ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা

71

মাঠজুড়ে কৃষকের ফলানো ধানের ছড়াছড়ি। রোপা আমন ধানের গন্ধে মাতোয়ারা কিষান-কিষানি। মাঠজুড়ে সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙের সাজ। এরই মধ্যে ঘাম-ঝরানো স্বপ্নের সোনার ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন কৃষক। ধান নিয়ে এক অন্যরকম আনন্দ উৎসবে মেতেছেন চাষিরা। কৃষি ?বিভাগ বলছে, বরেন্দ্র অঞ্চল-খ্যাত রাজশাহীতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন বাদ সাধতে পারেনি। প্রত্যাশিত ফলনের প্রত্যাশা নিয়ে উৎসবমুখরভাবেই শুরু হয়েছে ধান কাটা-মাড়াই। বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

চাষিরা বলছেন, কিষানিরা বাড়ির আঙিনায় ধান শুকাতে গোবর-মাটি দিয়ে প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকে ধান মাড়াইয়ের পর রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার রাত জেগে ধান সিদ্ধ করছেন। দিনে আবার সিদ্ধ ধান রোদে শুকাচ্ছেন। যেন দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না কিষান-কিষানিরা।

তারা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ের তদারকির কারণে চলতি রোপা-আমন মৌসুমে রাজশাহী জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। আমন ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কৃষকদের চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশে চারদিকে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। রোপা আমন ঘরে তুলতে গৃহস্থ বাড়ির উঠানে চলছে ব্যস্ততা। কেউবা নিচ্ছেন প্রস্তুতি।

এবার রোপা আমন চাষে তেমন বেগ পেতে হয়নি। মাঠে মাঠে সোনার ধান দেখে হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে। সকালে কাঁচি হাতে বের হয়ে ধান কাটা শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসেন কৃষক। কাটা ধান জমিতেই বিছিয়ে রাখছেন। দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন কৃষক। ধান শুকানোর পর ধান ভাঙার মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করছেন। মনের আনন্দে কিষানি সেই ধান এবার আমন ফলনের রেকর্ড ছাড়াবে বলে আশা করেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা।

গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক আশিকুর রহমান বলেন, আমার ক্ষেতের ধান খুবই ভালো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কাটব। প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। এখন পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতি বিঘায় ২২ মণের ওপরে ফলন হবে বলে আশা করছি।

পবা উপজেলার কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ধান ভালো ছিল। কিন্তু মধ্যে হঠাৎ বন্যায় ধান ডুবে ছিল। এ কারণে ধানের চেয়ে চিটা বেশি হয়েছে। ফলন কম হয়েছে। তবে ধানের দাম ভালো আছে। ক্ষতিটা দামে পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছি।

তানোর উপজেলার বাঁধাইড় গ্রামের কৃষক বারিউল ইসলাম বলেন, ধানে কীটনাশক বেশি ব্যবহার করার কারণে এবার উৎপাদন খরচ একটু বেশি হয়েছে। ধার-দেনা করে এবং বাজার থেকে বাকিতে কীটনাশক নিয়ে জমিতে প্রয়োগ করা হয়েছে। আর ধান বিক্রি করে দেনা শোধ করার কথা। বাজারে ধানের দাম ঠিক থাকলে দেনা পরিশোধ ও তাদের সংসার পরিচালনা করা সহজ হবে বলে তারা মনে করছেন। আর দাম ভালো পেলে তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে এবং তারা লাভের আশাও করছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ১৭৭ হেক্টর, যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছিল ৮০ হাজার ৮৩২ হেক্টর। যেখানে উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৮৬ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। প্রতিবছরের মতো এবারও আবাদের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত রোপা আমন সাত থেকে ১০ শতাংশ টাকা হয়েছে। চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার রোপা আমন চাষ বেশি হয়েছে। হঠাৎ বন্যায় কিছু কৃষকের ফলন কম হতে পারে, তবে সে সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবারও উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি।