আধুনিক প্রযুক্তিকে দেশি মুরগি পালন করবেন যেভাবে

551

দেশি মুরগি পালন ও আধুনিক প্রযুক্তি। সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে খাচায় কিংবা বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন করে সহজেই বাড়তি টাকা আয় করা যায়। প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকলে মুরগি পালন বই pdf download করে পড়লে মুরগি পালন ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারনা তৈরি হয়। আধুনিক প্রযুক্তিতে দেশি মুরগি পালন করলে রোগ বালায়ের সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।

দেশে বর্তমানে ভায়রাল হয়ে উঠেছে এধরনের উদ্যোগ। ছাত্র, বেকার যুবক, গৃহিনী সবাই এখন দেশি মুরগি পালন করে সফল উদ্যেগতা। আপনারা সকলেই যানেন যে দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এই মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা কম হলেও এর চাহিদা ও দাম সব সময় বিদেশী জাতের মুরগির চেয়ে অনেক বেশি এবং পালন খরোচও অনেক কম। এই মুরগির মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু।

দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি
দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি পূর্বে শুধু মুক্ত বা ছাড়া অবস্থায় পালন করা হতো এখন খাচায়, শেডে ও দুই বা তিন তলা বিশিষ্ট ঘরে আবদ্ধ অবস্থাতেও পালন করা হয়। মুক্ত ভাবে পালন করলে বেশি মুরগি পালন করা যায় না অতপর মুরগির রোগ বালইও বেশি দেখা যায়। কিন্তু আবদ্ধ অবস্থায় শেড বা মুরগির বিশেষ ঘরে দেশি মুরগি পালন করলে খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও রোগ ব্যবস্থাপনা করা সহজ হয। এতে উৎপাদন ভলো পাওযা যায।

আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন
বাচ্চা উৎপাদন
মুরগির ডিম সংগ্রহ করে ইনকুবেটর এর মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করা হয। বর্তমানে ইনকুবেটর এখন খুবই সহজ লভ্য, ২০ ডিম, ৫০ ডিম, ১০০ ডিমের ইনকুবেটর এখন পাওয়া যায। ইনকুবেটর না থাকলে দেশীয় হাজল পদ্ধতিতে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।

মুরগির ঘর বা শেড
মুরগির জন্য আধুনিক বাসস্থান তৈরী করা হয়। যেখানে দেশি মুরগির খাবার ও পানি পান করার ব্যবস্থা থাকে। এবং অধীক গরম ও শীত থেকে মুরগি রক্ষা পায়।

দেশি মুরগির খাদ্য ব্যাবস্থাপনা
আধুনিক প্রযুক্তিতে দেশি মুরগি পালন করতে উন্নত মানের খাদ্য খাওয়ানো হয়। এতে মুরগির গ্রোথ বেশি থাকে ও অধিক উৎপাদন পাওযা যায। মুরগিকে ব্রয়লার মুরগির খাদ্য খাওয়ানোর চেয়ে খাদ্য নিজে বানিয়ে খাওয়লে খাদ্য খরচ কম হয়।

দেশি মুরগির খাদ্য তৈরির ফরমুলা (মাংসের জন্য)
ভুট্টা ভাংগা ৩৫ কেজি
সযাবিন মিল ৩০ কেজ
রাইচ পালিশ (তেল যুক্ত অটো মিল) ২৫ কেজি
ফিস মিল/প্রোটিন কনসেনট্রেট ৮ কেজি
ডিসিপি/এমসিপি ১ কেজি
লবন ১ কেজি
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ১৫০ গ্রাম
টেবিল- দেশি মুরগির খাদ্য তৈরির নিয়োম
দেশি মুরগির জাত পরিচিতি
আমাদের বাংলাদেশে তিনটি জাতের দেশি মুরগি পালন করা হয়। কমনদেশী জাত, হিলি জাত ও গলাছিলা। এছাড়াও কিছু সংকর জাতের ও বিদেশী জাতের মুরগি প্রাচিন কাল থেকে বাংলাদেলে পালিত হয়। সোনালী মুরগি (Sonali Murgi), টাইগার মুরগি (Tiger Murgi) ইদ্যাদি। দেশি মুরগি পালন ও মুরগির জাত গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো-

কমনদেশী জাতের মুরগি
কমনদেশী জাতের মুরগির নির্দিষ্ট কোন রোগ হয় না। লালচে কালো বা লালচে বাদামী রং এর মুরগিই বেশি দেখা যায়। কালো ও সোনালী রঙের মুরগিও পাওয়া যায়। এদের পায়ের নলা সাদাটে ও লোমহীন। এদের ডিম গাঢ় বাদামী বা হালকা বাদামী হয। কমনদেশী জাতের মুরগি পালন আদী কাল থেকে চলে আসছে। কমন দেশি মুরগি পালন করা হয়।

