দেশি মুরগি পালনে যেসব বিষয়গুলো জানা জরুরি

200

দেশি মুরগি পালন, বেকার যুব সমাজ, ভূমিহীন কৃষক এবং গরীব গ্রামীন মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থান একটি উল্লেখযোগ্য উপায়। এদের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির চেয়ে কম কিন্তু বিদেশি মুরগি থেকে এদের ব্যয়ও অতি নগণ্য তাই সেই তুলনাই আয় বেশি। দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টি সমস্যায় ভুগছে। মুরগির মাংস ও ডিম উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। মাংস ও ডিমের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। সর্বসাধারণের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দেশি মুরগির চাষ বৃদ্ধি করতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিরাপদ মাংস উৎপাদন করা সম্ভব হবে, পাশাপাশি কমবে অতি মাত্রায় পোল্ট্রি মুরগির উপর নির্ভরতা।

দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি
আদিকাল থেকে গ্রাম বাংলার মহিলারা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে মুরগি পালন করে আসছে। মুরগির বিষ্ঠা উন্নতমানের জৈব সার যা ব্যবহার করে কৃষি ফসল উৎপাদনে লাভবান হওয়া যায়। মুরগির বর্জ্য এবং লিটার ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব যা ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানী সাশ্রয় করে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা যায়।

দেশি মুরগির পরিচর্যা : ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। নিম্ন পদ্ধতিতে দেশি মোরগ মুরগি পালন করা গেলে তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা আশা করা যায়।

ক্রঃ নং মুরগি পালনে করনীয়
০১ সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে।
০২ সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে।
০৩ ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।
০৪ মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঝেতে ধানের তুষ বা করাতের গুঁড়া (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে।
০৫ পায়খানা বা লিটার শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে।
০৬ কিছুদিন পর পর পায়খানা বা লিটার পরিষ্কার করতে হবে।

এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ- মুরগি পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি

দেশি মুরগির বৈশিষ্ট্য : দেশি মুরগি মাংস এবং ডিম অন্য জাতের তুলনায় স্বাদযুক্ত এবং বেশি মজাদার বলে দাবি করা হয়। সুতরাং, তাদের কম বৃদ্ধি এবং ছোট আকার সত্ত্বেও, দেশি মুরগী পালন করা ব্যয়বহুল। দেশি মুরগি ১ বছরে ৩০-৪০ টি ডিম দিয়ে থাকে। তাদের ডিম অন্য মুরগি ডিমগুলি থেকে ছোট। তবুও তাদের ডিম ও মাংশের দাম বেশি। কম টাকা ইনভেস্ট করে বেশি আয় করতে পারবেন। লেখাপড়া বা যে কোন চাকরি করার পাশা পাশি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলা যায় এই দেশি মুরগির খামার। দেশি মুরগির রোগ বালাই ও কম তাই এটি পালনে তেমন কোন ঝুঁকি নেই। কিছু বিষয়ে ধারণা থাকলে সমস্যা বা রোগ বালাই দমন করা যায়।

দেশি মুরগির খাবারঃ বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া ভাত, তরকারি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায় এবং কিছু কেনা খাবার দিতে হয়। কারণ এতে মুরগির বিভিন্ন পুষ্টি পূরণ হয় এবং তারা সুস্থ্য থাকে।

দেশি মুরগির ঘর তৈরি : দেশি মুরগির চাষের জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের দরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম ঘরে ১০-১৫টি মোরগ মুরগি পালন করা যাবে।

পালন পদ্ধতি : দেশী মুরগি সাধারণত দুই ভাবে পালন করা যায়। যেমন: (১) সনাতন পদ্ধতি ও (২) আধুনিক পদ্ধতি বা উন্নত পদ্ধতি।

সনাতন পদ্ধতি: আমাদের দেশে বেশির ভাগ দেশি মুরগি সনাতন পদ্ধতিতে পালন করা হয়। সনাতন পদ্ধতি বলতে ছেড়ে দিয়ে মুরগি পালন কে বোঝায়।

