলাম। সূত্র: বাসস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম