পোল্ট্রির মতো বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালনের লোভনীয় সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। ভেড়া পালন অন্যান্য প্রাণির চেয়ে লাভজনক। তুলনামূলক কম পুঁজিতে গড়ে তোলা ৩০টি ভেড়ার একটি খামারে বছরে আয় ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা। বিদেশে ভেড়ার মাংস ও পশমের চাহিদা অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানিরও প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
দেশের উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে খাপ খাইয়ে একটি ভেড়ি বছরে ২ বার এবং প্রতিবারে ২ থেকে ৩টি বাচ্চা দেয়। ছাগলের চেয়ে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং বাচ্চার মৃত্যুর হারও অত্যন্ত কম। জাতীয় আয় ও সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের মধ্যে ৪র্থ স্থান অধিকারকারী ভেড়া অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু।
প্রতিকুল পরিবেশে শুকনা খড় এবং শস্যের অবশিষ্টাংশ খেয়েও জীবন ধারণ করতে পারে। খামার পরিচালনায় খাদ্য খরচ অনেক কম। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ভেড়ার ১৫ থেকে ২০ কেজি হতে পারে। প্রতিটি ভেড়া থেকে বছরে গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি পশম পাওয়া যায়। যা দিয়ে উন্নতমানের শীতবস্ত্র নির্মাণ করা যায়। ভেড়া উৎপাদন বাড়ার হার শতকরা ১২ ভাগ। যা গরু, ছাগল ও মহিষের চেয়ে অনেক বেশি।
এদের বাসস্থানের খরচও কম। নরম, রসালো ও সুস্বাদু ভেড়ার মাংসে আমিষের পরিমাণ গরু ও ছাগলসহ অন্যান্যের চেয়ে বেশি। ভেড়ার মাংসে জিংক, আয়রন এবং ভিটমিনের পরিমাণ বেশি এবং চর্বি ও কোলেষ্টরেল কম। দেশের প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের কথা বিবেচনায় বর্তমান সরকারের ৩১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘সমাজভিত্তিক ও বানিজ্যিক খামারে দেশী ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ (কম্পোনেন্ট-বি) প্রকল্প’।
প্রকল্পের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি চলতি বছরে শেষ হবে। ইতোমধ্যে দেশে ৩টি ডেমনষ্ট্রেশন খামার স্থাপন, পার্বত্য অঞ্চলের ২৫টি উপজেলায় ৫০০ পরিবারের মাঝে ১৫০০টি ভেড়া বিনামূল্যে বিতরণ, ১৩০০০ সুফলভোগিকে ভেড়া পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, ১২৮টি কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার ভেড়ার খামার তৈরী, সারাদেশে ১৩০০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ভেড়ার খামার স্থাপন এবং ভেড়ার মাংস জনপ্রিয় করার নানামুখি প্রচার চালনোসহ প্রকল্পের প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগে দেশে বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ। ২০০৭ সালে দেশে ভেড়া ছিল ১৬ লাখ। বর্তমানে বছরে প্রতিটি ভেড়ি গড়ে ২.৫টি করে বাচ্চা দেয়। ভেড়া উন্নয়নে এসময় নেয়া মাত্র ৩ কোটি টাকার একটি পাইলট প্রকল্প ২০১২ সালে শেষ হয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