তাঁরাবাইম দেশীয় মাছের মধ্যে স্বাদে গুনে অতুলনীয় একটি মাছ। আগে এক সময় খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও জলাশয়ে প্রচুর পাওয়া যেত। কালক্রমে অন্যান্য দেশীয় মাছের মত তাঁরাবাইমও প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বর্তমানে এই মাছের কৃত্রিম পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে। আজ আমরা জানবো তাঁরাবাইম মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে-
জেনে নিন তাঁরাবাইম মাছের চাষ পদ্ধতিঃ এরা মাটির গভীরে গর্ত করে থাকে। অনেক সময় মাটির ১/১.৫ ফুট গভীরে পর্যন্ত এই মাছ পাওয়া গিয়েছে। কেউ যদি একক চাষ করতে চান তাহলে শতকে ৫শ থেকে ৬শ পিচ দিতে পারেন। তবে আমার মতে সবচেয়ে ভাল হয় কার্পজাতীয় মাছের সাথে শতকে ৮০ থেকে ১০০ পিচ মাছ মজুদ করলে।
পুকুর প্রস্ততিঃ পুকুর টি অবশ্যই এঁটেল দোঁআশযুক্ত মাটি, কাঁদার পরিমান ৮/১২”, আধো রোদ আধো ছাঁয়াযুক্ত, ৬/৮ ফুট গভীর হতে হবে। প্রথমে শুকিয়ে পুকুরের পাড় মেরামত এবং গর্ত থাকলে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। তারপরে শতকে ১ কেজি চুন ও ৩ কেজি জৈবসার দিয়ে হালকা একটা নিড়ানি দিবেন। ৫/৭ দিন পর পানি প্রবেশ করাবেন। পানি প্রবেশের ৩/৫ দিন পর শতকে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫ গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করবেন। সার প্রয়োগের ৫/৭ দিন পর আঙ্গুল সাইজেরপোনা মজুদ করবেন।
খাবার ব্যবস্থাপনাঃ একক চাষ হলে তাঁরাবাইমের জন্য কমপক্ষে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ হাতে তৈরী অথবা ডুবন্ত খাবার লাগবে। খাবার গুলো অবশ্যই কোন পাত্রে বা ট্রেতে করে দিতে হবে। মিশ্রচাষ হলে খাবার নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হবেনা, ডুবন্ত বা হাতে তৈরী ২৪/২৬% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিলেই হবে। তবে খাবার গুলো অবশ্যই সন্ধা এবং ভোর বেলায় দিতে হবে।
পরিচর্যাঃ তাঁরাবাইম গর্ত, বাঁশ ও গাছের ফাক ফোকরে থাকতে পছন্দ করে। তাই পুকুরে কিছু মাটির হাঁড়ি, বড় সাইজের প্লাস্টিকের বোতল, ছিদ্রযুক্ত বাঁশ ফেলে রাখবেন। গরমকালে পুকুরের ১০% জায়গায় ঘেরাও দিয়ে কিছু কচুরি পেনা দিয়ে রাখবেন।
রোগ-বালাইঃ দেশীয় মাছ বলেই এরা নিজেকে আমাদের পরিবেশের সাথে সম্পূর্ণ মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তাই রোগ-বালাই তেমন নেই বললেই চলে। কিন্ত কৃত্রিম পোনার আচরণ কি রকম হবে সেটা অবশ্যই দেখতে হবে। কোয়ালিটি সম্পন্ন পোনা উৎপাদন করতে না পারলে অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হবে।
উল্লেখ্য, সবকিছু ঠিক থাকলে ৭/৮ মাসে প্রতিটি মাছের গড় ওজন ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।