তেলাপিয়া মাছের মাধ্যমে কোনভাবেই করোনাভাইরাস ছড়ায় না বলে জোর দাবি জানিয়েছে “বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশন”। “বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশন” এর প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর সাবেক মহাপরিচালক ডঃ মোঃ গোলাম হোসেন এর স্বাক্ষরিত akkbd.com কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা সাম্প্রতিক কিছু নেতিবাচক প্রচার দেখেছি যে, তেলাপিয়া করোনা ভাইরাসকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। তাই অনেক ভোক্তা স্থানীয় বাজার থেকে তেলাপিয়া মাছে কিনছেন না কিংবা মাছ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলস্বরূপ, তেলাপিয়া মাছ চাষীরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পারায় দিনে দিনে হতাশ হয়ে পড়ছে এবং এই মাছ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে শীঘ্রই বাংলাদেশে তেলাপিয়া চাষে ধস নামবে। অনেক তেলাপিয়া চাষী এবং ব্যবসায়ী এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন। এই নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) এর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশের সর্বসাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করছি তেলাপিয়া মাছের মাধ্যমে কোনভাবেই করোনভাইরাস ছড়ায় না। পাশাপাশি এই ধরণের নেতিবাচক প্রচারণা থেকে সকলকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়. ধারণা করা হয় ২০১৯ এর শেষের দিকে “নভেল করোনাভাইরাস বা COVID-19” বাদুড় জাতীয় একটি বন্য পাখির কাছ থেকে আত্মপ্রকাশ করে এবং অন্য স্থলপ্রাণীতে স্থানান্তরিত হয়, কোনভাবেই মাছের মতো জলজ প্রাণীর কাছ থেকে নয়। সুতরাং মানুষ মাছ দ্বারা প্রথমে করোনাভাইরাস এ সংক্রমিত হয়েছিল এই ধরনের কোন প্রমান কোথাও পাওয়া যায়নি। বর্তমানে এই নভেল করোনাভাইরাসটি চীন, কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেনসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। এটি এখন অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল ফ্লু হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে যা কেবলমাত্র মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া স্প্যানিশ ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু কিংবা সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস জলজ প্রাণীর মতো কোনও মাছ দ্বারা এ জাতীয় ভাইরাল ফ্লুগুলি সংক্রমণিত হয়েছে ঐতিহাসিকভাবে এর কোন প্রমাণ নেই। অতএব, তেলাপিয়া মাছ কখনও নভেল করোনাভাইরাস বা COVID-19 বাংলাদেশে কিংবা বিশ্বের অন্য কোথাও সংক্রমণের কারণ হিসেবে পরিগণিত হওয়ার কোন ভিত্তি নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তেলাপিয়া বাংলাদেশের কার্প এবং পাঙ্গাসের পরে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের আরও অনেক নেতৃস্থানীয় দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মাছ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় ৮ টি তেলাপিয়া উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে (চীন ও ইন্দোনেশিয়ার পরে) তৃতীয় এবং বিশ্বে (চীন, মিশর ও ইন্দোনেশিয়ার পরে) চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বর্তমান তেলাপিয়া উৎপাদন ৪ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি এবং দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১০% যা দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। তেলাপিয়া মাছ মানুষের প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টগুলির একটি স্বাস্থ্যকর উৎস। সংক্রামক করোনাভাইরাস বা COVID-19 রোগের মহামারী প্রতিরোধের জন্য এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উল্লেখিত প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মাছ হিসাবে বাংলাদেশের মানুষদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আরও বেশি তেলাপিয়া মাছ গ্রহণ করা উচিত।
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩১মার্চ২০