আল আমিন মণ্ডল, বগুড়া থেকে: কৃষিনির্ভর উত্তরবঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ হয়ে আসছে। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ ও উৎপাদন হয়। বিশেষ করে বগুড়ার কৃষকরা আলু, মরিচ, মুলা, লাউ, করলা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বরবটি, ফুলকপি, বাধাঁকপি, ঢ়েঁড়স সবজি চাষ করে আসছেন। এখানের সবজির স্বাদই আলাদা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা’সহ সারা দেশে সবজির চাহিদা পূরণ করে চলছে এবং দেশের বাইরেও এখন রপ্তানি হচ্ছে।
বগুড়ার গাবতলী নাড়–য়ালা ইউনিয়নের আলতার বাজার, মধ্যকাতুলী, জংবাংলা, তেতুলগাছি, মেঘাগাছা ও বগুড়া সদরের সন্ধাবাড়ী, মানিকচক, পাঁচবাড়ীয়া, কদিমপাড়া, সাবগ্রাম, চালিতাবাড়ী এবার উল্লেখ্যযোগ্য হারে ঢেঁড়সের চাষ হয়েছে।
স্থানীয় জাতের ফলন কম হওয়ায় এবার কৃষক লাল তীর সীড লি. উদ্ভাবিত ও বাজারজাতকৃত হাইব্রিড ঢেঁড়স ‘আশা’ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কৃষকের মাঠজুড়ে এখন শুধু আশা ঢেঁড়স ক্ষেত। এ বছরে বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো খুব খুশি। ফলে লাল তীর সীড লি. হাইব্রিড ঢেঁড়স আশা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
গাবতলী মধ্যকাতুলী গ্রামের আর্দশ চাষি হেলাল উদ্দিন ২০ শতাংশ জমিতে এবার হাইব্রিড ঢেঁড়স ‘আশা’ বীজ বপন করেন। বীজ বপনের ৪৫ দিন পর প্রথম ফল সংগ্রহ করেন এবং প্রথম দিকে সে প্রতিমণ ঢেঁড়স ২২শ টাকা থেকে ২৩শ টাকায় পাইকেরি দরে বিক্রি করেন। বীজ, সার, বালাইনাশক ও আন্তঃপরিচর্যাসহ মোট ১২ হাজার ৫শ টাকা ব্যয় হলেও এ পর্যন্ত তিনি ৬০ মণ ঢেঁড়স বিক্রি করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি আরো ৬০ হাজার টাকা ঢেঁড়স বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ফলে আশা ঢেঁড়স এর সুখ্যাতি এখন কৃষকদের মুখে মুখে।
তিনি বলেন, লাল তীর সীড ‘আশা’ জাতটি খুবই ভালো। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন ৪৫ দিন বয়সে ফল পাওয়া যায়। গিট ঘন ও প্রতি গিটেই ফল ধরে তাই ফল উঠাতে ভাঙে না। ভাইরাস নাই ও মাঝারি আকারের হওয়ায় বাজারে নিয়ে গেল সবার আগে বিক্রি করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার নাড়ুয়ামালা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গোফফারের সভাপত্বিতে লাল তীর সীড লিমিটেড বগুড়া আঞ্চলিক বিপনন কার্যালয় আয়োজনে গাবতলী মধ্যকাতুলি গ্রামে হাইব্রিড ঢেঁড়স আশা প্রদর্শনী ও সফল মাঠ দিবস পালিত হয়। মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লাল তীর সীড লিমিটেড এক্সিকিউটিভ কো-অর্ডিনেটর ও বাংলাদেশে ধান এন্ড পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. ফিরোজ শাহ শিকদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লাল তীর সীড লি. ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ট্রেনিং) ও খামারবাড়ী ঢাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক ডাইরেক্টর কৃষিবিদ বসির উদ্দিন আহমেদ, লাল তীর সীড লি.এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সেলস কৃষিবিদ জহির আহমেদ, লাল তীর সীড লি. ডিভিশনাল ম্যানেজার (নর্থ ওয়েষ্ট) শফিকুর রহমান, গাবতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মেহেদী হাসান, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন।
লাল তীর সীড লি.এর ম্যানেজার পন্য উন্নয়ন ও রিটেনলার ট্রেনিং জহুরুল ইসলামের উপস্থাপনায় আরো বক্তব্য রাখেন ম্যানেজার পন্য উন্নয়ন এমদাদুল হক, রিজিওনাল ম্যানেজার আবু রায়হান, বিডি বগুড়ার এরিয়া ম্যানেজার মহিবুল্লাহ, এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার আব্দুস সালাম, অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার ফিনান্স অ্যান্ড একাউন্টস জাকির হোসেন, সেলস অফিসার আকবর আলী, ইকবাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী হায়দার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহারিয়া হাসান, জাকিয়া সুলতানা, ইউপি সদস্য মাহমুদুন্নবী অটল, মোয়াজ্জেম হোসেন ও বীজবিক্রেতা রনজু প্রমুখ।
এর আগে অতিথিরা হাইব্রিড ঢেঁড়স ‘আশা’ ক্ষেত পরিদর্শন করেন এবং সফল কৃষকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। উল্লেখ্য, এ বছরে গাবতলী উপজেলায় প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে ঢেঁড়স চাষ করা হয়েছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন