দাম বেড়েছে ব্রয়লারসহ সব ধরণের মুরগির

288

রমজানকে কেন্দ্র করে এক মাস আগেই মুরগি উৎপাদনে নামে রাজশাহীর খামারিরা। দাম উঠানামার দীর্ঘদিন ধকল সহ্য করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে খামারে বাচ্চা তোলেন তারা। ফলে রমজানের শুরুর দিকে এক চালান মুরগির বাজারে আসে। বর্তমানে বাজারে মুরগির আমদানি ও চাহিদা দুটোই পাল্লা দিচ্ছে। ফলে দাম বাড়তে শুরু করেছে। রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে দেশি ও ব্রয়লার মুরগি ছাড়াও সব ধরণের মুরগির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে ৬০ ভাগ খামার ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা গেছে। ভয়ে আর নতুন বাচ্চা তুলেননি খামারিরা। কিন্তু যেসব খামার বন্ধ ছিল তারা উৎপাদনে ফিরেছেন। রমজানে যেহেতু চাহিদা বেশি থাকে সেহেতু তারা লাভবান হবেন। অনেকদিন ধরে খামারিরা লোকসান দিয়েছেন এখন লাভ না করলে টিকে থাকতে পারবেন না।

ডিমের দাম রমজানে কমবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমের রমজানে কমবে। ডিম মানুষ রমজানে খেতে চায় না। তিনবেলার চাইতে দু-বেলা খাবারের কারণে সবজি ও ডিমের চাহিদা আগের তুলনায় কমে যায়। মুরগির তো আর ডিম দেওয়া বন্ধ হয় না। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়। ইতোমধ্যে প্রতি ডিমে রাজশাহীতে ৫০ পয়সা কমে গেছে। খোলা বাজারে ৩২ টাকা লাল ডিম আর ২৭ টাকা সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে।

আজ সোমবার (৪ এপ্রিল ২২) নগরীর সাহেববাজার মাস্টারপাড়া, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজশাহীর সাহেববাজার মাষ্টারপাড়া কাঁচাবাজারের পাইকারি মুরগি বিক্রেতা মিঠু এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রমজানে অন্যান্য সবজির চাহিদা কমলেও মাংসের চাহিদা বাড়ে। সব ধরনের মুরগির দামই এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে।

তিনি জানান, মাস খানেক আগে বড় ব্রয়লার ১৩৫ টাকা ছিল তারপরে বিক্রি করছি ১৫০ টাকা। বর্তমানে সেই ব্রয়লার ১৬০ টাকা বিক্রি করছি। ছোট ব্রয়লার ১৬৫-১৭০ টাকা কেজি। সোনালী ২৪০ থেকে আড়াইশ টাকা বিক্রি করেছি কিন্তু রমজানের শুরুতেই ২০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকা বিক্রি করছি। এছাড়া লেয়ার সাদা ২০০ টাকা, লেয়ার লাল ২৩০ টাকা এবং দেশী মুরগি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী নাদের হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। আর বাড়বে বলে মনে হয়না। যা দাম আছে এই দামেই চলবে। আবার বলাও যায় না, বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে। দেখতেই পাচ্ছেন তো বাজারে মুরগি কম। কাঁচামালের বিষয়ে বলা মুশকিল। আর ঈদের সময় আরেকটু বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক।

হাঁস ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রোজার আগে পাতিহাঁস বিক্রি করেছি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা এখন ৩৩০ টাকা। বর্তমানে হাঁসের দাম বেড়েছে। রাজহাঁস ৫০০ টাকা ও চিনাহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

বাজারে ডিমের দাম হালিতে কমেছে ৪ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিমের দাম আর দু এক টাকা কমতে পারে। রমজানে ডিমের দাম কিছুটা কমে। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম ৩৬ টাকায় বিক্রি করেছি রোজার আগে এখন ৩২ টাকা। সাদা ডিম ২৭-২৮ টাকা ও হাঁসের ডিম ৫৫ টাকা হালি এবং দেশী মুরগির ডিম ৬০ টাকা হালি বিক্রি করছি।

ডিমের দাম ও মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যের এবং বাচ্চার দাম অত্যন্ত বেশি। বস্তাপ্রতি খাদ্যেও দাম ফের বাড়ানো হয়েছে এখন মুরগির বাজার আস্তে আস্তে টান পড়ছে। তবে, এখন যে বাজার আছে তাতে আমাদের লাভ হচ্ছে। কমে গেলে লাভ থাকেনা।

বাজারে মাছের দামও বেশ চড়া হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মাছের আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি। যারা আগে ৫০০ গ্রাম মাছ কিনতো রমজানে তারা দু-কেজি কিনে। ফ্রিজে রেখে খাবে, বাজারে আসবে না। এজন্য মাছের বাজারে প্রতিকেজি মাছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। প্রতিকেজি রুই আকার ভেদে ছোট থেকে বড় সর্বনিম্ন ২০০ টাকা এবং ৩ কেজি ওজনের বেশি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। কাতল ২৮০ থেকে ৩০০, তেলাপিয়া ১৮০, চিংড়ি ৮০০, বোয়াল ৮০০, পাবদা সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০, সিলভার কার্প ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও বাজার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শীতকালীন সবজি বিদায় নিলেও দাম কমেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজি নিয়ে বিষয় নয় এবার সারাবছরই সবজির দাম চড়া। বাজারে ৫০ টাকার কোন সবজি নাই।
সাহেববাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, করলা ৮০ টাকা, শশা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সবধরণের সবজির দামই চড়া।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৪এপ্রিল ২০২২