ড্রাগন চাষ করে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছেন জয়পুরহাটের শিপলু, বছরে আয় ২০ লাখ

191

এক বাগানেই সাত প্রজাতির ড্রাগন ফল। কোনোটির ওপরের রং গোলাপি আবার কোনটির হলুদ। এসব প্রজাতির ড্রাগন সব রকমের মাটিতে সহজেই চাষ করা সম্ভব। বিদেশি প্রজাতির এই ড্রাগন ফলের চাষ করে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছেন জয়পুরহাটের হেদায়েত হোসেন শিপলু।

হেদায়েত হোসেন শিপলুর (৪১) বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের কোকতারা গ্রামে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পাশাপাশি গ্রামে কৃষি খামার করার উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেন ড্রাগন চাষ।

হেদায়েত হোসেন শিপলুর বাগান ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। ড্রাগন ফল ছাড়াও তার বাগানে মাল্টা, পেয়ারা, বারোমাসি আম, লেবু, ররই, কলাসহ কয়েক প্রজাতির ফল রয়েছে। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। প্রতি গাছে ঝুলছে পাঁচ থেকে সাতটি করে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল। এছাড়া চীনা হাঁস, রাজহাঁস, গাড়ল ও মাছ আছে তার খামারে। তিনি এই খামারটির নাম দেন ‘মায়ের দোয়া অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড ফিশারিজ’।

বাগানে কথা হয় বাগানের শ্রমিক জাপানুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ড্রাগনের ছোট ডিবি কেটে নিয়ে চারা করি। চারাগুলো একটু বড় হলে পূর্ণাঙ্গভাবে রোপণ করা হয়। ড্রাগন গাছে রাতে ফুল ফোটে, তখন ফুলে পরাগায়ন করা হয়। এতে ফল বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া পোকামাকড় ও পাখির উপদ্রব থেকে ফলকে সুরক্ষিত রাখতে ড্রাগন ফল পলিব্যাগের ভেতরে রাখা হয়।

বাগানের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বাগানে ১৫ থেকে ২০ জন মাসিক বেতনে কাজ করি। বাগানে মাল্টা, পেয়ারা, লেবু, আম ও ড্রাগন ফল আছে। এগুলো দেখাশোনা ও পরিচর্যা করি।

বাগান পরিচালনা করেন হেদায়েত হোসেন শিপলুর ভগ্নিপতি তাশকেরুল ইসলাম তুষার ও শ্যালক তুহিন ইসলাম। কথা হয় তাশকেরুল ইসলাম তুষারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই সমন্বিত খামার ২০২১ সালে শুরু করা হয়। ধাপে ধাপে অনেক প্রজাতির ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। ড্রাগনের চাষ করে আমরা সফল। যেহেতু ড্রাগন বিদেশি ফল, অনেকেই শঙ্কা করছিল এই গাছে ফল হবে কী না। তারপরও আমরা ড্রাগন ফলের চাষ করি। এখন ফলন ভালোই হয়েছে। থাইরেড, ভিয়েতনামি রেড, বারি ওয়ান ড্রাগন, ভিয়েতনামি হলুদ, ভিয়েতনামি সাদা, ভিয়েতনামি গোলাপি ও আমেরিকান হলুদ ড্রাগনসহ সাত প্রজাতির ড্রাগন চাষ হয় এ বাগানে।

হেদায়েত হোসেন শিপলু বলেন, করোনার পর চাকরির পাশাপাশি কিছু একটা করতে চাচ্ছিলাম। সেই থেকেই ২০২১ সালে আমার পরিচিত আমেরিকান এক স্যারের (মোহাম্মদ জুলফিকার) অনুপ্রেরণায় কৃষি খামার গড়ে তুলি। বর্তমানে এ বাগানের পরিধি ১২ একরের মতো। খামারটি করতে প্রথম অবস্থায় ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিছু টাকা নিজে জমিয়ে ছিলাম। বাকি বেশিরভাগ টাকা ব্যাংক থেকে লোন নেই।

তিনি আরও বলেন, বাগান শুরুর এক বছর পর প্রায় সাত লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। যার বেশির ভাগ টাকা আসে ড্রাগন ফল থেকে। এবার ড্রাগনের ফলনও ভালো হয়েছে। বছরের এই সাত-আট মাসে ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। বাকি সময়ে আরও ১০ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করি। খামারে ২০ জনের মতো কর্মচারী কাজ করেন। এতে বেকার যুবকেরা সময় দিতে পারছেন। তাদের একটা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এটি দেখে বেকার তরুণরাও কৃষি খামার করতে পারে। এতে তরুণরা সফলতা পাবেন বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ড্রাগন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের চাষ হতো। পরে এটি অন্যান্য দেশে চাষ শুরু হয়। একটি পূর্ণ বয়সের ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। ড্রাগনের গাছ সহজে মারা যায় না। কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। আবার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না।

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, হেদায়েত হোসেন শিপলুকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। তাছাড়া তার বাগানে মিশ্র ফলের চাষ আছে। উপজেলায় তার বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে বাগানটি করেছেন। এছাড়াও কোনো তরুণ উদ্যোক্তা যখন নতুন বাগান করে তখন তাদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি।