দুগ্ধবতি গাভীর মেসিন মিল্কিং: সুবিধা ও অসুবিধা

488

060217-a-milking-parlour-c-tim-scrivener-26102014-19402-696x392

দুগ্ধবতি গাভীকে কেবলমাত্র দোহক যন্ত্র বা মিল্কিং মেসিন দ্বারা দোহন করার প্রক্রিয়াই মেসিন মিল্কিং। সাধারনত: হাত দ্বারা যখন গাভী সম্পূর্ণ ভাবে দোহন করা সম্ভব হয় না অথবা খামারে যখন দুধ দোহনের শ্রমিকের অভাব হয় তখন মিল্কিং মেসিনের সাহায্যে গাভী দোহন করা হয়।

মিল্কিং মেসিন চলনশীল এবং মিল্কিং পার্লারের নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ী ও স্থীরভাবে স্থাপনকৃত উভয় প্রকারই হয়ে থাকে।

মিল্কিং মেসিনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মিল্কিং মেসিন একটি বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র। এটি পাম্প, মোটর, এয়ার কম্প্রেসার, ভেকুয়াম টিউব, ভেকুয়াম পাইপ লাইন, ভেকুয়াম গজ , ভেকুয়াম রেগুলেটর , একটি ক্ল, চারটি টিট কাপ, মিল্ক টিঊব, একটি লম্বা পালসেটর টিউব এবং একটি পালসেটর সমন্ময়ে গঠিত।

মিল্কিং মেসিনের একটি অংশ দুগ্ধবতি গাভীর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মিল্কিং মেসিনের ক্ল অংশটি ছোট পালস টিউব, ছোট মিল্ক টিউব ও টিট্ কাপ, লং পালস্ টিউব এবং লং মিল্ক টিউবের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

ক্ল সাধারনত: স্টেইনলেস স্টিল বা প্যালাস্টিক অথবা উভয় দ্বারা তৈরি। টিট কাপ শক্ত বহিঃআবরন (স্টেইনলেস স্টিল বা প্লাস্টিক) যা নরম ভিতরের লাইনারটিকে ধরে রাখে। বহিঃআবরন বা শেলের স্বচ্ছ অংশ লাইনার কলাপ্স এবং দুধের শ্রোত দেখতে সহায়তা করে। শেল এবং লাইনারের মধ্যস্থিত বলায়াকার শূন্যস্থানকে পালস্ চেম্বার বলে।

বাছুর ও হাতের সাহায্যে যথাক্রমে চোষন, মর্দন ও টানা পদ্ধতিতে গাভীর বাঁট থেকে দুধ দোহনের চেয়ে মিল্কিং মেসিনের কাজ ভিন্ন। নরম লাইনারের ভিতরে অনবরতঃ বায়ুশুণ্য জনিত চাপ প্রোয়োগ করে দুধের বাঁট মর্দনের ফলে থেকে থেকে সৃষ্ট চাপ দুগ্ধনালী থেকে দুধ বের করে আনে। এই বায়ুশুণ্য চাপ মিল্কিং মেসিনকে গাভীর বাট ও ওলান এর সঙ্গে লেগে থাকতে সাহায্য করে।

দুগ্ধবতি গাভী

বায়ুশুণ্য চাপের কারণে ওলানের বাঁটে রক্ত ও অন্যান্য তরল পদার্থের সমাবেশ ঘটে। প্রাকৃ্তকি বায়ুপ্রতি সেকেন্ডে একবার পালসেসন চেম্বারে প্রবেশ করে লাইনারকে টিটের প্রান্তে চাপ প্রয়োগের সুযোগ করে দেয় এবং টিট টিস্যু থেকে দুধ বের করে আনে। লাইনার খোলা থাকা এবং বন্ধ থাকার অনুপাতিক সময় কে পালসেসন অনুপাত বলে।

টিট কাপ থেকে দুধের চারটি ধারা সাধারনত: ক্ল–তে এসে মিলিত হয় এবং মিল্ক হোজ দ্বারা মিল্ক লাইনে অথবা বাকেটে পরিবাহিত হয় যা’ পরিশেষে পাম্পের সাহায্যে কেন্দ্রীয় মিল্ক স্টোরেজ ট্যাংকে স্টোর করা হয়। অতঃপর সংগৃহীত সকল দুধ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য মিল্ক ট্যাংকারের মাধ্যমে কারখানায় প্রেরণ করা হয়।

