ধানের ক্ষতিকর পোকা দমন করে যেসব প্রাণী

1210

images

জমিতে পরভোজী পোকামাকড়কে সহজেই দেখা যায়। কিন্তু অনেকে এদের অনিষ্টকারী পোকা বলে ভুল করেন। এ ধরনের পরভোজী- পোকামাকড়ের মধ্যে কয়েক ধরনের মাকড়সা, লেডি বিটল এবং ক্যারাবিড বিটল প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পোকা দমন বেশ কার্যকরী। এছাড়া পার্চিং করে পোকা দমন ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ধানক্ষেতে বহু ধরনের উপকারী পোকা, মাকড়সা ও জীবাণু বাস করে। এসব পোকামাকড় ও জীবাণু অনেক ক্ষেত্রে ধানের অনিষ্টকারী পোকা দমন করে রাখতে পারে।

এভাবে পোকা ও জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ৯৮-৯৯ শতাংশ অনিষ্টকারী পোকা ধ্বংস হয়। এরকম না হলে অনিষ্টকারী পোকার বিস্ফোরণ ঘটত। জমিতে পরভোজী পোকামাকড়কে সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকে এদের অনিষ্টকারী পোকা বলে ভুল করেন। এ ধরনের পরভোজী-পোকামাকড়ের মধ্যে কয়েক ধরনের মাকড়সা, লেডি বিটল এবং ক্যারাবিড বিটল ধানগাছে তাদের শিকার খুঁজে বেড়ায়, ধানগাছের পাতাফড়িং, গাছফড়িং বিভিন্ন ধরনের মথ, মাজরা পোকার কিড়া এবং বিভিন্ন ধরনের পাতাভূক কিড়া এসব শিকারের অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে পরজীবী পোকা তার জীবনধারণের জন্য সাধারণত একটা পোকা শিকার করে তা থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। পরজীবী স্ত্রী পোকারা তার পোষক পোকার ভেতরে বা তার উপরে একটা বা অনেক করে গাদায় ডিম পাড়ে। ওই ডিম থেকে পরজীবী পোকার বাচ্চারা ফোটে যখন পোষক পোকাকে খেতে থাকে তখন পোষক পোকা খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং পরে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।

ধানক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কীটনাশক ছাড়া জৈবিক উপায়ে পোকামাকড় দমন এবং প্রতিরোধে সুফল পাওয়ায় কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকছে। ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে পার্চিং বা ডাল-পালা পোতা কার্যক্রম ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। দিন দিন এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার কমে আসছে। এর সুফলও পাচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা তাদের আবাদী জমিতে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক এই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে। জমিতে পার্চিং করা বা ডাল-পালা, বাঁশের কঞ্চি পোতা পদ্ধতিটি খুবই সহজ এর কোনো খরচ নেই, পাখি ডালে বসে মাজরা পোকার মথ, পাতা মোড়ানো পোকা মথ ও ফড়িংজাতীয় পোকাগুলো সহজেই ধরে খেতে পারে।

এতে পোকা আর বংশ বিস্তার করতে পারে না। পার্চিং দুই ধরনের হয়। জীবন্ত ও মৃত। জীবন্ত পার্চিং হলো ধঞ্চে, ছন, পাট এবং মৃত পার্চিং হলো বিভিন্ন ধরনের মৃত ডাল-পালা দিয়ে পাখির জন্য আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা। ইতোমধ্যেই মাঠে সবুজের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পোকা-মাকড় থেকে ফসলকে রক্ষা করতে কৃষকদের রাসায়নিক বালাই-নাশকের পরিবর্তে ধানক্ষেতে পার্চিং করে বা ডাল-পালা পুতে পোকা দমন করা সম্ভব এবং পোকার বংশ বিস্তার রোধ করাও সম্ভব। পার্চিং করা ধান ক্ষেতের ডাল-পালায় পাখিরা বসে ধানের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে। আর এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে কৃষকদের কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছেন।

ধানক্ষেতে পার্চিং বা ডাল পোতা জৈবিক পোকা দমন এটি খুবই কার্যকরী পদ্ধতি, ধানক্ষেতে শক্র পোকা যেমন মাজরা, গান্ধি, চুঙ্গি পোকাসহ বাদামি গাছফড়িং নিধনে বিশেষ করে মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে এটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। একটি মাজরা পোকার মথ ২০০ থেকে আড়াইশ ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কিড়া বের হয়ে একটি করে ধানের কুশি কাটে। যা কৃষককে খুব ক্ষতি করে আর এই ক্ষতিকারক পোকার মথ পার্চিং করা ডালে বসে পাখি খেয়ে ফেলে। এটি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় কৃষকরা একটু চেষ্টা করে জমিতে ডাল-পালা পুতে দিলেই হলো। পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে ফসলের রোগবালাই দমন যেমন সহজভাবে করা যায় তেমনি অর্থও সাশ্রয় হয়। পাশাপাশি জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। কেননা কীটনাশক ব্যবহারে জমির উর্বরতা হ্রাসসহ মৎস্য প্রজননে মারাত্মক ক্ষতি করে। এ ছাড়া কীটনাশকের মূল্যও অনেক বেশি। তাই ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতির প্রতি কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।