বাংলাদেশে তেলাপিয়া মাছের একটি নতুন রোগ শনাক্ত ও দমন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মলিকুলার পদ্ধতিতে রোগটির জীবাণু শনাক্ত ও ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে রোগটির নিরাময় কৌশল বের করেছেন।
তেলাপিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন মাছ। গিফট তেলাপিয়া জাতের উদ্ভাবন এবং মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ পদ্ধতির সম্প্রসারণের কারণে বিগত প্রায় এক দশক যাবত দেশে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা দেশের জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তেলাপিয়া চাষের সাথে বর্তমানে দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠি জড়িত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশকিছু রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে তেলাপিয়া মাছ চাষীগণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ এবং ভাদ্র মাসের তীব্র গরমের সময় তেলাপিয়া মাছে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরা রোগগুলোর কারণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মলিকুলার পর্যায়ের গবেষণায় Enterococcus faecalis নামক নতুন একটি ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা হয়েছে। এটি সনাক্তকরণে 16S rDNS sequence homology এবং phylogenetic analysis পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে মাছের ব্যাপক মৃত্যু ঘটে। এই প্যাথোজেনের আক্রমণে আক্রান্ত মাছের চোখ ঝাপসা হয়ে যায় ও কোটর থেকে বের হয়ে আসে, লেজ ক্ষয় হয়ে যায়, বিভিন্ন পাখনার গোড়ায় রক্তক্ষরণ হয়, মাছ শ্বাসকষ্টে ভূগে এবং মারা যায়।
উক্ত প্যাথোজেনটি তেলাপিয়ার পাশাপাশি শিং ও মাগুরজাতীয় মাছেও রোগ সৃষ্টি করতে পারে। শুক্রবার (১৭ জুন) উদ্ভাবনটির বিষয়ে Nature Group প্রকাশিত বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী Scientific Reports–এ Molecular Identification of Multiple Antibiotic Resistant Fish Pathogenic Enterococcusfaecalis and their Control by Medicinal Herbs (https://www.nature.com/articles/s41598-017-03673-1) শিরোনামে এ নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা তেলাপিয়া মাছে Enterococcus faecalis নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এক ধরণের নতুন রোগ এদেশে প্রথমবারের মতো সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি এবং পলিমারেজ চেইন রিয়েকশন পদ্ধতির মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছি। দুই ধরণের ঔষধী গাছের নির্যাস ব্যবহার করে রোগটির প্রতিরোধ এবং প্রতিকার পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছি। আমাদের গবেষণা তেলাপিয়া মাছের এ ধরণের রোগ শনাক্ত ও দমন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত মলিকুলার কৌশলটি তেলাপিয়া ও অন্যান্য মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ শনাক্ত করতে কাজে লাগবে। এছাড়া স্থানীয় ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস মাছের রোগ দমনে সহজ, সস্তা ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে মাছ চাষীদের উপকারে আসবে বলে মনে করি। গবেষণা কাজটি মুনতাসির রহমান নামে বায়োটেকনোলজি বিভাগের একজন এমএস ছাত্র সম্পন্ন করেছেন। IDRS-BFRI-এর একটি কনট্রাক্ট প্রকল্প এবং বিশ্ব ব্যাংক এর উপ-প্রকল্প HEQEP-CP#২০৭১-এর আংশিক অর্থ সহায়তায় গবেষণা কাজটি পরিচালিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
এগ্রিনিউজ২৪.কম
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪ডিসেম্বর২০২০