মিল্কিং মেসিন, উৎপাদিত দুধকে দোহন কালীন সময় থেকে ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত কলুষমুক্ত বা দুষণমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত রাখে। দুধ দোহনের পর পরই মেসিনের ভিতরের অংশ যা’ দুধের সংস্পর্শে আসে তা’ হস্তচালিত পদ্ধতি অথবা সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয়। প্রায় সকল মিল্কিং মেসিনই বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত। তাই দুধ উৎপাদন খামারে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ-এর ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য্য।

মেসিন মিল্কিং এর সুবিধা সমুহ

১। প্রথমত: মেসিন মিল্কিং ডেইরী খামারিকে দক্ষতার সঙ্গে কার্য্য পরিচালনা, কর্ম পরিধি (ঙঢ়বৎধঃরড়হ ধৎবধ) বাড়াতে ও অনেক বেশি সংখ্যক গাভীর খামার পরিচালনায় সহায়তা করে থাকে। বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, গতানুগতিক ভাবে গাভী দোহন থেকে মেসিন মিল্কিং-এ অতি দ্রুত গতিতে অধিক সংখ্যক গাভী থেকে উচ্চগুণ ও মান সম্পন্ন অধিক দুধ পাওয়া যায়।

২। দ্বিতীয়ত: স্পস্টতই মেসিন মিল্কিং এর সাহায্যে খামারের খরচ কমানো সম্ভব কারণ এ ভাবে গাভী দোহন করতে কর্মচারি বা শ্রমিক কম লাগে। দেখা গেছে যে একটু বড় ধরণের খামারে গাভী দোহনের জন্য ১০/১২ জন অতিরিক্ত দক্ষ শ্রমিক লাগে, কারণ সাধারন খামার কর্মচারিগন হাতে দুধ দোহন করতে পারে না। হাতে দুধ দোহন করলে দুধ দুষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩। তৃতীয়ত: অধিক শ্রমিক মূল্য ছাড়াও মেসিন মিল্কিং -এর মাধ্যমে শ্রমিকদের উপর খামারের নির্ভরশীলতা দূর করা যায়। গতানুগতিক খামার ব্যবস্থায় যদি দক্ষ শ্রমিক কাজ করতে না চায়, বা চাকুরি ছেড়ে দেয় তখন দুধ উৎপাদনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং দুধ সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়। মিল্কিং মেসিন থাকলে অতি সহজেই একজনকে দিয়ে মেসিন চালানো যায় এবং ডেইরী ফার্ম সব সময় চালু রাখা যায়।

৪। সর্বপরি, যথাযত ভাবে নিয়মিত দুধ দোহন গাভীকে ধকল (ঝঃৎবংং) থেকে রক্ষা করে। যাহা কেবল গাভীর স্বাস্থ্যই উন্নত করে না বরঞ্চ উচ্চমান সম্পন্ন অধিক দুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে।

দুগ্ধবতি গাভী

মেসিন মিল্কিং-এর অসুবিধা সমুহ
সাধারণ ভাবে মিল্কিং মেসিন সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

১। প্রথমত: হাতে দোহন করা বয়স্ক ও পুরাতন গাভী স্বভাবতই মিল্কিং মেসিনে দুধ দোহন করা পছন্দ করে না। এই গাভীগুলি সয়ংক্রিয় দুধ দোহন যন্ত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে গাভী ধকলে পড়ে এবং দুধের মাণ নষ্ট হয়ে যায়। এটা খামারের সাময়িক অসুবিধা যা পরবর্তী প্রজন্মে কাটিয়ে উঠতে পারে।

২। দ্বিতীয়ত মিল্কিং মেসিন চালাতে সার্বক্ষনিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তাই বিদ্যুতের অভাবে খামারের দুধ দোহনের স্বাভাবিক কাজ বিঘ্নিত হয়। বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় এ সমস্যা দূর করা যায়।

৩। তৃতীয়ত: মিল্কিং মেসিন চালানায় নিয়োজিত জনবল যাতে মিল্কিং মেসিনগুলো সম্পূর্ণভাবে নিয়মানুযায়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখে সেদিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হয়। প্রতিবেলা যথাযত ভাবে মিল্কিং মেসিন পরিস্কার না করলে রোগ সংক্রমনের পথ তৈরি হয় এবং অতি সহজেই গাভী ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত হয়।

উপসংহার:
বর্তমান বিশ্বে দক্ষতার সঙ্গে দুগ্ধ উৎপাদন করতে মিল্কিং মেসিন একটি অপঅরিহার্য ও জনপ্রিয় যন্ত্র। গাভীর সু স্বাস্থ্য বজায় রেখে লাভজনক উপায়ে জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন দুধ উৎপাদনে মেসিন মিল্কিং-এর বিকল্প নাই।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১ফেব্রু২০২০