নওগাঁয় বরেন্দ্র অঞ্চলে পাতকুয়া স্থাপন করে সেচ কার্যক্রম

417

2018-02-08_4_878684

নওগাঁ: জেলার সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা ও নিয়ামতপুর এ ৪টি উপজেলায় ঠা ঠা বরেন্দ্র অঞ্চলে পাতকুয়া স্থাপন করে মানুষের পানীয় জলের সরবরাহ ছাড়াও কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমিতে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বল্প সেচে যেসব ফসল উৎপাদন সম্ভব এ কার্যক্রমের আওতায় সেসব ফসল বিশেষ করে শাকসব্জি উৎপাদন কার্যক্রম নিশ্চিত করা হচ্ছে এ প্রকল্পে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাতকুয়া খনন ও সৌরশক্তি ব্যবহার করে স্বল্প সেচের এসব ফসল উৎপাদন করা হবে। কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একান্ত নিজস্ব এ ধারণা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল ও গোমস্তাপুর এবং নওগাঁ জেলার সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা ও নিয়ামতপুর এ চারটি উপজেলায় বাস্তবায়ন করছে। এসব অঞ্চলে ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর অত্যন্ত গভীর হওয়ার ফলে কোন গভীর নলকূপ বা অগভীর নলকুপ বসানো সম্ভব হয় না। ফলে বিশেষ করে খরা মৌসুমে এসব বরেন্দ্র অঞ্চলে পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ তাদের গৃহস্থালী কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকেন।

এ অবস্থা থকে উত্তরনের উপায় হিসেবে এসব অঞ্চলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাতকুয়া স্থাপনের মাধ্যমে পানীয় জলসহ স্বল্প সেচের ফসল উৎপাদন নিশ্চত করতে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ সাপাহার উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী তার নিজস্ব উদ্ভাবিত এ ধারণা বাস্তবায়ন করার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের আলোকেই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ এ দু’টি জেলায় প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।

নওগাঁ জেলার এ চারটি উপজেলায় মোট ১৪০টি এ ধরনের পাতকুয়া স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এরই মধ্যে ৩ শ্রেণীর ঠিকাদারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পাতকুয়া স্থাপনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে এবং যেগুলো থেকে মানুষ সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন। প্রতিটি পাতকুয়া স্থাপনের জন্য ১০ লাখ টাকা করে মোট ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

উক্ত সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম পাতকুয়া স্থাপনের প্রক্রিয়া বাখ্যা করে বলেছেন রিগ মেশিনের সাথে সংযুক্ত ড্রিলিং রডের নিম্ন প্রান্তে ৫০ থেকে ৫২ ইঞ্চি ডায়ার কাটার লাগানো হয়। যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে কাটারকে ঘুরিয়ে মাটি কাটা হয়। খননকৃত মাটিকে পানির সাথে মিশ্রিত করে রিভার্স সার্কুলেশন পদ্ধতিতে মাডপাম্পের সাহার্যে উত্তোলন করা হয়। এভাবে কাংখিত গভীরতা পর্যন্ত খনন করা হয়। খননকাজ শেষ হলে ওয়্যাররোপ এর সাহায্যে আরসিসি রিং পর্যায়ক্রমে নিচ থেকে উপরের দিকে স্থাপন করা হয়।

পাতকুয়া খননের পর সেখানে জমাকৃত পানি উত্তোলনের জন্য সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাম্পের সাহায্যে পানি হেডার ট্যাংকে উত্তোলন করা হয়। হেডার ট্যাংকে উত্তোলিত পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সেচ, খাবার পানি ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারনত একটি পাতকুয়ায় ৩৫০ মিটার পাইপ লাইন থাকে। এ পাইপ লাইনে মাঝে মাঝে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আউটলেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান হতে পাশের জমিতে সরাসরি এবং দূরের জমিতে ফিতা পইপের মাধ্যমে ফসলে সেচ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও খাবার পানি সরবরাহের জন্য কুয়ার পার্শ্বে একাধিক ট্যাপ স্থাপন করা আছে সেখান হতে স্থানীয় মানুষ খাবার ও গৃহস্থালী কাজে পানি ব্যবহার করে থাকেন।

এছাড়াও কূপের উপরে লোহার এ্যাঙ্গেল দিয়ে ৩২ ফুট ব্যাসার্ধের একটি ঢাকনা এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছ যাতে করে বৃষ্টির পানি ঢাকনার মুখ দিয়ে কূপের ভিতরে পড়তে পারে।

এ কূপের গভীরতা ৭০ ফুট এবং ব্যাসার্ধ ৪৪ ইঞ্চি। এতে ৯০০ ওয়ার্ট ক্ষমতা সম্পন্ন মোট ৬টি সোলার প্যানেল বসানো আছে। প্রতিদিন এখান থেকে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার লিটার পানি পাওয়া যাবে।

প্রতিটি পাতকুয়া থেকে পানি ব্যবহার করে ২৫ বিঘা করে জমিতে স্বল্প সেচ সম্পন্ন ফসল বিশেষ করে আলু, পটল, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, পেঁয়াজ, রসুন, শষা, বেগুন, শিম, কুমড়া, লাউ, ছোলা ইত্যাদি আবাদ করা সম্ভব। এর ফলে ঠা ঠা বরেন্দ্র অঞ্চল বলে খ্যাত এসব অঞ্চলে সাড়ে ৩ হাজারবিঘা অতিরিক্ত জমিতে শাকসব্জি উৎপাদন সম্ভব।
উক্ত সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানিয়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের পানীয় জলের সমস্যার কথা বিবেচনা করে এবং এ অঞ্চলের জমিতে ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাই করে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী নিজেই এ প্রক্রিয়ার উদ্ভাবনী ধারণা দেন। সেই ধারণা থেকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ নওগাঁ ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার বরেন্দ্র অধ্যুষিত এলাকায় এ পাতকুয়াগুলো বসানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সুফলও পেতে শুরু করেছেন এ এলাকার কৃষকসহ সাধারন মানুষ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন