ধানের উৎপাদন বড়াতে ইরি ও ব্রি’র মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

349

পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ধানের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করতে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-র মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

ইরি’র মহাপরিচালক ড. ম্যাথেও মোরেল আজ এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি একথা বলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন আরো বাড়াতে ইরি এবং ব্রি’র মধ্যে তাদের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইরি এবং ব্রি’র মধ্যে বর্তমানে বিরাজমান সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক আকারে লবণাক্ত, শীত ও খরা এবং গভীর পানি সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনে আরো বেশি করে গবেষণা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাবার প্রেক্ষিতে দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নজরুল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের কৃষকরা খুবই স্মার্ট এবং অল্পসময়ে সবকিছু শিখতে পারে। তারা খুব সহজে প্রযুক্তি রপ্ত করতে পারে।

শেখ হাসিনা বিভিন্ন ধরনের শস্যের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে গম, ভূট্টা, মসুর ডাল এবং উরাঞ্চলে অন্যান্য রবি শস্যের চাষ হয়ে থাকে। এ সব ফসলের চাষ করতে বেশি পানির প্রয়োজন হয় না। তিনি দক্ষিণাঞ্চলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। তিনি পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভূপৃষ্টের পানির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এ লক্ষ্যেই দেশের নদী, খাল ও বিলসহ জলাশয়গুলো পুনঃখনন করা হচ্ছে।

বৈঠকে ইরি’র মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্রি’র সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণে ইরি আগ্রহী। তিনি সহযোগি কর্মসূচির অধীন ইরি অনুমোদিত ১৪ দফা কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে বলেন এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই হবে।

কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বাংলাদেশে আউশ ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করা, বিভিন্ন জাতের আমন ধান উদ্ভাবন করা, বোর ধানের চাষ বৃদ্ধি করা, গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয় পরিবেশের অনুকূল হাইব্রিড ধান উৎপাদন এবং পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর চাল উৎপাদন করা রয়েছে।

অন্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে হাওর এলাকার জন্য শীত সহিষ্ণু বোরো ধান উদ্ভাবন করা, উপকুল এলাকায় লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনে কাজ করা, চাষ ও বীজ সমস্যার সমাধান করা, উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করা, উত্তরাঞ্চলের ফসলের চাষ দক্ষিণাঞ্চলে করা এবং প্রযুক্তির প্রচার দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া।

ড. ম্যাথেও বলেন, ব্রি’র সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই কর্মপরিকল্পনার ওপর ইরি কাজ করতে আগ্রহী।
বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির, ইরি’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি ড. নাফীস মিয়া, ইরি’র বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিনিধি ড. হুমনাথ ভান্ডারি উপস্থিত ছিলেন।