দেশী মাগুর একটি অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ।রোগীর পথ্য হিসাবে এর জুড়ি মেলা ভার।ভাবতে ভাল লাগে সেই ১৯৯৮ সনে বানিজ্যিক ভাবে দেশে আমিই প্রথম এই দেশী মাগুরের প্রজনন ও চাষ শুরু করার মাধ্যমে বর্তমান অবধি এর সম্প্রসারণ ঘটেছে আশাতীত রকম।চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত আলাপ করছি না শুধু আলোচনা করতে চাই এর একক চাষ ভাল নাকি মিশ্র চাষ ভাল।একক চাষে দেশী মাগুর অনেক ঘনত্বে করা যায়। শতাংশ প্রতি ৫০০ বা তার অধিক ঘনত্বে দেশী মাগুর করা যায়। হাউস কালচারেও দেশী মাগুর অনেক ভাল উৎপাদন হয়ে থাকে।একক চাষে শতাংশ প্রতি ৫০০ ঘনত্বে ১০ মাসে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে যায়।কিন্তু সমস্যা হল এর রং।এর আগে আফ্রিকান মাগুরের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এর একটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত বিদ্যমান।
আফ্রিকান মাগুরের প্রজননের বিশাল উদ্ভাবনীই এখন দেশী মাগুর এর কাল হয়ে দাড়িয়েছে।কারণ আফ্রিকান মাগুরের রং কালো কুচকুচে।আর এজন্য দেশী মাগুরকে অনেকেই আফ্রিকান মাগুর মনে করে থাকে। একক চাষের দেশী মাগুর প্রায় আফ্রিকান মাগুর মাছের মতই কালো দেখায়।যে কারণে একক চাষের দেশী মাগুরের বাজার মূল্য একবারেই কম হয়ে থাকে।অন্য দিকে মিশ্র চাষের মাগুরের রং খাল,বিলের মাছের রং হয়ে থাকে।এ জন্য এর বাজার মুল্যও অনেক বেশী।তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মাগুর চাষ করা উচিৎ মিশ্র ভাবে।
কত ঘনত্বে হবে মিশ্র চাষ ? আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ঘনত্বে মিশ্র চাষ করেছি, দেখা গেছে শতাংশ প্রতি ২০/২৫ টি মাছ ছাড়লে ৯/১০ মাসে প্রত্যেকটি মাগুরের ওজন ২০০ গ্রামের মত হয়ে থাকে।রং ও হয়ে থাকে উজ্জল,বাজার মুল্যও পাওয়া যায় অনেক ভাল।
মাগুরের মিশ্র চাষই বাচাতে পারে একজন খামারীকেঃ –
এখন মৎস্য খামারীদের দুর্দিন।আর এই দুর্দিনের সাথী হিসাবে একজন খামারীকে বাচাতে পারে মাগুরের মিশ্র চাষ।আপনার যদি চাষেরএকটি প্রকল্প থাকে তাহলে অন্য মাছের সাথে মিশ্র হিসাবে( যে মাছই আপনি চাষ দেন না কেন) শতাংশ প্রতি ২৫ টি মাগুর ছেড়ে দিন।কোন বাড়তি খাবারের প্রয়োজন পড়বেন না।অন্য মাছের খাবারের তলানীতে উচ্ছিষ্ট খেয়েই( তলানীতে উৎপন্ন কাইরোনমিড,ছোট লাল কেচো) বছরান্তে সাইজ।
এক একর পুকুরের আয় – শতাংশ হিসাবে ২৫ টি ছেড়ে ২০ টি বাচার হার ধরলে একরে মাছ হয় ২০০০ টি।প্রতিটি ২০০ গ্রাম করে হলে উৎপাদন দাড়ায় ৪০০ কেজি যার বাজার মুল্য আসতে পারে দুই লাখ টাকার মত।খরচ হবে শুধু পোনার মুল্য আর নার্সিং খরচ।অন্য মাছের চাষে আসল টাকা উঠলেও শুধু মাগুর চাষেই লাভ ২ লাখ। হিসাবটা আদৌ বেশী নয়।
নার্সিং করতে হবে ভাল মত।১০০ টা কেজি আসার পরেই মাগুরকে চাষে দিতে হবে।এ বিষয়ে একটি পোষ্ট দিব ভবিষ্যত এ।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫সেপ্টেম্বর২০