কমনদেশী জাতের মুরগি
হিলি জাতের মুরগি
হিলি জাতের মুরগির আকারে একটু বড় হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং কালো ছিটা যুক্ত হয়। পালকহীন ও হলদে চামরার পা থাকে। মাথায় একটি ঝুটি ও ঝুটির রং লাল, বাদামী ও ধুসর বর্ণের হয়ে থাকে। পায়ের রং প্রধানত সাদাটে তবে হলুদ ও কালো রঙেরও দেখা যায়। ডিম একটু বড় ও রং হালকা বাদামী। এটি অধিক ডিম পাড়া জাতের দেশি মুরগি। দেশি মুরগি পালন করতে হিলি জাতের মুরগি পালন করা যেতে পারে।

হিলি জাতের মুরগি
হিলি জাতের মুরগির বৈাশষ্ট
চট্টগ্রামের পাহাড়ী অন্চলে এই হিলি মুরগি দেখতে পাওয়া যায়।
দেশীয় মাংস উৎপাদনশীল জাত।
ডিমের রং হালকা বাদামি।
হিলি জাতের মোরগের ওজন 2-3.5 কেজি এবং মুরগির ওজন 1.5-2 কেজি পর্যন্ত হয়।
বছরে প্রায় 80-100 টি ডিম দিয়ে থাকে।
ডিমের ওজন সাধারনত 42 গ্রাম হয়ে থাকে।
গলাছিলা জাতের মুরগির
দেশি মুরগির খুবই কমন একটি জাত। নাম শুনেই অনুমান করা যায় এই মুরগির গলায় লোম বা পালক থাকে না। এদের পালকের রং কালো ও লালচে কালো হয়ে থাকে। পালকহীন পা, হোলদে চামড়া ও একক ঝুটি বিশিষ্ট হয়ে থাকে। গলাছেলা মুরগির কানের লতি লাল ও সাদার সংমিশ্রণ যুক্ত হয়। পায়ের রং হলুদ ও সাদা বা কালো রঙেরও হয়ে থাকে। ডিমের রং হালকা বাদমী। গলাছেলা মুরগি খুব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। দেশি মুরগি পালন করার ক্ষেত্রে গলািছিলা মুরগি আপনার প্রথম পছন্দ হতে পারে।

গলাছিলা জাতের মুরগির
গলাছিলা জাতের মুরগির
গলাছিলা জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য-
এজাতের মুরগি বা মোরগের গলায় কোন পালক থাকে না।
চামড়ার রং হলুদ বা লাল রঙের হয়।
পালকের রং প্রধানত কালো ও সাদা কালোর মিশ্রণ বা লাল।
দেখতে অনেকটা ছোট আকারের টার্কি মোরগের মত মনে হয়।
ওয়াটিল বেশ বড় ও লাল রঙের।
গলাছেলা মুরগির পা মোটা ও শক্ত হয়। পায়ের রং হলুদ ও সাদা।
ডিমের খোসা হালকা বাদামি ও সাদা।
এই মুরগি ডিমে সঠিক ভাবে ‘তা’ দেয় এবং বাচ্চার ভালো যত্ন নেয়।
অন্যান্য দেশি মুরগির তুলনায় এরা আগে ডিমে আসে।
বছরে প্রায় 90-120 টি ডিম দেয় এবং ডিমের ওজন 40 গ্রাম।
সাধারণত গলাছিলা জাতের মোরগের ওজন 1.5-2.25 কেজি এবং মুরগির ওজন 1.2-1.5 কেজি।
চাটগাঁয়ে বা মালয় জাতের মুরগি
মালয় জাতের মুরগি মালেশিয়ান জাত হলেও প্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে এদের পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের চাটগাঁয়ে এই জাতের মুরগি প্রথম পালন শুরু হয় বলে এদের কে চাটগাঁয়ে মুরগি বলা হয়। এই মুরগি ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেও পাওযা যায। দেশি মুরগি পালন হিসাবে চাটগাঁয়ে বা মালয় জাতের মুরগি অসাধারণ।

