জয়পুরহাট থেকে: ডিম নিয়ে ইদানীং কম রাজনীতি হচ্ছে না। এ শিল্পকে ধ্বংসের নমুনা শুরু হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন পাইকারি হাট-বাজারে এখন ৪ টাকায় একটি মুরগির ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে মুরগির ডিমের দাম কম হওয়ায় উপজেলার ডিম খামারিয়া দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গত ছয় সপ্তাহ ধরে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিভিন্ন পাইকারি হাট-বাজারে মুরগির ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে কমেছে। আর বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরনের কোম্পানির ওষুধ ও খাদ্যসহ মুরগি পালনের বিভিন্ন উপকরণের দাম।
জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার উদয়পুর, মাত্রাই, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে বিভিন্ন খামারিদের প্রায় ৫০ হাজার লিয়ার সোনালি জাতের ডিমের মুরগি আছে। এর মধ্যে ওই সব মুরগি প্রতিদিন ডিম দেয় প্রায় ৪৫ হাজারের মতো। আর প্রতিদিন একটি ডিম উৎপাদনের জন্য খামারিদের খরচ হয় প্রায় ৬ টাকা, কিন্তু গত ছয় সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাইকারি মুরগির ডিমের হাট-বাজারে ধস নেমেছে।
বর্তমান ওই সব মুরগির ডিম পাইকারি হাট-বাজারে প্রতি পিস লিয়ার সোনালি জাতের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪ টাকা দরে। এর ফলে মুরগির ডিম উৎপাদন করে, ওই সব ডিম বাজারে বিক্রি করে বিশাল অংকের টাকা ক্ষতি হচ্ছে ডিম খামারিদের।
চাকরি না পেয়ে অনেক শিক্ষিত যুবক ও যুবতীরা মনে শত স্বপ্ন নিয়ে একটু লাভের আশায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বা বিভিন্ন লোকের কাজ থেকে টাকা ধার-দেনা করে ডিমের খামার দিয়েছেন তারা। লাভ তো দূরের কথা, বর্তমান তাদের উৎপাদিত মুরগির ডিম বিক্রি করে আসল পুঁজি ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার করিমপুর গ্রামের মুরগির ডিমের খামারি আব্দুর রশিদ বলেন, লোকসানের কারণে ইতোমধ্যে অনেক ডিমপাড়া মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমার খামারে প্রায় তিন হাজার লেয়ার সোনালি জাতের ডিমের মুরগি আছে। প্রতিদিন ওই সব মুরগি ডিম দেয় প্রায় ২৬শ। বর্তমান বাজারে ওই সব মুরগির ডিম বিক্রি করলে আমার প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। আর এভাবে প্রতিদিন মোটা অংকে লোকসান হলে ভবিষ্যতে মুরগি পালন করব কিনা তা আমি ভাবছি।
একই এলাকার রিয়াজ বলেন, এলাকার বিভিন্ন পাইকারি হাট-বাজার থেকে যে দামে আমরা ডিম কিনতে পাই, সেই দাম থেকে দুই-এক টাকা লাভ রেখে ক্রেতার কাছে ডিমগুলো বিক্রি করি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান মুরগির ডিমের বাজারে ডিমের দাম অনেক কম। ডিম খামারিয়া লোকসানের মুখে পড়ে এখন দিশেহারা হারিয়ে। শিক্ষিত যুবক ও যুবতীরা মনে শত স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য তারা মুরগির ডিমের খামার দিয়েছেন। তারা এখন লোকসানে পরে পুঁজি হারাতে বসেছে। অনেক খামার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এই বৃহৎ শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের সু-নজর দেয়া দরকার বলে খামারিরা জানিয়েছেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন