দুম্বা ও গাড়লের খামার করে সফল আকরাম

1143

Bd-pratidin-19-08-17-SF-07

মরু অঞ্চলের দুম্বা ও গাড়লের খামার করে চমক দেখিয়েছেন আকরাম হোসেন নামের এক খামারি। অনেকটা শখের বশেই ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন এই খামার। তার এই খামারের খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের সাধারণ মানুষ একনজর দেখতে ভিড় জমায়। আর এ ব্যতিক্রমী খামারের সন্ধান পাওয়া গেল রাজধানীর পাশের গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী এলাকায়।

শুধু শখকে গুরুত্ব দিয়ে আকরাম দুম্বা ও গাড়ল পালন শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত করেছেন খামার। আর এখন এক এক করে ছোটো বড় অর্ধশত দুম্বা তার খামারে। ইতিমধ্যে দুম্বার পাশাপাশি খামারে তোতাপুরী, যমুনাপুরী, চিত্রাপুরী ছাগল রয়েছে। রয়েছে সাদা সৌদিয়ান হারিয়ান প্রজাতির ছাগলও।

আর তার এই খামারে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো জাতের দুম্বা, ছাগল, গাড়ল বাচ্চা দিচ্ছে। আর দিন দিন বেড়ে এসব প্রাণীর সংখ্যা এখন দুই শতাধিক। খামারের মালিক আকরাম হোসেনের এই ব্যতিক্রমী খামার গড়ার পেছনে রয়েছেন তারই বড় ভাই এনামুল হক মোল্লা।

তিনি কোথাও বেড়াতে গেলে বা ঘুরতে গেলে কোনো আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন ছাগল, ভেড়া, কবুতরসহ কোনো প্রাণী পেলেই কিনে নিয়ে আসতেন। আর বড় ভাইয়ের সেই শখ আকরামকে অনুপ্রাণিত করে। বড় ভাই এনামুলের দেখাদেখি এসব প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। পরে বড় ভাই এনামুল প্রবাসে চলে যান। আর এতে খামারের পুরো দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন আকরাম হোসেন।

‘এখন খামারে দুই শতাধিক গাড়ল, ভেড়া, দুম্বাসহ উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও উন্নত জাতের দুম্বা ও ছাগল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী এবং প্রতিবেশীদের মাঝেও রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। এর আগে এমন ব্যতিক্রমী পশু খামার কেউ করেননি।

মরহুম মাওলানা আবদুল আহাতের ১২ ছেলে ৬ মেয়ের মধ্যে এনামুল সবার চেয়ে আলাদা। একটু ব্যতিক্রমী সৌখিন এনামুল। তিনি বিদেশে চলে গেলে তার ছোট ভাই আকরাম খামার দেখাশোনা করেন। এলাকাবাসী জানায়, ‘টিভিতে মরু অঞ্চলের দুম্বা দেখেছি। এখন দেখি নিজ এলাকায়ই দুম্বা পালন হচ্ছে। এ খামারে দুম্বাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন দামি ছাগলও পালন করা হয়।’

আকরামের বড় ভাই আবুল কাশেম ভাইয়ের এই ব্যতিক্রমী খামার নিয়ে সন্তুষ্ট। ‘২০১৫ সালের দিকে দুম্বা, গাড়ল, রাম ছাগলসহ ৭০টি প্রাণী নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু। বর্তমানে খামারে ৬৫টি দুম্বা, ৭০টি গাড়ল, ১০টি তোতাপুরী ছাগল, ১০টি যমুনাপুরী ছাগল, ১০টি বুয়াং ছাগল, ১০ চিত্রাপুরী ছাগল রয়েছে। রয়েছে সাদা সৌদিয়ান হারিয়ান প্রজাতির অতি উন্নত জাতের ছাগলও।

এর বাইরেও খামারে বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির দুইশতাধিক পশু রয়েছে।’ একটি পূর্ণ বয়স্ক দুম্বার বাজারমূল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। খামারটিতে সবচেয়ে দামি ছাগল সাদা সৌদিয়ান হারিয়ান। যা প্রায় দুই লাখ টাকা দাম। গাড়ল, তোতাপুরী ছাগল, যমুনাপুরী ছাগলগুলো ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্য।

খামারটির ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম জানান, ‘প্রজননের সুবিধার্থে প্রত্যেক জাতের আলাদা মর্দা প্রাণী (পাঁঠা) রয়েছে। দুম্বা গাড়লসহ বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির ছাগল নিয়মিত বাচ্চা প্রসব করছে খামারে। মর্দাগুলো (পাঁঠা) অনেক বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়। অনেক সময় উন্নত জাতের বাচ্চাও সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। খামার থেকে বিভিন্ন দামে বিভিন্ন জাতের বাচ্চা বিক্রিও করা হয়। খামারে প্রতিনিয়ত ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে।’

খামারটির শ্রমিক আবদুল্লাহ জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে এ খামারে কাজ করছি। আমার হাতে অনেক বাচ্চা প্রসব করেছে বিভিন্ন জাতের ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। সবুজ ঘাস, খড় কাটা, ভূষি, ভুট্টা ভাঙা, গম ভিজানোসহ বিভিন্ন খাদ্য একত্রে মিশিয়ে খাবার দেওয়া হয়। নিয়মিত তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়।

নারী শ্রমিক সালেখা আক্তার জানান, নিজের সন্তানের মতো আদর যত্ন করে দুম্বা, গাড়ল, ছাগলগুলোকে লালন-পালন করি। এই দুম্বা খামারে আমাদের কর্মের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আমরা ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করি। প্রাণীগুলো বিক্রির সময় অনেকের মনে কষ্ট লাগে। এদের মধ্যে দুয়েকটি আদরের হয়ে যায়।

শ্রীপুর উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আশরাফ হোসেন বলেন, দুম্বার খামার অত্যন্ত লাভজনক। কোরবানি ঈদে দুম্বার চাহিদা ব্যাপক থাকে। সেই চাহিদা পূরণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় দুম্বা ও গাড়ল। আকরাম হোসেনের খামারটি অত্যন্ত সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘আকরাম হোসেনের দুম্বা, গাড়ল পালন সত্যিই ব্যতিক্রমী পেশা। শুধু দুম্বাই নয়, খামারটির উন্নত জাতের ছাগল অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান। প্রাণীসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে টিকাসহ নিয়মিত প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে থাকি। তার দুম্বা খামার দেখে অনেকেই খামার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