চাটগাঁয়ে বা মালয় জাতের মুরগি
মালয় জাতের মুরগি
মালয় জাতের মুরগি বৈশিষ্ট্য –
চাটগাঁয়ে বা মালয় জাতের মুরগি চামড়া হলুদ ও ডিমের খোসা বাদামি বা হালকা বাদামি হয়।
মাথায় একটি ছোট মটর ঝুঁটি থাকে।
এদের গলা ও ঠোঁট লম্বা এবং মাথা ছোট হয়।
পালকের রং প্রধাণত লাল হয়।
পা লম্বা, মোটা ও ভারী। পাযের রং সাদা।
এরা দেখতে খুব লম্বা এবং মাংস উৎপাদনের জন্য ভালো জাত।
সাধারণত মোরগের ওজন 4-4.5 কেজি ও মুরগির ওজন 3-4 কেজি হযে থাকে।
আসিল জাতের মুরগি
আসিল জাতের মুরগি চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও ব্রাম্মণবাড়িয়ার কিছু কিছু এলাকায় পাওয়া যায়। মোরগ লড়ায়ে বিশেষ পারদর্শী এই জাত এদের দামও অনেক বেশি।আসিল মুরগি লড়ায়ে দক্ষ্য ও কৌশলি বলে এদের কে ফাইটিং কক বলা হয। আসিল মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।

আসিল জাতের মুরগি
আছিল মুরগি
আছিল মুরগির বৈশিষ্ট্য –
আসিল মুরগির শরীরের গঠন অত্যন্ত সুঠাম ও সরল।
এদের গলা ও পা লম্বা হয়।
আসিল মুরগি ডিম কম দেয় এবং ডিম আকারে তুলনামুলক ছোট হয় এবং ডিমের রং বাদামি বা হালকা বাদামি হয়।
এদের পালকের রং কালো অথবা লাল অথবা মিশ্র রঙের।
মাথায় একটি মটর ঝুটি থাকে
আসিল জাতের মোরগের গড় ওজন প্রায় 3-4 কেজি এবং মুরগির গড় ওজন প্রায় 2.5-3 কেজি পর্যন্ত হয়।
দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা
দেশি মুরগি পালন সহজ ও রোগ বালই তুলনামুলক কম হলেও একেবারে রোগ মুক্ত নয়। দেশি মুরগি পালন করতে মুরগিকে নিয়োমিত রোগ প্রতিষোধক টিকা দিতে হবে। দেশি মুরগি পালন খামারে রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা প্রদাণ করতে হবে। দেশি মুরগিতে রানীক্ষেত, গামরোরো, মাইকোপ্লাজমোসিস, কক্সিডিওসিস ইত্যাদি রোগ বেশি দেখা যায়।

বানিজ্যিক দেশি মুরগির খামার হলে চিকিৎকের পরামর্শে ঔষধ খাওয়াতে হবে। পারিবারিক বা ক্ষুদ্র খামারের জন্যও উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে দেশি মুরগি পালন করারে ক্ষেত্রে সে সুযোগ না থাকলে নিম্নোক্ত পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।

রানীক্ষেত– অক্সিটেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের পাওডার বা ক্যাপসুল ভাত কিম্বা পানির সাথে মিশিয়ে দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে।

গামবোরো– সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এমোক্সিসিলিন গ্রূপের ঔষধ খাওযাতে হবে। মৃত্যুর হার বেশি থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ যেমন ভিটামিন সি বা লেবুর রস পানিতে খাওয়াতে হবে। স্যালাইন বা আখের গুড় পানিতে খাওয়ালে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

মাইকোপ্লাজমোসিস বা ঠান্ডা– অক্সিটেট্রাসাইক্লিন/সিপ্রোফ্লক্সাসিন/টাইলোসিন টরটেট/ডক্সিসাইক্লিন ইত্যাদির যেকোন একটি খাওয়ানো যেতে পাড়ে।

দেশি মুরগির ভ্যাকসিন বা টিকা
অনেকেই মনে করে দেশি মুরগিকে কোন ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হয়। তবে বানিজ্যিক ভাবে দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে ভ্যাকসিন বা টিকা সবচেয়ে কার্যকার পন্থা। নিচে একটি আদর্শ দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল দেয়া হলো। দেশি মুরগি পালন ও ভ্যাকসিন।

মুরগির বয়স (দিন) রোগের নাম ভ্যাকসিনের ধরন ভ্যাকসিন প্রয়োগ পদ্ধতি
৩-৫ রানীক্সেত ও ব্রংকাইটিস লাইভ ভ্যাকসিন চোখে ফোঁট
১০-১২ গামবোরো লাইভ মুখে বা পোখে ফোঁটা
১৮-২২ গামবোরো লাইভ খাবার পানিতে
২৬-২৮ রানীক্ষেত লাইভ খাবার পানিতে
৩৮-৪০ ফাউল পক্স লাইভ ইনজেকশন
৬০-৬৫ রানীক্ষেত কিল্ড ইনজেকশন
৭৫-৮০ ফাউল কলেরা কিল্ড ইনজেকশন
দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল
দেশী মুরগির খামারের রোগের প্রদুর্ভাব বুঝে আরো কিছু ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন হয়তে পারে।

