নওগাঁ জেলার বিভিন্ন বাজারে শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভ্যান, ইজিবাইক ও ভটভটিতে করে এসব সবজি সরাসরি জেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজারে আসছে। ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন এখানকার চাষিরা। ফলে এবার শীতের আগেই সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নওগাঁর কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরিপ-১ মৌসুমে নওগাঁয় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শীতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে রবি মৌসুম। এ মৌসুমে ইতোমধ্যে কৃষকরা শীতকালীন সবজি রোপণ ও বীজ বপনের কাজ শুরু করেছেন। রবি মৌসুমে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে মান্দা, বদলগাছী, ধামইরহাট ও নওগাঁ সদর উপজেলা সবজির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল, তিলকপুর, পাহাড়পুর, বদলগাছী উপজেলার বিলাসবাড়ী, কোলা ও আধাইপুর এলাকায় শীতের আগাম শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পালং শাক, লালশাক ইত্যাদি সবজিতে চারিদিক ভরে গেছে। দিনরাত সবজির পরিচর্যা করছেন চাষিরা। কেউ কেউ পোকামাকড় দমনে স্প্রে করছেন।
বক্তারপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক চাঁন মোহাম্মদ জানান, দেড় বিঘা জমিতে আগাম শিম চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সেপ্টম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তাঁর ক্ষেতে শিম উঠা শুরু হয়েছে। এখন প্রতিদিন শিম উঠছে তিন-চার মণ করে। ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণে পাইকারী শিম বিক্রি হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতি মাসে তাঁর ক্ষেত থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হওয়ার কথা।
সদর উপজেলার চাকলা গ্রামের কৃষক সামসুল হক, আনোয়ারুল ও আব্দুল জব্বার বলেন, টানা দুই বছর ধরে ধান চাষ করে কৃষকেরা দাম না পেয়ে কৃষকেরা শীতের সবজি চাষ করে দুটো পয়সার মুখ দেখছেন। বিশেষ করে এলাকায় শীতের আগাম সবজি চাষ করে এখানকার কৃষকেরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
নওগাঁর শহরের পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা গেছে শিম প্রতি কেজি ৯০ টাকা, পালংশাক ৭০ টাকা, লাল শাক ৬০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি প্রতি পিস ৩৫-৪০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা, বাঁধাকপি আকারভেদে প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়, মুলা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল পাইকারী বাজারের আড়তদার সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষকেরা মাঠ থেকে সবজি তুলে সাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক কিংবা ভটভটিতে করে নিয়ে এনে বাড়ির পাশের এ বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। তাঁরা প্রথমে আড়তে সবজি আনেন, তবে আড়তদাররাই চাষির সবজি বিক্রি করে দেন। বিনিময়ে আড়তদাররা চাষিদের কাছ থেকে পণ্য অনুযায়ী কিছু কমিশন নিয়ে থাকে। এ পাইকারি বাজার থেকে ট্রাকযোগে ঢাকা, রাজশাহীসহ বড় বড় বাজারে এ অঞ্চলের সবজি নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত আগাম সবজি চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। তবে কৃষকেরা এখন অনেক সচেতন। তাঁরা যেকোনো সমস্যায় স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের পরামর্শ নেন। এবার চলতি মৌসুমের শুরুতেও ছত্রাক ও পোকামাকড়েরর আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি ক্ষে তের তেমন ক্ষতি হয়নি।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