দ্রুত সময়ে ফল উৎপাদনে আনারসে হরমোন ব্যবহার

854

সম্ভাবনাময় ফল আনারসের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের উদ্যান বিজ্ঞানীরা হরমোন প্রয়োগে সারা বছর আনারস উৎপাদনের কৌশল সাফল্যজনকভাবে আবিষ্কার করছেন। এ পদ্ধতি অনুসরণে এ দেশের মানুষ সারা বছরই আনারসের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ বলা যায় আনারসও বারোমাসি ফলের গর্বিত স্থান দখল করতে পারবে।

আনারস উৎপাদনে প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে গাছে ফুল আসতে ১৫ থেকে ১৬ মাস এবং আনারস পাকতে ২১ থেকে ২২ মাস সময় লেগে যায়। এতে ফলের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা জমিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বিশ্বে আনারস উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ যেমন- মালয়েশিয়া, হাওয়াই, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভারত, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ বহুকাল আগে থেকেই হরমোন প্রয়োগ করে আনারসের উৎপাদন করা হচ্ছে। হরমোন প্রয়োগে আনারস উৎপাদনের সুবিধার কথা জেনে আনারস চাষি উৎসাহিত হবেন এবং জাতীয় সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন।

হরমোন প্রয়োগের কারণে কম সময়ে আনারস পাওয়া; এক সঙ্গে বা কাক্সিক্ষত সময়ে আনারস পাওয়া যায়; ইচ্ছে অনুযায়ী বছরের যে কোনো সময়ে অনায়াসে আনারস পাকানো যায়; অমৌসুমে আনারস বিক্রি করে দ্বিগুণ, তিনগুণ বহুগুণ দাম পাওয়া যায়; কম খরচে বেশি লাভ করা যায় হরমোন প্রয়োগে আনারস প্রতি খরচ মাত্র ২০ পয়সা থেকে ২৫ পয়সা আর আনারস প্রতি বাড়তি লাভ ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা; সারা বছর ফলানো যাবে বলে উৎপাদনের এবং সরবরাহের বছরব্যাপী নিশ্চয়তা পাওয়া যায় আর সে কারণে দেশে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে; পচনশীলতার কারণে পচে যায় না, বর্ষা মৌসুমে পরিবহন, স্তূপিকীকরণ সমস্যাজনিত অপচয় মোটেই হবে না; বাগানে অতিরিক্ত উৎপাদন সম্ভব হবে। কেননা, হরমোন প্রয়োগে ৮০ থেকে ৯০% গাছে ফল ধারণ করে হরমোন ব্যতিরেকে গড়ে ৫০ থেকে ৬০% গাছে ফল ধরে।

হরমোন গাছ থেকে উৎপাদিত একপ্রকার রাসায়নিক দ্রব্য। আনারসের ক্ষেত্রে সাধারণত ১. ইথ্রেল ২. ন্যাপথলিন এসিটিক এসিড, ফুল আনতে সাহায্য করে। ইথ্রেল ৫০০ পিপিএম দ্রবণ তৈরির জন্য প্রতি লিটার পরিষ্কার পানিতে ১.৩ মিলিলিটার তরল ইথ্রেল (৩৯% ইথাফন) মিশিয়ে নিতে হবে। হরমোন দ্রবণ প্রতিদিন ভোরবেলায় (সকাল ৬-৮টা) ৯ থেকে ১৩ মাস বয়সের (৩০ থেকে ৪০ পাতাবিশিষ্ট) প্রতি গাছে ৫০ মিলিলিটার হরমোন দ্রবণ গাছের ডগায় ঢেলে দিতে হবে। হিসাব করে দেখা গেছে ১ লিটার হরমোন দ্রবণ দিয়ে ২০টি গাছে প্রয়োগ করা যায়। বৃষ্টি বাদলার দিনে হরমোন প্রয়োগ করলে কার্যকারিতা থাকে না বা কম হয়।

প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন বৃষ্টি না হয় এ চিন্তা মাথায় রেখে দ্রবণ প্রয়োগ করতে হবে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিডিউল করে হরমোন প্রয়োগ করলে কাক্সিক্ষত সময়ে অর্থাৎ অমৌসুমে আনারস পাওয়া যায়। হরমোন মানুষের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। কিন্তু ব্যবহারকালীন সাবধানতা অবলম্বন বেশি জরুরি। ব্যবহারকালে শরীরে, কাপড়ে যেন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। লাগলে নষ্ট হয়ে যাবে। প্রতিকার হিসেবে তাৎক্ষণিক বেশি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দ্রবণ তৈরি এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পানিজনিত বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। একটু সাবধান হলে কোনো সমস্যা থাকে না।

আনারস উপাদেয় ফল। আমাদের দেশে বলতে গেলে খরচবিহীন বা কম খরচে আনারস উৎপাদন করা হয়। আমাদের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আনারসের এ হরমোন ব্যবস্থাপনা আনারসকে বর্তমানের চেয়েও অধিকতর দামি আলোকিত ভুবনে নিয়ে আসতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৬এপ্রিল২০