ধানের আগাছা দমন পদ্ধতি
ধানের আগাছা দমন
আগাছা ধানগাছের সাথে আলো, পানি ও খাদ্য উপাদানের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। আগাছা প্রতিকুল পরিবেশে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং ধানগাছের চেয়ে অধিক হারে বাড়তে পারে। সাধারণত আমন ও বোরো মৌসুমের চেয়ে আউশ মৌসুমে, বিশেষ করে বোনা আউশে আগাছার উপদ্রব বেশি হয়। আউশ মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাতের পর জমিতে দু’একটি চাষ দিয়ে পতিত অবস্থায় রেখে দিলে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। কিছুদিন পর পুনরায় চাষ ও মই দিয়ে ধানের বীজ বপন করলে আগাছার উপদ্রব অনেকাংশে কমে যায়।
রোপা ধানের জমিতে ৫-১০ সেন্টিমিটার পানি রখিলে জমিতে আগাছা কম জন্মায়। সাধারণত ধানগাছ রোপনের পর থেকে পাকা পর্যন্ত যতদিন মাঠে থাকে তার তিন ভাগের প্রথম এক ভাগ সময় আগাছামুক্ত রাখলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। আউশ ও আমন মৌসুমের জন্য ৩০-৪০ দিন এবং বোরো মৌসুমের জন্য ৪০-৫০ দিন জমি আগাছামুক্ত রাখা উচিত। হাত দিয়ে, নিড়ানি যন্ত্রের সাহায্যে, আগাছানাশক ব্যবহার করে এবং জৈবিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন করা যায়। হাত দিয়ে আগাছা দমন অপেক্ষাকৃত সহজ। রোপা ধানে কমপক্ষে দুবার আগাছা দমন করতে হয়। প্রথমবার ধান লাগানোর ১৫ দিন পর এবং পরের বার ৩০-৩৫ দিন পর।
জমিতে পানির পরিমাণ ১০-১৫ সেন্টিমিটার রাখতে পারলে দুবার হাত নিড়ানি দিলেই হবে। যদি আউশ বা আমন মৌসুমে জমি শুকিয়ে যায় বা বোরো মৌসুমে সেচ দিতে দেরি হয় তাহলে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তখন আরেকটি হাত নিড়ানির প্রয়োজন পড়ে। নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহারে দু’সারির মাঝের আগাছা নির্মুল হয়। কিন্তু দু’গুছির ফাঁকে যে ঘাস থাকে তা হাত দিয়ে তুলতে হবে। উঠানো আগাছা মাটির ভিতর পুঁতে দিলে তা পচে গিয়ে জৈব সারের কাজ করবে। ব্রি উইডার নামের নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে ঘন্টায় ১০ শতাংশ জমির আগাছা নির্মুল করা যায়।
আগাছানাশক ঔষধ ব্যবহার
এ পদ্ধতি অধিকতর কার্য়কর ও সাশ্রয়ী হওয়ায় আগাছানাশকের ব্যবহার ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তরল, দানাদার ও পাউডার এ তিন ধরনের আগাছানাশক বাজারে পাওয়া যায়। প্রি-ইমারজেন্স আগাছানাশক ধান লাগানোর ৩-৬ দিনের মধ্যে এবং পোস্ট-ইমারজেন্স আগাছানাশক আগাছার বৃদ্ধি ও তাপমাত্রাভেদে রোপন/বপনের ১০-২৫ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হয়|
জমিতে ১-৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা অবস্থায় প্রি-ইমারজেন্স আগাছানাশক প্রয়োগ করতে হয়। পোস্ট-ইমারজেন্স আগাছানাশক আগাছার বৃদ্ধি ১-২ পাতাবিশিষ্ট হলেই ব্যবহার করা যায়। আগাছানাশক প্রয়োগকৃত জমিতে ৩০ দিন পর আর একবার হালকা হাত নিড়ানির প্রয়োজন হতে পারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০জানুয়ারি২০২১