নওগাঁর কোরবানির পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ

413

গরুরJ খাজনা

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ থেকে: ঈদুল আজহা উপলক্ষে নওগাঁর বিভিন্ন স্থানের পশুর হাটগুলো শেষ সময়ে জমে উঠতে শুরু করেছে। হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। এতে গরুর মালিকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ক্রেতারা বলছেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় গরুর দাম কম ও সহনীয়। তবে অধিকাংশ হাটেই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশু কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

গত এক সপ্তাহ ধরে নওগাঁর বেশ কয়েকটি হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি হাটেই প্রচুর গরু উঠছে। ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় গরু কেনাবেচাও হচ্ছে কম। হাটগুলোতে দেশীয় গরুর প্রাধান্যই বেশি এবং ভারতীয় গরুর সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কম দেখা গেছে।

জেলার সাপাহার উপজেলার দিঘীর হাটে কথা হয় উপজেলার পাহাড়ী গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশি জাতের দুটি বকনা বাছুর ও দুটি ষাঁড় অনেক যত্ন করে বড় করেছি। আশা করেছিলাম, গরুগুলো বিক্রি করে লাভের মুখ দেখব। কিন্তু বাজারে নেওয়ার পর ক্রেতারা দাম বলা দেখে হতাশ হচ্ছি। দাম প্রত্যাশায় চেয়ে ক্রেতারা কম বলছে। শেষ পর্যন্ত বাজার এই রকম থাকলে লোকসান গুনতে হবে।

মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী দেলোওয়ার হোসেন, জাহিদুল ইসলাম ও জিয়াউল হক বলেন, তারা মৌসুমি ব্যবসায়ী। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্থানীয় খামারি ও গৃহস্থদের কাছ থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করেন তারা। কিন্তু নানা জায়গা থেকে আসা গরুর ব্যাপারীরা এবার হাটে কম আসছেন। অল্প সংখ্যক ব্যাপারী যারা আসছেন, তাদের কাছেই গরু কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে তারা গরু প্রতি প্রত্যাশার চেয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনছেন।

নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র খামারী আনিছুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরে গরু ব্যবসায়ীরা পাল্লা দিয়ে গরু কিনে, এতে গরুর মালিকেরাও লাভবান হয়। এবার ব্যবসায়ীরা কম দেওয়ায় মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মহাদেবপুর উপজেলা মাতাজী হাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল জব্বার, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেক ক্রেতা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম মনে হচ্ছে। বাজেটের মধ্যেই গরু কিনতে পেরে তারা খুশি।

তারা অভিযোগ করে বলেন, গরু প্রতি ২শত ৫০ টাকা খাজনা নেওয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে ৪শ ৫০ টাকা করে খাজনা নেয়া হয়েছে। তাদের কাছে দেওয়া খাজনার রশিদে দেখা গেল, রশিদের টাকার পরিমান ঘরটি ফাঁকা রয়েছে।

শুধু ক্রেতাদের কাছ থেকে খাজনা নেওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। মাতাজী হাটে কথা হয় গরু বিক্রেতা মহাদেবপুরের বাবুল আখতার সঙ্গে।

তিনি বলেন, গরু বিক্রির জন্য ইজারাদারের লোকজন হাট-কমিটি ফান্ডের কথা বলে ১শত টাকা খাজনা নিয়েছে। টাকা নিলেও আমাকে রসিদ দেওয়া হয়নি। বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা নেয়, এই নিয়ম এবারই প্রথম দেখলাম।

ওই হাটের ইজারাদার স্বপন হালদার বলেন, পশুর হাটে কোনো অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে না। এই হাটের ডাক (ইজারা) অনেক বেশি। প্রশাসন টোল (খাজনা) আদায়ের যে নির্দেশনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী আদায় টোল আদায় করে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। এরপরেও টোল বেশি নেওয়া হচ্ছে না।

খাজনার রশিদে টাকার পরিমান ঘর ফাঁকা হচ্ছে কেন এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমার লোকেরা ভুলবশত দুই-একটি রশিদে এমনটি করতে পারে।

মহাদেবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন, পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় ঠেকাতে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটে অতিরক্ত টোল আদায়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী দিনেও প্রতিটি হাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, পশুর হাটগুলোতে যে কোনো প্রকার অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ইজারাদাররা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করলে তাদের ইজারা বাতিল করে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন