আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ থেকে: বর্তমানে দেশের ঐতিহাসিক জেলা নওগাঁ আমের দ্বিতীয় রাজ্য বলে পরিচিতি পেয়েছে। এখন নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে উৎপাদিত আমের সুনাম দেশজুড়ে। শুধু দেশেই নয়, লাল সবুজের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে নওগাঁর আম বিশেষ করে নওগাঁর মাটিতে জন্মানো নাকফজলী। এর পাশাপাশি রয়েছে নওগাঁয় উৎপাদিত ল্যাংড়া ও হিম সাগর আমের সুনাম।
নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা। এর মধ্যে সাপাহার উপজেলা সদরে রাস্তার দু’পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে স্থাপিত কয়েকশ আমের আড়ৎ এখন দেশের বরেন্দ্র ভূমিতে উৎপাদিত সুমিষ্ট রসালো ফল হিমসাগর ও ল্যাংড়া আমের দখলে।
মধু মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের এ সর্ববৃহৎ আমের মোকামে গুটি, গোপালভোগ, খিরশাপাতি, (হিমসাগর) ও ল্যাংড়া আম ব্যাপকহারে আমদানি হতে দেখা গেছে। স্থানীয়ভাবে সাপাহার উপজেলাসহ আশে পাশের সকল উপজেলায় আম বাগান তৈরি হওয়ার কারণে এখানে আমের বৃহৎ মোকাম গড়ে উঠেছে। দেশের রাজধানী ঢাকাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শত শত আম ব্যাবসায়ীরা এখানে এসে আমের আড়ৎ খুলে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম কেনাবেচা করছেন। বিশেষ করে সরকারিভাবে আমের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরে গাছ থেকে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে আড়তগুলোতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে অনুমোদিত বিষমুক্ত ও পরিপক্ক আম আমদানি করা হচ্ছে।
বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার রোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা থাকায় স্বাস্থ্যসম্মত ফরমালিনমুক্ত আম এই এলাকায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। সাপাহারে উৎপাদিত হিমসাগর ও লেংড়া আমের কারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এ উপজেলা ইতোমধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ এ আমের মোকামে প্রতিদিন যে পরিমাণ আম আমদানি ও কেনাবেচা হচ্ছে তাতে রুপালি ও নাকফজলি আম বাজারে আসলে মোকামের চিত্র অনেকটাই পাল্টে যাবে বলেও আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক শাহা জানিয়েছেন।
উপজেলার কৃষকরা এবারে ধানের মূল্য বিভ্রাটে কিছুটা হিমশিম খেলেও আমের বাজার ভালো থাকায় ধানের সে ক্ষতি কিছুটা হলেও আমের ওপর উঠে আসবে বলেও আম বাগান মালিকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলার সদরের বাগান মালিক শাহজাহান আলী, জামিল হোসেন, শিতল ডাঙ্গা গ্রামের কামরুল ইসলাম, কাশিতারার এনামুল হক, হাসান আলীসহ বেশ কয়েকজন বাগান মালিকের সাথে কথা হলে তারা জানান যে, ধান চাষ করে ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের আমবাগান থাকায় ধানের সে ক্ষতি আম থেকে উঠে আসছে। বর্তমানে আবহাওয়া আমচাষিদের অনুকুলে থাকায় আমের বাজার দর মোটামুটি ভালো আছে। এখন প্রতিমণ লেংড়া আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা, খিরশা, গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ১৬শ থেকে ২ হাজার টাকা । তবে আম্রপালী আম ব্যাপক উৎপাদন হওয়ায় এবার শেষ দিন পর্যন্ত দাম সহনীয় পর্যায় থাকবে বলেও আড়ৎদার ও বাগান মালিকরা জানান।
সাপাহার উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার উন্নত জাতের আম চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, প্রতি হেক্টর জমিতে ১৭ মে. টন আম উৎপাদন হয়। সাপাহার উপজেলায় এবারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার মে. টন আম উৎপাদন হবে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রতি বছর আমের মৌসুমে আম ব্যবসা ও বাজারজাতকরণে এলাকার হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বৃহত্তর এই আমের মোকাম ও উৎপাদিত আমের কারণে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
অপরদিকে সর্ব বৃহৎ এ আমের মোকামের আড়ৎদার, আম ব্যবসায়ী, আম চাষি ও বাগান মালিকদের সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদরে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলার সর্বত্র আমকেন্দ্রিক উৎসব ও আমেজ বিরাজ করছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন