অনেক দেশের স্থানীয় ফল এবং শস্য ‘সুপারফুড’ হিসেবে সমাদর পাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।বাংলাদেশ প্রতিবেশি রাষ্ট্রের চেয়ে কাঁঠাল বেশি রপ্তানি করে। তবে এই রপ্তানির সিংহভাগ হয় মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য দেশের স্থানীয় প্রবাসীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে। এই রপ্তানি বাজার মূলত এথনিক মার্কেট হিসেবেই পরিচিত। গত অর্থবছরে মূলত এই চাহিদা মেটাতেই বাংলাদেশ ১ হাজার ৩১২টন কাঁঠাল রপ্তানি করে। যা আগের বছরের তুলনায় খানিকটা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি করা হয় ১ হাজার ৩ দশমিক ৪৩ টন। তবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানির রেকর্ড হয়েছিলো ২০১৫-১৬ সালে। সে বছর মোট ১ হাজার ৫৩৫ টন রপ্তানি করা হয়। তবে দেশের কাঁঠাল রপ্তানি আরও বিকাশের পথে এবং বিশেষ করে এথনিক বাজার ছাড়িয়ে পশ্চিমা ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার পথে বেশ কিছু বাধা রয়েছে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতের কেরালায় যেমন উদ্যোক্তারা বিদেশিদের কাছে স্থানীয় কাঁঠালকে সুপারফুড হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছেন বাংলাদেশে তেমন উদ্যোক্তাদের বড় অভাব। বেসরকারিখাত থেকে এই ধরনের উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সুপারফুড বাজার ধরতে বেশ কিছু পদ্ধতিগত সহায়তা দেবে। প্রথমটি হলো কাঁচা কাঁঠাল রপ্তানি বিষয়ক। এখানে কাঁচা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সিদ্ধ করার মাধ্যমে প্যাকেজিং করে রপ্তানি করার উপায় বলে দেয়া হবে। আরেক উপায় হলো পাকা কাঁঠালের রোয়া বিশেষভাবে রপ্তানি। যা থাইল্যান্ড বেশ সফলভাবেই করছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ এবং পশ্চিমা বাজার উপযোগী মান নিয়ন্ত্রণের দিক-নির্দেশনাও দিয়ে সাহায্য করবে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কেরালা থেকে ফলটির সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন ভোক্তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই অনাদরে ছিলো কাাঁ কাাঁ মোট চামড়া আবৃত কাঠালের গুনাগুণ। কিন্তু, এই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে মাংসের পরিবর্তে ফল ও শস্যভিত্তিক সুপারফুডের আসক্তি। তাইতো কেরালা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে লস এঞ্জেলস এবং লন্ডনের বিখ্যাত নিরামিষ খাবার পরিবেশনকারী রেস্তোরাগুলোতে এখন আসছে ট্রাক ভর্তি কাঁঠালের চালান। পরিবেশ দূষণের জন্য ইতোমধ্যেই হুমকীতে বৈশ্বিক মাংস উৎপাদনকারী শিল্প। এর ফলে বন উজার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অন্যতম প্রধান দায়ী মিথেন গ্যাসের নিঃসরণের মতো কারণগুলোতো আছেই। সবমিলিয়েই পশ্চিমা ভোক্তা শ্রেণিদের একাংশ এখন মাংসের পরিবর্তে কাঁঠালের ভক্ত হয়ে উঠছেন।
মাত্র ৫ বছর আগে ভারতের ফল বাগান মালিকদের কাঁঠাল গাছ লাগানোতে উৎসাহ দেয়া শুরু করে। অথচ এর আগে কেরালায় কাঁঠাল গাছগুলো বাড়ির পেছনের বাগানে অনাদরেই পড়ে থাকতো। স্থানীয় কাঁঠাল বাগান মালিক জেমস জোসেফ বলেন, কাঁঠাল পেঁকে পচে যেতো। বের হতো তীব্র দুর্গন্ধ। কেউ খেতেও চাইতো না। শুধুমাত্র দামি কাঠের চাহিদার জন্যই এই গাছ লাগাতাম আমরা। এখন সেই পরিস্থিতি স¤পূর্ণ বিপরীত। পশ্চিমা ভোক্তারা সমাদর করে এখন কাঁঠালের নাম দিয়েছেন ভেজিটেবল মিট।
সরকারি নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে এই ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। যা রয়েছে কেরালায়। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ভিএস সুনীল কুমার জানান, আমাদের সরকারি ও বেসরকার পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগের কারণেই শূন্য থেকে শুরু হয়ে চলতি বছর ৮শ টনের বেশি রপ্তানি ছাড়িয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে। পশ্চিমা ভোক্তাদের নিরামিষাশী ডায়েটের ট্রেন্ডকে পুঁজি করেই বিকশিত হচ্ছে এই বাজার।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