দেওধান বা মিগারু চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা

1210

ফল
দেওধান নতুন ফসল। এটি চাল জাতীয় একটি ফসল, এই চাল দিয়ে খই হয়। সাধারনত বালি ও ধান দিয়ে যেভাবে খই ভাজা হয় সেইভাবেই সামান্য বালি পাত্রে রেখে তাপ দিলে দেওধান খই হয়ে যায়। এছাড়া এই চাল দিয়ে রুটি এবং নানান স্বাদের পিঠা তৈরি করে খাওয়া হয়। চালকে ময়দার মত গুড়া করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেও রাখা যায়।

বছর দেরেক আগে সপরিবারে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান আন্দ্রিয় রেমা (৫১)। পেশায় সে একজন পুরোদস্তুর কৃষক। আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে প্রথম দেওধান দেখতে পান। খই হিসেবে খাওয়ার জন্য সেখান থেকে তিনি কিছু দেওধান নিয়ে আসেন। খই ভেজে খাওয়ার পরে কিছু বীজ তিনি রোপনের উদ্দেশ্যে রেখে দেন। নিজে লাগানোর পাশাপাশি আরো দুজন কৃষককে লাগানোর জন্য দেন এই ধান। সে হিসেবে তিনিই প্রথমবারের মত দেশে দেওধান চাষ শুরু করেন। নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের বাসিন্দা আন্দ্রিয় রেমা।

কৃষক রেমা বলেন, “ভারতে এই ফসল পাহাড়ে জুমারা চাষ করে থাকে। আমাদের দেশের এই অঞ্চলে বেশীর ভাগ জমিতে বালুর আধিক্য থাকায় এটি কেউ চাষ করেনা। কারন বেলে মাটিতে এটি ভালো জন্মে না। বেলে মাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে আমিই প্রথম চাষ করে দেখলাম। দেওধান চাল চাষে তেমন যত্নে প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র আগাছা পরিস্কার করে দিলেই চলে। সেভাবে পানিরও প্রয়োজন হয় না। মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তহের মধ্যে বীজ বপন করতে হয়।

বপন পদ্ধতি হচ্ছে ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গর্ত করে প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ পুতে দিতে হয়। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চারা গজায়। গাছ দ্রুত বাড়ে। গাছটি বড় হলে বেশ জায়গা দখল করে তাই ২-৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বীজ পুতে দিতে হয়। ছোট বেলায় গাছটি দেখতে ভুট্টা গাছের মত হলেও পরিপূর্ণ এক একটি গাছ ঠিক আখ গাছের মত। এর উচ্চতা প্রায় ৯-১০ ফিট। এর পাতা, গাছের ধরণ, আকার, আকৃতি হুবহু আখ গাছের মত। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সাদা রঙের ফুল ফোটে।

ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যেই দানাদার বীজ হতে শুরু করে। এর পর ১-২ মাসের মধ্যে বীজ পরিপক্ক হতে শুরু করে। ফুল হতে যখন ফল বা বীজ হতে শুরু করে তখন এর খোসার রং সবুজ ও খয়েরী রঙের হয়ে থাকে। তার পর এর রং সাদা হয়ে যায়। পরিপক্ক দেওধানের রং ধবধবে সাদা হয়। ফুল হতে ফল বা বীজগুলো শক্ত হতে শুরু করলেই খোসাগুলো বীজের চারপাশ ছড়িয়ে পড়ে।

ধানের মতই অনেকগুলো শীষের সমন্বয়ে গোছা আকারে ফলন হয়। এক গোছা হতে ফলন হয় প্রায় ২০০-৩০০ গ্রামের মত। কার্তিক মাসের শেষের দিকে হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় গাছের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। তখন কেবল গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। ঝড় বৃষ্টিতে অধিকাংশ ফুল ঝরে গিয়েছিল। অনেক লম্বা হওয়ায় কিছু গাছ ভেঙ্গে পড়েছিলো। বিপত্তি সত্তেও কিছু কিছু গাছ টিকে গিয়েছিল। সেখান থেকেই বীজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন তিনি। দেওধানে সাদা জাব পোকা ও গান্ধি পোকার আক্রমন বেশী দেখা দেয়। তবে পোকাঁ দমনের জন্য তিনি কোনো কিটনাশক ব্যবহার করেননি, শুধুমাত্র ছাই দিয়েই কাজ চালিয়ে গেছেন।

তিনি আরো জানান, দেওধান চাষে বড় সমস্যা পোকা বা রোগ নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পাখি। আর এই পাখির উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। তার ক্ষেতে দেওধান পরিক্ক হওয়ার পূর্বেই বাবুই পাখির উপদ্রব দেখা দেয়। যা সামাল দিতে তার নাভিশ্বাস উঠেছিলো। দেওধান উৎপাদন হওয়ায় এলাকায় মানুষের ভিড় পরেছিলো কারন ফসলটি কারোরই তেমন পরিচিত ছিলো না। তিনি ছাড়াও পাতলাবন গ্রামের সবিতা মানখিন ও চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের বেনুকা ম্রং দেওধান চাষ করেছিলেন।

সবতিা মানখিনের জমিটি পাথুরে ঝুরঝুরে বালি হওয়ায় সেখানে কোন বীজ অংকুরোদগম হয়নি। তবে চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষক বেনুকা ম্রং এর জমিতে গাছ হয়েছিল, ফলনও হয়েছিল। কিন্তু বাবুই পাখির উপদ্রবের কারনে খুব কম পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন এই কৃষক। তাদের আশা এই বছর আরো বেশী পরিমানে চাষ করবেন এবং অন্যান্য কৃষকের মাঝেও তারা এটি ছড়িয়ে দিবেন। দেওধান চাল জাতীয় একটি ফসল, এই চাল দিয়ে খই হয়। সাধারনত বালি ও ধান দিয়ে যেভাবে খই ভাজা হয় সেইভাবেই সামান্য বালি পাত্রে রেখে তাপ দিলে দেওধান খই হয়ে যায়। এছাড়া এই চাল দিয়ে রুটি এবং নানান স্বাদের পিঠা তৈরি করে খাওয়া হয়। চালকে ময়দার মত গুড়া করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেও রাখা যায়।

বছর দেরেক আগে সপরিবারে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান আন্দ্রিয় রেমা (৫১)। পেশায় সে একজন পুরোদস্তুর কৃষক। আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে প্রথম দেওধান দেখতে পান। খই হিসেবে খাওয়ার জন্য সেখান থেকে তিনি কিছু দেওধান নিয়ে আসেন। খই ভেজে খাওয়ার পরে কিছু বীজ তিনি রোপনের উদ্দেশ্যে রেখে দেন। নিজে লাগানোর পাশাপাশি আরো দুজন কৃষককে লাগানোর জন্য দেন এই ধান। সে হিসেবে তিনিই প্রথমবারের মত দেশে দেওধান চাষ শুরু করেন। নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের বাসিন্দা আন্দ্রিয় রেমা।

কৃষক রেমা বলেন, “ভারতে এই ফসল পাহাড়ে জুমারা চাষ করে থাকে। আমাদের দেশের এই অঞ্চলে বেশীর ভাগ জমিতে বালুর আধিক্য থাকায় এটি কেউ চাষ করেনা। কারন বেলে মাটিতে এটি ভালো জন্মে না। বেলে মাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে আমিই প্রথম চাষ করে দেখলাম।

তিনি বলেন, দেওধান চাল চাষে তেমন যত্নে প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র আগাছা পরিস্কার করে দিলেই চলে। সেভাবে পানিরও প্রয়োজন হয় না।

মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তহের মধ্যে বীজ বপন করতে হয়। বপন পদ্ধতি হচ্ছে ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গর্ত করে প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ পুতে দিতে হয়। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চারা গজায়। গাছ দ্রুত বাড়ে। গাছটি বড় হলে বেশ জায়গা দখল করে তাই ২-৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বীজ পুতে দিতে হয়। ছোট বেলায় গাছটি দেখতে ভুট্টা গাছের মত হলেও পরিপূর্ণ এক একটি গাছ ঠিক আখ গাছের মত। এর উচ্চতা প্রায় ৯-১০ ফিট। এর পাতা, গাছের ধরণ, আকার, আকৃতি হুবহু আখ গাছের মত।

অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যেই দানাদার বীজ হতে শুরু করে। এর পর ১-২ মাসের মধ্যে বীজ পরিপক্ক হতে শুরু করে। ফুল হতে যখন ফল বা বীজ হতে শুরু করে তখন এর খোসার রং সবুজ ও খয়েরী রঙের হয়ে থাকে। তার পর এর রং সাদা হয়ে যায়।

পরিপক্ক দেওধানের রং ধবধবে সাদা হয়। ফুল হতে ফল বা বীজগুলো শক্ত হতে শুরু করলেই খোসাগুলো বীজের চারপাশ ছড়িয়ে পড়ে। ধানের মতই অনেকগুলো শীষের সমন্বয়ে গোছা আকারে ফলন হয়। এক গোছা হতে ফলন হয় প্রায় ২০০-৩০০ গ্রামের মত।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