সনাতন পদ্ধতির প্রধান ত্রুটি হল স্বল্প পুঁজি এবং স্বল্প আয়। আমাদের দেশের নারীরা এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করেন। এই চাষের প্রচলন থাকলেও রয়েছে নানা অসুবিধা। এভাবে মুরগি পালন করে লাভ কম। সনাতন পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে মুরগির উৎপাদন চক্রে বেশি সময় লাগে, কম ডিম পাড়ে, কম বাচ্চা হয়, বেশি রোগ দেখা দেয়, মুরগি ও বাচ্চা মারা যায় ইত্যাদি।

সনাতন পদ্ধতিতে দেশি মুরগির উৎপাদন চক্র শেষ হতে প্রায় ১৪০-১৭০ দিন লেগে যায়। তাই চলুন এদের উৎপাদন চক্র সম্পর্কে জেনে আসি। এর উৎপাদন চক্রকে সাধারণত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়- যেমন,

ডিম পাড়া – ১৮থেকে ২৪ দিন
ডিম কুচি বা তা – ২১ দিন
বাচ্চা পালন – ৯০-১০০ দিন
বিশ্রাম -১০-১৫ দিন

আধুনিক পদ্ধতি : আমাদের দেশে খুব কমই আধুনিক পদ্ধতি বা আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন করা হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে মুরগি পালন বলতে আবদ্ধ অবস্থায় মুরগি পালন কে বোঝায়।এই পদ্ধতির বেশি পুঁজি লাগে কিন্তু লাভ ও কম হয়। এই ভাবে দেশি মুরগি পালন করা হয় না কারন তাদের কম বৃদ্ধি এবং ছোট আকারের হয়। আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা আনেক ব্যয়বহুল। দেশি মুরগি ১ বছরে ৩০-৪০ টি ডিম দিয়ে থাকে তাই বেশি লাভ হয় না,

মুরগির পায়খানা বা বিষ্ঠা : মুরগির পায়খানা বা বিষ্ঠা জৈব সারের একটি ভালো উৎস। মুরগি চরানোর সময়, মুরগি পোকা মাকড়কে খেয়ে থাকে তাই তাদের বেশি বাড়তি খাদ্য দিতে হয় না। এতে মুরগি মালিকের কম খাদ্য লাগে এবং খরচ ও কম হয়। বাজার সম্ভাবনা স্থানীয় বাজার ছাড়াও বড় বাজারে এই দেশি মুরগি বিক্রি করা যায়। মুরগির ডিম প্রতিবেশী, স্থানীয় দোকান বা বাজারে পাইকারি বা খুচরা বিক্রি করা যেতে পারে।

রোগ সমূহ:

রাণীক্ষেত রোগ ।
গামবোরা রোগ ।
পুলোরাম রোগ ।
বসন্ত রোগ ।
ফাউল কলেরা রোগ ।
হিট স্ট্রোক রোগ ।
আমাশয় রোগ ইত্যাদি ।

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ সমূহঃ-

সাদা চুনের মত পাতলা মল ত্যাগ করে।
ঘাড় বেঁকে যায়, কখনও কখনও একই স্থানে দাঁড়িয়ে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
নাক দিয়ে সর্দি ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে।
শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয় এবং হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
মাথা নিচু ও চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে।
মুরগী দূর্বল হয়ে ঠোঁট ও বুক মাটিতে লাগিয়ে বসে পড়ে।
মুরগী খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

পরিচর্যাঃ দেশি মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

দুর্বল ব্যবস্থাপনাঃ

ডিম কুচি বা তা দিলে সঠিক সময় ও প্রয়োজন মত খাবার না দেওয়া।
দীর্ঘ দিন মা মুরগী কে বাচ্চা চরাতে দেওয়া।
সময় মত বাচ্চার টিকা ও ঔষধ প্রয়োগ করা