দেশি মুরগি পালন
দেশি জাতের মুরগি পালন পদ্ধতি
দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
শিক্ষিত বেকার যুকদের জন্য যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে যেখানে দেশি মুরগি পালন সহ হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ না থাকলে উপজেলা প্রাণিনম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এছাড়াও দেশি মুরগি পালন বই পড়েও সঠিক ধারনা পাওয়া যায়।

বাড়ির ছাদে ও খাচায় দেশি মুরগি পালন
বাড়ির ছাদে ও খাচায দেশি মুরগি পালন বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রীয় উদ্যোগ। আজকাল অনেকেই এই নিয়ে সফল হয়েছে আবার অনেকেই সফল হতে পারেনি। যারা সফল হতে পারেনি তাদের অধিকাংশই মুরগি পালনের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিতে পারেনি।

আবদ্ধ অবস্থায় বাড়ির ছাদে অথবা খাচায় মুরগি পালন করতে হলে মুরগির রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে। খাচায় বা আবদ্ধ ভাবে দেশি মুরগি পালন করলে মুরগির রোগ বালই কম হয়। খাঁচায় অধিক ঘনত্বে মুরগি থাকলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

দেশি মুরগি পালনে খাদ্য তালিকা
অনেক বছর ধরে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস-মুরগি পালন শুরু হয়েছে। বর্তমান সময়ে হাঁস মুরগির খামার বেশ লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। আবার হাঁস মুরগির খাদ্য বা ফিড তৈরী করা এবং এসকল খামারে সরবরাহ করা ও বেশ লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।

আমাদের দেশের পোল্ট্রি ফার্মগুলোর প্রধান অসুবিধা হচ্ছে মুরগির রোগবালাই ও সুষম খাদ্যের অভাব। ভুট্টা, গমের ভূষি, চালের কুড়া, খৈল ইত্যাদি মিশিয়ে হাঁস মুরগির দানাদার খাদ্য তৈরী করা হয়ে থাকে।

বাজার সম্ভাবনা
বাজারে বর্তমানে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই পোল্ট্রি ফিড তৈরী অবস্থায় সরবরাহ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে যাদের মান বিএসটিআই কতৃক পরিক্ষিত।

আবার কিছু আছে যাদের মান খুবই খারাপ। অনেক সময় দেখা যায় এসব খাদ্য উৎপাদনের সময় যেই মান থাকে ব্যবহারের সময় পর্যন্ত সেই মান আর বজায় থাকে না। এর ফলে এসব খাদ্য খেয়ে মুরগির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

অথচ একটু চেষ্টা করলে আমরা নিজেরাও মুরগি সহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরী করতে পারি। অনেক ছোট দেশি মুরগি পালন খামারী মুরগির খাদ্য তৈরি ঝামেলা বলে মনে করে।

ফিড তৈরির প্রশিক্ষণ
পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য আলাদা কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মুরগির পালনেরে উপর যে প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা আছে সেখান থেকে দেশি মুরগি পালন ও মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যাপারে ধারণা নেয়া যেতে পারে। ডিমপাড়া দেশি মুরগির খাদ্য তৈরীর একটি নমুনা দেওয়া হলো-

খাদ্যের উপকরণ ও পরিমানসমূহ
গম /ভুট্টা ভাঙা /চালের খুদ- ৪০ কেজি
চালের কুড়া ২৫ কেজি
সয়াবিন মিল / তিলের খৈল- ২৫ কেজি
ফিস মিল- ৭ কেজি
ঝিনুকের গুঁড়া / চুনা পাথর- ৩ কেজি
লবন ০.৫ কেজি।
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স- ১৫০ গ্রাম
দেশি মুরগির খাদ্য তৈরীর নিয়ম
উপাদানগুলো রোদে ভালোমতো শুকাতে হবে।
উপাদানগুলো একটু মোটা করে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
প্রত্যেকটি উপাদান আলাদা আলাদা করে মেপে নিতে হবে।
এরপর একটি বড় পাত্রে বা পরিষ্কার জায়গায় সবগুলো খাদ্য উপাদান একসাথে ঢালে কাঠের হাত দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে।

শেষ কথা
আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন বর্তমান সময়ের একটি লাভজনক ও জনপ্রীয় প্রযুক্তি। বাঁশ, কাঠ বা লোহার ঘর বানিয়ে বাড়ির ছাদে বা উঠনে খুব সহজেই দেশি মুরগি পালন করা যায়। এই পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করা হলে মুরগির রোগ বালায়ও কম হয় এবং উৎপাদনও বেশি হয়। দেশি মুরগির বাজার দর সবসময় বেশি থাকায় দেশি মুরগি পালন করে সহজে লাভবান হওয়া যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৭ জানুয়ারি ২০২২