ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার ডেস্ক: একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন প্রাণীর মধ্যে সংমিশ্রণে যে মিশ্রজাতের সৃষ্টি হয় তাকে সংকরায়ন বলে। যেমন বিদেশি ফ্রিজিয়ান ষাঁড় ও দেশি গাভী প্রজননে সংকর জাত, শাহিওয়াল ষাঁড়ের সাথে সিন্ধি গাভীর মাধ্যমে সংকর জাত ইত্যাদি।
সংকরায়নের ফলে উৎপন্ন মিশ্রজাত অধিক উৎপাদনে (মাংস ও দুধ) হয়। আমাদের দেশে খামারীদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা সংকরায়নের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ অর্থ্যাৎ শতকরা কত ভাগ বিদেশি কৌলিক গুনাগুণ দেশি গাভীতে সন্নিবেশ করে সংকর জাতের গাভী তৈরি করা হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
১৯৭৮ সালে জাতীয় পর্যায়ে জার্মান কারিগরি সহায়তায় ঢাকার সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন খামার (CCBS)স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয় দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম। সেই থেকে প্রজনন কার্যক্রম রেকডিং হয়ে আসছে। কিন্তু এ কার্যক্রমের অগ্রগতির মূল্যায়ন অথবা কোন জাতের সংকর কত মাত্রায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ভাল উৎপাদনোক্ষম তা কখনো বিশ্লেষণ করা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্দ্যোগে এ সমস্ত গাভীগুলোর মূল্যায়ন ও বাংলাদেশের দুগ্ধ খামারগুলোতে কোন ধরনের সংকর গাভী রাখা লাভজনক তা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে একটি কার্যক্রম হাতে নেয় এবং তা সম্পূর্ণ করে। সাভার ডেইরি ফার্মে সংরক্ষিত রেকর্ড বই/ কার্ড থেকে বিশ্লেষণের জন্য প্রায় ২০০০ গাভীর উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা হয়।
সংকরায়নের সঠিক মাত্রা:
বিশ্লেষণের ফলাফলে দেখা যায় এ দেশের আবহাওয়া, খাদ্য, পরিচর্যা ইত্যাদি প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ১০০% ফ্রিজিয়ান জাতের অন্যান্য সকল জাতের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ভাল। কিন্তু তা ওই জাতের উৎপত্তিস্থলে যে উৎপাদন ছিল তার চেয়ে অনেক কম। সংকর জাত সমূহের মধ্যে দেশি (৫০%) ফ্রিজিয়ান (৫০%) অথবা শাহিওয়াল (৫০%) ফ্রিজিয়ান (৫০%) বৈশিষ্ট্য সম্বলিত প্রথম সংকর(F1)গাভী গুলির দুগ্ধ উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন ক্ষমতাই উৎকৃষ্ট হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
এছাড়া , দ্বিতীয় (F2) বা তৃতীয় (F3) সংকরে ফ্রিজিয়ান বা অন্যান্য বিশুদ্ধ জাতের কৌলিক ভাগ যে গাত্তে বেড়েছে তাদের উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি হয়নি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে উৎপাদন কমেও গেছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয় যে , ৫০% ফ্রিজিয়ান জাতের সাথে ৫০% দেশি বা ৫০% শাহীওয়াল জাতের মিশ্রিত ১ম সংকর গাভীই উৎপাদন ও পূনরুৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোকৃষ্ট। অনেক ক্ষেত্রে দেশি (৫০%) X ফ্রিজিয়ান (৫০%) এর ফলাফল শাহিওয়াল (৫০%) X ফ্রিজিয়ান (৫০%) এর তুলনায় ভাল ফল প্রদর্শন করে।
সঠিকভাবে সংকরায়নের উপকারিতা :
# সংকরায়ন পদ্ধতিতে ভাল এবং উন্নত জাতের ষাঁড়ের ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
# প্রজনন ব্যবহৃত ষাঁড় ভাল কি মন্দ হবে তা গবেষণার মাধ্যমে পূর্বেই নিশ্চিত করে ব্যবহার করা সহজ সাধ্য।
# ইচ্ছা জাত নির্বাচন করা যায়।
# যৌনব্যাধি বা অন্যান্য রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
# সংকরায়নের ফলে গর্ভধারনের হার বৃদ্ধি পায়।
# সতর্কতার সাথে সংকরায়নের ফলে গাভীর সর্বাধিক উর্বরতা অর্জন সম্ভব।
# সংকরায়নের মাধ্যমে প্রজনন ব্যয় অত্যন্ত কম।
# সংকরায়নের ফলে মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
# সঠিক মাত্রায় সংকরায়নের মাধ্যমে গাভী উৎপাদিত হলে আশানূরুপ দুধ পাওয়া যায় ও তাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক কম হয়। সূত্র: বিএলআরআই
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম